জগদীশপুর গ্রামের নারীরা এখন নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করেন
রাজশাহী রিনা মাহালি
রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার জগদীশপুর গ্রাম একটি ছোট কিন্তু ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এখানে মোট ৩০টি পরিবার বসবাস করে। গ্রামটিতে মাহালি, কর্মকার, সাঁওতাল, হিন্দু ও মুসলিমসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সহাবস্থান রয়েছে। গ্রামের জনগণ অত্যন্ত আন্তরিক, পরস্পরের পাশে দাঁড়ায় এবং যে কোনো সমস্যার সমাধানে একে অপরকে সহযোগিতা করে। বিশেষত, গ্রামের নারীরা সবজি চাষে অত্যন্ত দক্ষ ও আগ্রহী।

২০২৩ সাল থেকে বারসিক এ গ্রামে কাজ শুরু করে এবং গ্রামবাসীর সহযোগিতায় ‘জগদীশপুর নতুন পাড়া সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন’ গঠন করা হয়। সংগঠনের মাধ্যমে বারসিক গ্রামে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করছে। আগে গ্রামের কৃষাণীরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করলেও নিরাপদ সবজি উৎপাদন কম ছিল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা কীটনাশক ব্যবহার করত। তবে বারসিকের পরামর্শে এখন গ্রামের কৃষাণীরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি খুব শক্ত এবং পানির ধারণ ক্ষমতা কম হওয়ায়, বারসিকের অভিযোজন পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষাণীরা বস্তায় সবজি চাষ, মিশ্র সবজি চাষ এবং বড় গাছের গোড়ায় লাল শাক চাষ শুরু করেছে। এতে সেচের পরিমাণ কম লাগছে, অথচ দুই গাছই উপকৃত হচ্ছে। বাড়ির আশেপাশের পতিত জমিতেও এখন বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হচ্ছে।
বারসিক গ্রামে কৃষি সংক্রান্ত প্রাকৃতিক উপায়ে জৈব বালাইনাশক তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যার ফলে কৃষাণীরা আরও সচেতন হয়েছে। বর্তমানে তারা জৈব কৃষি চর্চার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। আগে তারা কয়েক ধরনের সবজির বীজ সংরক্ষণ করলেও বৈচিত্র্যময় সবজি বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা কম ছিল। বারসিকের পরামর্শে এখন তারা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ ও বীজ সংরক্ষণ করছে, ফলে বীজ বিনিময়ের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রামের কৃষাণীরা কেঁচো সার তৈরির বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করেছে এবং চলতি বছরে প্রতিটি পরিবারে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করবে। কৃষাণী শান্তিনা হেমব্রোম বলেন, “বারসিকের পরামর্শে আমরা সংগঠনের সদস্যরা অনেক সচেতন হয়েছি। ভবিষ্যতে বারসিকের পরামর্শ ও সংগঠনের সদস্যদের উদ্যোগে আরও উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো।”
এই পরিবর্তনের মাধ্যমে জগদীশপুর গ্রাম এখন টেকসই কৃষি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।