খাসি জনগোষ্ঠীর পরিবেশবান্ধব জীবন-জীবিকা
::সিলভানুস লামিন
প্রেক্ষাপট: খাসি জনগোষ্ঠী
বিশ্বের প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী স্থায়িত্বশীল, কার্বন নিরপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে কার্বন-নেতিবাচক জীবনযাত্রা পরিচালনা করে; যার কারণে তাঁরা হাজার হাজার বছর টিকে আছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারছেন। বাংলাদেশে ৪৫টি আদিবাসীর মধ্যে খাসি অন্যতম। খাসিরা সিলেট বিভাগের অধীনে তিনটি জেলার টিলা ও পাহাড়ে পান চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মতে, খাসি জনগোষ্ঠী বৃহত্তর অস্ট্রিক মানবগোষ্ঠীর অংশবিশেষ, যা অস্ট্রিক প্রটো-অস্ট্রেলয়েড বা ভেড্ডী নামেও পরিচিত। সিলেটের আদি বাসিন্দা বা প্রথম আবাস স্থাপনকারী মানবগোষ্ঠী হলো অস্ট্রিক মানবগোষ্ঠী। পরবতীর্তে এ
অঞ্চলে মঙ্গলয়েড টিবোটো বর্মণ এবং আর্য সম্প্রদায়ের আগমন ঘটে। দৈহিক গঠন ও বৈশিষ্ট্যে মঙ্গলীয় ছাপ থাকলেও উৎপত্তি, ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে মঙ্গলীয় জনগোষ্ঠী হতে খাসিরা ভিন্ন। যেহেতু খাসিরা হচ্ছে বৃহত্তর অস্ট্রিক মানবগোষ্ঠীর অংশবিশেষ সেহেতু গবেষক বা বিজ্ঞানের এই ধারণা ও অনুমান সত্য হলে খাসিরা এই দেশের আদি বাসিন্দা; বহিরাগত নয়। সিলেট জেলার অর্ন্তগত জৈন্তাপুর উপজেলায় খাসি রাজাদের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়েছে; যা এ দেশে খাসিদের দীর্ঘদিনের বসবাসের বিষয়টিই স্মরণ করিয়ে দেয়। খাসিদের জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, জীবনপ্রণালী প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। প্রকৃতি ছাড়া তাঁদের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। একটি খাসি শিশু জন্মের পর থেকে প্রকৃতির সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কারণ এই প্রকৃতির কাছেই সে তার প্রয়োজনীয় সবকিছুই পেয়ে থাকে। চাষাবাদ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি, জ্বালানি, আসবাবপত্র, ঔষধ, খাবার-দাবার সবকিছুই তাঁরা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলায় আনুমানিক ২৫ হাজারের মতো খাসি জনসংখ্যা অনেক দিন থেকে বসবাস করে আসছেন। বংশপরম্পরায় তাঁরা পাহাড়ি এলাকায় পান, সুপারি, লেবুসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে আসছেন প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করে। বাংলাদেশের অন্যান্য আদিবাসীদের মতো খাসিরাও নানাভাবে নির্যাতিত, শোষিত ও হয়রানির শিকার। জীবনের প্রতিটি পদে মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট সমস্যা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করেই তাঁরা জীবন পথে এগিয়ে চলেন। একটি খাসি শিশু জন্মের পর থেকে নানা বঞ্চনা, শোষণ, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়। নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাওয়ার কৌশল তাঁকে শিখতে হয় সে সময় থেকেই। এই সংগ্রামময় জীবনে প্রকৃতি তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়। তাইতো পাহাড়ের বুকে সে আশ্রয় নিয়ে নতুন স্বপ্ন রচনা করতে প্রয়াসী হয়, পাহাড়-গাছপালা, লতাপাতা, পশুপাখি, ঝরণা, ছড়া থেকে শিখে নেয় তাঁর জীবন ও জীবিকাকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল। বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৯৯% খাসিই প্রকৃতিনির্ভর পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। খাসি গ্রামে গেলে যে দৃশ্যটা সর্বপ্রথমে চোখে পড়বে তা হলো সারি সারি গাছপালার গায়ে আপন মনে আকড়ে ধরে থাকা লতা জাতীয় পান এবং চারদিক ঘন ঝোপঝাড়। এছাড়া খাসিদের জীবনযাত্রা, জীবিকা অবলম্বন পদ্ধতি, প্রকৃতির সাথে নিবিড় যোগাযোগ, প্রকৃতি নির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিসহ আরও অনেক অনন্য দৃশ্য সহজেই চোখে পড়বে, যা যে কাউকে বিমোহিত করে তুলবে।
খাসিদের পরিবেশবান্ধব জীবন-জীবিকা
খাসিদের কৃষি হচ্ছে প্রকৃতিনির্ভর। এই কৃষি চর্চার ক্ষেত্রে খাসিরা তাঁদের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান বা লোকায়ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করেন। মূলত অর্থকরী ফসল চাষই খাসিদের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে অন্য অর্থকরী ফসলের মধ্যে পান অন্যতম। খাসিদের উৎপাদিত পান দেশে ছাড়া বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। পান চাষ প্রক্রিয়ায় খাসিরা কখনও রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন না। বরং তাঁদের লোকায়ত জ্ঞান ও চর্চার ওপর ভিত্তি করেই এই চাষ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে থাকেন। খাসিদের কৃষি কেবলমাত্র পানচাষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়ার পেছনে কতকগুলো কারণ রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থান, পানচাষে খাসিদের বংশপরম্পরায় জ্ঞান এবং অধিক লাভজনক হওয়ার কারণে তাঁদের কৃষিব্যবস্থা কেবলমাত্র পানচাষের ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। প্রকৃতিনির্ভর এই পানচাষ প্রক্রিয়ার কারণে খাসিদের পান জুমে অসংখ্য দেশী ও নাম না জানা গাছপালা, বিভিন্ন পশু-পাখি, হরেক রকমের লতা জাতীয় উদ্ভিদ ইত্যাদি দেখা যায়। খাসিরা জানান, সন্ধ্যা হওয়ার পর বন মোরগের ডাক শোনা যায়। এছাড়া খাসিদের জুম এলাকায় যাওয়ার সময় অসংখ্য প্রজাতির পাখির কলকাকলি শোনা যায় এখনও। বেঁচে থাকার তাগিদেই খাসিরা প্রকৃতিঘনিষ্ঠ এই কৃষিব্যবস্থা পরিচালনা করেছেন। তাই একজন খাসি মানুষের জন্মের পর থেকেই প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে তার হাতে খড়ি হয়। কারণ জন্মের পর সে যে কৃষিব্যবস্থার সাথে পরিচিত হয় সেই কৃষিব্যবস্থাই তাকে শিখিয়ে দেয় কীভাবে প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করে ফসল উৎপাদন করা যায়; জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন হিসেবে প্রকৃতির সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহার করতে হয়।
অনাবাদী ও পরিত্যক্ত পাহাড়গুলোতে গাছ রোপণ ও লালন-পালনের মাধ্যমে খাসিদের পান চাষ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাঁরা এসব পাহাড়-টিলা আবাদযোগ্য করে তোলেন। নিরালা পুঞ্জির খাসিরা প্রায় ২০ বছর যাবৎ এ গ্রামে পানের পাশাপাশি সুপারি, লেবু আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পুঞ্জিবাসীরা জানান, প্রথমে যখন তাঁরা এই গ্রামে আসেন তখন চারপাশ কেবল ঝোপঝাড় ছিলো। কদাচিৎ দু’একটি গাছ চোখে পড়তো। তাঁরা সে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে, গাছ রোপণ করে সেখানে পান চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এই গ্রামের খাসিদের পানজুমে আনুমানিক কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বনায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক বনায়নের এই দায়িত্বটি খাসিদের ওপর ছেড়ে দিলে তাঁরা সহজে সেটা বাস্তবায়ন করতে পারবে। এতে অর্থের খরচও সাশ্রয় হবে; যেহেতু খাসিদের জীবন-জীবিকার তাগিদেই গাছ রোপণ ও পরিচর্যা করেন। অবশ্য এক্ষেত্রে কেবল দরকার শুধুমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও জমির মালিকানা নিশ্চিতকরণ। তবে দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অন্যান্য কৃষিব্যবস্থায় ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও খাসিদের পরিবেশবান্ধব কৃষিচর্চায় সরকারি ও বেসরকারি কোনও পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা নেই। প্রকৃতি নির্ভর পান চাষে কোনসময় খরা হলে খাসিদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। অথচ অর্থকরী ফসল পান চাষের ক্ষেত্রে সেচব্যবস্থাসহ অন্যান্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আর্থিকভাবে খাসিরা এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকার যেমন লাভবান হবে তেমনি পরিবেশ রক্ষা ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণও নিশ্চিত হতো।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাসিদের অভিযোজন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপন্ন হচ্ছে কৃষি। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বাংলাদেশের সর্বত্র এবং সব মৌসুমে ফসলের ফলন কমছে। আর্দ্র ও অধিকতর গরম আবহাওয়ার জন্য ফসলের ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে স্বল্প বৃষ্টিপাত বা বৃষ্টিহীনতায় দেশের অনেক জয়গায়
মরুকরণ প্রক্রিয়া দ্রুততর হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই প্রকৃতিনির্ভর খাসিদের কৃষিও আজ বিপন্ন। পান চাষের জন্য বৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু বৃষ্টি পানির প্রাপ্যতা কম হওয়ার কারণে বিগত পাঁচ বছরে খাসিদের পান চাষ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টি পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়ার কারণে জৈব সার তৈরিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানের উট্রাম রোগ ছাড়া গুড়া পচা রোগ, কলেরা, রাঙা রোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন খরা, শিলাবৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহ, ঝড় খাসিদের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে। সামগ্রিকভাবে এই পরিবর্তনের কারণে খাসিদের পান উৎপাদন বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় কমে গেছে। নিরালার খাসিরা জানান যে, পান চাষ প্রক্রিয়ায় নানান পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। বিগত ৫ বছর ধরে এই গ্রামসহ অন্যান্য খাসিদের জীবন-জীবিকায় হঠাৎ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়; প্রকৃতিনির্ভর পানচাষে আমূল এক পরিবর্তন দেখা দেয়। জলবায়ুর পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে অতীতের চেয়ে খাসিদের পান উৎপাদন কমছে, কমছে মাটির উর্বরাশক্তি, বাড়ছে রোগবালাই। ফলে অতীতে যেভাবে ঋতুভেদে পান চাষ প্রক্রিয়া তাঁরা অনুশীলন করতেন সেটাতে ব্যাঘাত ঘটেছে। স্বল্প ও বৃষ্টিহীনতার কারণে খাসিদের পানচাষের পঞ্জিকা পরিবর্তন হচ্ছে। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে ভারত লামিন বলেন, বিগত ৪/৫ বছর থেকেই শীতকালে খুব শীত আর গ্রীষ্মকালে খুব গরম পরে। এতে করে আমাদের মতো প্রকৃতি নির্ভর চাষীরা দু’দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হই। একদিকে বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় জুমে পান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে নিত্য নতুন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। পানের ‘উট্রাম’ রোগের পাশপাশি গোড়া পচা রোগও দেখা দিয়েছে। তাছাড়া পানে মড়ক এবং পানের আকার আরও ছোট হচ্ছে। পানের আকার ছোট হলে ব্যবসায়ীরা সেই পান কিনতে চায় না।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় খাসিদের কোনও প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকলেও এই পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন করার জন্য তাঁদের লোকায়ত জ্ঞান প্রয়োগ করে আসছেন। পানের চারা রোপণের সময় জুন-জুলাই হলেও বৃষ্টি যদি কম থাকে তাহলে তাঁরা আগস্ট মাসের দিকে রোপণ করেন। অতীতে জুমের গাছপালার ডালপালা বেশি করে কাটলেও বর্তমানে হালকা করে কাটেন, যাতে প্রখর সূর্যতাপে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে না যায়। পানজুমের জমিতে বছরে দু’তিনবার আগাছা পরিষ্কার করলেও বর্তমানে অনেকে দু’একবার করেন। কারণ তাঁরা মনে করেন জুমে কিছু ঘাস থাকলে সুর্যের প্রখরতা প্রশমনে ঘাসগুলো ভূমিকা রাখতে পারে। রাতের বেলায় পড়া শিশির ঘাসে সংরক্ষিত হয়ে মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করে। এছাড়া পান গাছের গুড়িতে জৈব সার প্রয়োগ করে গাছের লতাপতা দিয়ে ঢেকে রাখেন, যাতে সেখানে কুয়াশার পানি সংরক্ষিত হয়ে পানের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে পারে। অতীতে শুধুমাত্র পান চাষের ওপর নির্ভরশীলতা থাকলেও বর্তমানে পানের পাশাপাশি সুপারি, লেবু, শাকসবজি আবাদ করে ফসল বৈচিত্র্যতা এনেছেন অনেকে। দুর্যোগে একটি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য ফসল থেকে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে খাসিরা প্রথম থেকেই গাছপালা রোপণ, পরিচর্যা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছেন; যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অন্যতম প্রশমন পদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা যায়। পানজুমে অসংখ্য গাছপালা, বিভিন্ন প্রজাতির লতা, গুল্ম পরিচর্যা করে খাসিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেন। এছাড়া পানজুমে অসংখ্য প্রজাতির দেশী গাছপালা ও উদ্ভিদ থাকায় নানান প্রজাতির পশু-পাখি, সরীসৃপ, অণুজীব সেখানে বসতি স্থাপন করে।
উপসংহার
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চনা, খাসিদের কৃষিব্যবস্থায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, জমি হারানো, জমির মালিকানা লাভে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং এর সাথে অশিক্ষা এবং অসচেনতার কারণে নিরলা পুঞ্জিসহ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও বড়লেখা উপজেলায় বাসবাসকারী খাসিদের জীবন-জীবিকা আজ বিপন্ন। কিন্তু এই বিপন্নতার মাঝেও তাঁরা এখনও নিভৃতে ও নিরন্তরভাবে বন সংরক্ষণ করে আসছেন; কারণ বন জঙ্গল, পাহাড়-টিলা, গাছপালার সাথে জড়িত তাঁদের জীবিকা। জীবনে বেঁচে থাকার তাগিদে খাসি জনগোষ্ঠী প্রকৃতির সাথে এক অচ্ছেদ্য সেতুবন্ধন রচনা করে আসছেন। তাই যতবার বন উজাড়, পরিবেশ বিপন্ন ও প্রাণবৈচিত্র হরণপ্রক্রিয়া সংঘটিত হবে ততবার এই জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ভিত্তিকে ঝুঁকিযুক্ত ও বিপন্ন করে তুলবে। কারণ উপরোক্ত বর্ণনা থেকে জানা যায়, আদিবাসীরা সত্যিকারের বন সংরক্ষক। বন ধ্বংস ও উজাড় মানে জনগোষ্ঠীর জীবিকার পথকে বন্ধ করার শামিল।
খাসিরা তো তাঁদের জীবন-জীবিকা দিয়েই প্রাকৃতিকভাবে বনায়ন করে আসছেন। শুধু তাই নয় তাঁদের হস্তক্ষেপে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক বনায়নকে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থপনায় খাসিরা অনেকবার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেণ। খাসিদের কৃষি আবাদ কার্বননিরপেক্ষ। পরিবেশবান্ধব উপায়ে তাঁরা চাষাবাদ করে আসছেন। কৃষি অনুশীলনে বাইরের কোন উপকরণ ব্যবহার না করায় খাসিদের আবাসস্থলে কীটনাশক, রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের সংস্পর্শ নেই বিধায় সেখানকার মাটি, পানি ও বায়ু বিশুদ্ধ।