জৈব বেডে শাকসবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন রাশেদা বেগম
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
‘দীর্ঘ দিনের কৃষি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমার পথ চলা। প্রকৃতি ও পাড়া প্রতিবেশীদের নিকট থেকে আমার এই কৃষি শিক্ষা। কৃষি কাজ করার মাধ্যমে আমি প্রতিনিয়ত শিখি। প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগাই। প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর ফলে চাষাবাদে উৎপাদন খরচ কম হয়। নিরাপদ খাদ্য পাই। ফসল উৎপাদন ও মাটির স্বাস্থ্য ভালো হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে কৃষক লাভবান হই। কৃষিভিত্তিক অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদে সফলতা পাওয়া যায়। এলাকার কৃষকগণ আমার এই পরিবেশবান্ধব চর্চা দেখে উদ্যোগ গ্রহণ অনুপ্রাণীত হয়েছেন।’

উপরোক্ত বক্তব্যটি হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আলগিরচর গ্রামের কৃষক রাশেদা বেগমের (৪৫)। তাঁর স্বামী জাকির হোসেন মিলে কৃষিকাজ করে জীবন ও জীবিকা করেন। তাঁরা স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে চাষাবাদ করেন। রাশেদা বেগম বলেন, ‘আমি বারসিক এর পরামর্শে গত বছর একটি জৈব বেড তৈরি করে শাকসবজি চাষ করি। এতে ভালো ফলন পাই। এবছর বড় আকারে জৈবসারের বেড তৈরির জন্য জমিতে পড়ে থাকা পরাংঙ্গি আউশ, হিজল দিঘা ধানের খড়, খেতের ঘাস, জমিতে চাষ করা শাক সবজির পাতা, বাড়ির কুটা কাটি, ছাই, গোবর, পলিমাটি ও পানি দিয়ে পঁচিয়ে জৈব সার তৈরি করি।’ এসব উপকরণ দিয়ে তৈরি বেডের উপকরণগুলো পঁচতে বা জৈব সার হতে তিন মাস সময় লাগবে। তিন মাস পর জৈবসার হয়ে গেলে উক্ত বেডে লালশাক, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, শসা, আদা, হলুদ চাষ করেন রাশেদা বেগম। এই বেডে সবজি চাষ করলে কোন রাসায়নিক সার ও বিষ লাগে না। উৎপাদন ভালো হয়। বাজারে এই সকল শাকসবজির চাহিদা বেশি।

রাশেদা বেগম জানান, আমি নিজে বাড়ি গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি পালন করি। গরুর গোবর ও বিষ্ঠা দিয়ে জৈব সার, ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরি করে সারাবছর লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, সিম, কচু, ধুন্দুল, লালশাক, আলু, পালংশাক, বেগুন, শসা, চালকুমড়া, বরবটি, ঝিঙ্গা, ধনিয়া, মরিচ, পিয়াজ, রসুন আদা, হলুদ চাষাবাদ করি। নিজে বীজ রেখে চাষাবাদ ও বীজ বিনিময় করি। বাড়িতে আম, কাঁঠাল, জাম, বেল, লেবু, কলা চাষ করে নিজেরা খাই ও বাজারে বিক্রয় করি। বর্ষায় বন্যা সমস্যা মোকাবেলায় বাড়ির উঁচু জায়গায় লতা জাতীয় শাকসবজি লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, দুন্দুল, ঝিঙ্গা, বরবটি চাষ করি। কৃষি কাজেই আমাদের পথ চলা ও উন্নতি হয়।’
রাশেদা বেগম জানান, তারা পদ্মা নদীর তীরের মানুষ। বন্যা ও বর্ষা মোকাবেলায় উচু ভিটায় শাকসবজি চাষ করেন। বাড়ির পালানের নিচু জমিতে বর্ষায় পানি থাকে। এসকল নিচু জমি চাষের জন্য জমির আইল উঁচু বা ডিপি করে লতা জাতীয় সবজি চাষ করেন। বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করায় তাদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয় বলে তিনি জানান।