পরিবারের নিরাপদ খাদ্যের যোগান দিতে চান আকলিমা পারভীন

নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রানী সিংহ

পুরো পৃথিবী এখন  অনাকাক্ষিত জলবায়ু সংকটে। মানুষের জীবনযাপনের অস্বাভাবিকতা,অর্থনৈতিক চাকার অসমগামীতায় অসহায় হয়ে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রকৃতিকে আকড়ে ধরে রাখা জনগোষ্ঠী। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ শুধুমাত্র টিকে আছে কৃষি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে। যার একমাত্র উৎস মাটি,পানি, বাতাস। মানুষকে বেঁচে থাকার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর। ঐতিহাসিকভাবে এই কৃষির সূচনা হয়েছিল নারীর হাত ধরেই। এখনো টিকে আছে নারীর সাথে কৃষির সম্পৃক্ততায়। প্রতিনিয়ত কৃষি সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়ে আসছে আমাদের গ্রামীণ নারীরা। তাদের নিত্যদিনের কাজ, নিজস্ব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, লোকায়তচর্চা কৃষিকে করছে সমৃদ্ধ।

ঐতিহাসিকভাবে আমাদের গ্রামীণ নারীরা কৃষি ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলছেন। মানুষের বেচেঁ থাকার জন্য যে ছয়টি মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল খাদ্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে খাদ্য তো পাওয়া যায় কিন্তু সেটা কতটুকু নিরাপদ তা আমাদের পরিবারের ঔষধ খরচের পরিমাণ থেকেই বুঝা যায়। এই নিরাপদ খাদ্যের বেশির ভাগ চাহিদা পূরণ করে আমাদের গ্রামীণ সমাজের কৃষাণ ও কৃষাণীরা। এই চাহিদা পূরণের ভেতর দিয়ে কৃষি হয়ে উঠেছে কৃষি সংস্কৃতি। শুধুমাত্র ধান দিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারিনা। এরপর প্রয়োজন হয় সবজির, যা গ্রামীণ নারীর হাত ধরেই টিকে আছে তাদের জ্ঞান এবং চর্চার মধ্য দিয়ে। খাদ্যের উৎপাদন যেমন বীজ রোপণ, বপন, পরিচর্যা ,রোগ দমন, উত্তোলন, বীজ সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিটি কাজেই থাকে নারীর সম্পর্ক। এগুলো করে থাকেন নিজের আশপাশে থাকা গাছগাছালি ও  নিজস্ব উপকরণ দিয়ে।

বারসিক তাদের এই কাজকে, তাদের জ্ঞানকে সৃষ্টি লগ্ন থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে এবং সম্মান করে।  বিশ্বাস করে, যে কোন সংকট মোকাবেলায় নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। তারই প্রমাণ রেখে চলেছে নেত্রকোনা অঞ্চলের নারী আকলিমা পারভীন (৪২)। ২ সন্তানের জননী তিনি। গ্রাম-কৃষ্ণপুর, আটপাড়া নেত্রকোনা। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। বাবা ও মায়ের কৃষিকাজের প্রতি ভালোবাসা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ছোটবেলা থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি সহায়তা করতেন। আস্তে আস্তে নিজের ভেতর লালন করে গাছের প্রতি ভালোবাসা। তার প্রতিফলন ঘটান নিজের পরিবারে। শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে নিজে ছোট ছাদবাগান গড়ে তুলেন। তাছাড়া নিজের পুকুরের পাড়ে নানান ধরনের সবজি চাষ করে নিজের পরিবারের নিরাপদ খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হন তিনি । নিজের বাগানে চাষ করেন সীম, মিষ্টি কুমড়া, শীতলাউ, বারোমাসী মরিচ, বরবটি, করলা, কলা, পাতা করলা, পেপেঁ, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, কুমড়া, পুইশাকঁ, আম ইত্যাদি। নিজের পরিবারের  নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে সবজি, বীজ বিনিময়ে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের সাথে সখ্যতা আরো দৃঢ় হয়। কোথাও কোন নতুন উদ্যোগ দেখলে তাকে অনুপ্রাণিত করে।

করোনাকারীন সময়ে সহকর্মীর বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ বিষয়ে জেনে সেখান থেকে ৩টি ফেন (বীজ) সংগ্রহ করে একটি বস্তাতে চাষ করার চেষ্টা করেন। সেই থেকে শুরু। প্রাথমিক অবস্থায় অল্প সফলতা পেলেও বতর্মানে তিনি ৮টি বস্তাতে আদা চাষ করে প্রতিবছর ৬ থেকে ৮ কেজি আদা উত্তোলন করতে পারেন। তাছাড়া মাটিতেও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে ফলন পেয়েছেন ৩ কেজি। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়, প্রতিবেশীদের প্রায় ২ কেজি আদা বিতরণ করেছেন।

সমাজ গড়ার কারিগর আকলিমা পারভীনের ছোট ছোট উদ্যোগ এখন অন্য নারীদের অনুপ্রেরণা ,কৃষিকে স্বীকৃতি দিয়ে গ্রামীণ নারীদের বাস্তবতাকে তুলে ধরে তাদের অর্থনিতক ও সামাজিক মর্যাদাকে সুসংহত করার। নিজস্ব কৃষি ব্যবস্থাই পারে সংস্কৃতি, অধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা সর্বোপরি কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করার উদাহরণ।

happy wheels 2

Comments