প্রাণবৈচিত্র্যের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করি

সিলভানুস লামিন

আজ ২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস। প্রকৃতি নানান ধরনের প্রাণ রয়েছে। এ বৈচিত্র্যময় প্রাণের মধ্যে প্রতিনিয়ত মিথস্ক্রিয়া হয়; আদান প্রদান হয় এবং এ বৈচিত্র্যময় প্রাণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্কও বিদ্যমান রয়েছে। প্রকৃতির এই প্রাণসমূহের মধ্যে যতবেশি আদান প্রদান ও মিথস্ক্রিয়া হয় ততবেশি লাভবান হয় মানবজাতি। কারণ আমরা পানি, খাদ্য, ওষুধ, কাপড়, জ্বালানি, আশ্রয়সহ নানানভাবে স্বাস্থ্যকর এবং প্রাণবন্ত বাস্তুতন্ত্রের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। তাই তো বিশ্ব সম্প্রদায় নানানভাবে এই প্রাণসমূহ বা প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করার দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্ক গ্রহণের মাধ্যমে। স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে বলা হয়েছে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রকৃতির ক্ষতি বন্ধ করার দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বছরের (২০২৩) আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্যের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে চুক্তি থেকে কাজ:  জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনুন।’ স্লোগানটি এই ধারণাটিকে প্রচার করে যে, এখন যেহেতু আমাদের একটি বৈশ্বিক স্তরে একটি কর্মপরিকল্পনা সম্মত হয়েছে, আমাদের অবশ্যই ২০৩০ সালের মধ্যে চুক্তিতে যে সমস্ত পদক্ষেপের কথা চিন্তা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষা করার জন্য যে সব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা রয়েছে সেটা যাতে শুধুমাত্র কাগজপত্রে না থাকে বরং সেগুলো যাতে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয় সে বিষয়টির এই প্রতিপাদ্য গুরুত্বারোপ করেছে।

প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আমরা প্রায়শই উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীবের বিস্তৃত বৈচিত্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝে থাকি। কিন্তু প্রাণবৈচিত্র্য বলতে আসলে প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে জিনগত পার্থক্যকেও বোঝায়। যেমন: বিভিন্ন ধরণের শস্য এবং পশুসম্পদ-এর বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে এবং বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্নতা (হ্রদ, বন, মরুভূমি, কৃষি ভূমি) যেগুলো তাদের সদস্যদের (মানুষ, গাছপালা, প্রাণী) মধ্যে একাধিক ধরণের মিথস্ক্রিয়া করে।

প্রকৃতপক্ষে প্রাণবৈচিত্র্যের সম্পদ হল সেই স্তম্ভ যার উপর আমরা সভ্যতা গড়ে তুলি। বিশ্বের প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষকে প্রাণীজ প্রোটিন প্রদান করে মাছ, যা 20 শতাংশ! অন্যদিকে মানুষের খাদ্যের ৮০ শতাংশেরও বেশি উদ্ভিদ থেকে সরবরাহ করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঐতিহ্যগত উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধের উপর নির্ভর করে।

কিন্তু প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি আমাদের স্বাস্থ্যসহ সকলকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতির ফলে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত রোগগুলো প্রসারিত হতে পারে! অন্যদিকে, আমরা যদি প্রাণবৈচিত্র্যকে অক্ষত ও সুরক্ষিত রাখি, তবে বিশ্বের বিভিন্ন মহামারীর সাথে মোকাবিলা করতে আমাদের সাহায্য করবে। এটি করোনভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দুর্দান্ত উপকরণ সরবরাহ করতে পারে।

যদিও একটি ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতি রয়েছে যে, প্রাণবৈচিত্র্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অসাধারণ মূল্যের একটি বৈশ্বিক সম্পদ কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে দিনকে দিন প্রকৃতিতে প্রাণের সমাহার ও অস্তিত্ব এবং প্রজাতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কোন কোন প্রাণ বিলুপ্তও হয়েছে। তাই, প্রাণবৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ ও সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও সচেতনতা। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণসমূহের সমস্যা সমাধানের জন্য তাই আসুন আমাদের সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকেই প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সুরক্ষার উদ্যাগ নিই।

happy wheels 2

Comments