বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনগোষ্ঠীর দাবি
বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি
বরেন্দ্র অঞ্চলে দিনে দিনে জীব বৈচিত্র্যসহ স্থানীয় প্রাকৃতিক জলাধার, বন্যপ্রাণী, পাখি ও স্থানীয় প্রাকৃতিক খাদ্য বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে। বৈচিত্র্যময় খাদ্য কমে যাবার ফলে এই অঞ্চলের মানুষসহ সকল প্রাণের নিরাপদ খাদ্য ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। নিয়ম বর্হিভূত রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে স্থানীয় অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য কমে গেছে। একই সাথে প্রাকৃতিক জলাধারগুলো দখল দূষণসহ প্রাকৃতিক বিলের মধ্যে পুকুর খনন এবং নদী নালাগুলো ভরাট হবার কারণে জলজ উদ্ভিদসহ দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য কমে গেছে। আজ আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে বক্তরা উক্ত দিকগুলো তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস ২০১৯ উপলক্ষে উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র ও বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন সমন্বয় পরিষদ যৌথভাবে দুদিন ব্যাপী বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনগোষ্ঠীর দাবি ও সচেতনতামূলক প্রচারণার আয়োজন করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ‘বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণবৈচিত্র্য, সকল প্রাণের নিরাপদ খাদ্য ও সুস্বাস্থ্য রক্ষায় রাসায়নিক কীটনাশকের নিয়ম বর্হিভুত ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রকৃতি বিধ্বংসী অপরিকল্পিত উন্নয়ন বন্ধের’ দাবিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন। অন্যদিকে তানোর উপজেলার মন্ডুমালা পৌরসভার থানতলা গ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম বাজারে রাসায়নিক কীটনাশক ও প্রকৃতি বিধ্বংসী অপরিকল্পিত উন্নয়নের হাত থেকে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করেন। তারা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বিপণন এবং স্থানীয় দেশীয় জাতের পুষ্টিকর জাতগুলো সুরক্ষার দাবি জানান।
মানববন্ধন এবং স্মারকলিপিতে তাঁরা বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাকৃতিক জলাধার খননসহ ও দখল দূষণ বন্ধে আইনের কার্যকর প্রয়োগ, এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য উঁচু-নীচু মাঠ, টিলা খনন বন্ধসহ নিয়ম বর্হিভুত রাসায়নিক ও কীটনাশকের ব্যবহার ও বিপণন বন্ধের আইন তৈরি ও যথাযথ প্রয়োগসহ পুরাতন এবং এলাকা উপযোগী জলবায়ু সহনশীল শস্য ফসলের জাত সুরক্ষায় কৃষকদের প্রণোদোনা ও আর্থিক বরাদ্দের ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন।
তানোর উপজেলায় মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা, বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্রর সভাপতি জাওয়াদ আহমেদ রাফি, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা অমৃত কুমার সরকার, আদিবাসী নারী নেত্রী মালতি কিস্কু, পানি মার্ডী, রিতা কিস্কু সহ বরেন্দ্র অঞ্চলের নানা পেশার প্রায় ৬০ জন নারী পুরুষ।
আদিবাসী নারী নেত্রী মালতি কিস্কু বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় (Local) খবারের উৎসগুলো দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। একই সাথে বন পরিবেশ ধ্বংস করার কারণে আমাদের ঐত্যবাহী আদিবাসী খাদ্য (Indigenous food) এখন বিলুপ্ত প্রায়।” তিনি আদিবাসী শিশু ও নারীর সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তায় এগুলো সুরক্ষার দাবি জানান।
অন্যদিকে, গোদগাড়ি উপজেলা গোগ্রাম বাজারে বরেন্দ্র অঞ্চলের খাদ্য বৈচিত্র্য সুরক্ষার দাবি জানান। এতে অংশগ্রহণ করেন গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার্যমান মজিবুর রহমান, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত আদিবাসী নেতা সুধীর চন্দ্র ওঁরাও, বারসিকের কর্মসূচি কর্মকর্তা জাহিদ আলীসহ স্থানীয় শস্যফসল উৎপাদক, ভোক্তা এবং নানা পেশার জনগোষ্ঠী।
গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ার্যমান মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, একই সাথে আমাদের খাদ্য বৈচিত্র্যগুলো সুরক্ষায় সকল মহলের উদ্যেগের দাবি জানাই।’
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের সাধারণ সভার দ্বিতীয় কমিটিতে প্রথম উত্থাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসের’কথা। প্রতিবছরের ২২ মে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হয়। জাতিসংঘ কর্তৃক এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারিত হয়েছে ‘Our Biodiversity, Our Food, Our Health” যার বাংলা করা যেতে পারে পারে “খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য”।