স্বপ্নজয়ী নগেন
মানিকগঞ্জ থেকে এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ:
আমাদের নগেন, পুরো নাম নগেন দাস(৫৪)। পিতা নেই-বৃদ্ধা মা আছেন। বাড়ী গোপালপুর, হরিরামপুর। মানিকগঞ্জ শহরে নগেন বহুল পরিচিত এবং সকেলরই স্নেহ-ভালোবাসার পাত্র। কারন একটাই, টাকা নেই অথচ পছন্দের বা জরুরি পত্রিকাটা এখনি প্রয়োজন, নগেন হাসিমুখে কাস্টমারের দাবি পূরন করবে। টাকা! সে পরে দিলেও চলবে। এই হলো নগেন।
টাকা উপার্জনের জন্যই সে কৈশরে জীবীকার সংগ্রামে শহরে এসেছে কিন্ত পয়সার জন্য কখনো কাস্টমারের সাথে তার দ্বন্দ হয়নি। নগেন নিরক্ষর, কিন্ত কখনো নিরক্ষরতা তার জীবনে অভিশাপ হতে পারেনি। কৈশোর-যৌবনকে সে উৎসর্গ করেছে মা-বাবা আর ভাইদের জীবন-জীবীকার প্রয়োজনে।
তাই নগেনের জীবনে প্রেম-ভালোবাসা দখিনা দুয়ার খুলে বসন্তের হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। এজন্য তার দু:খ, বেদনা, হতাশা নেই। নগেন নিজেকে এখন খুব সুখি মনে করে। কারণ, তার এক কন্যা এখন শহরের নামকরা স্কুলে নবম শ্রেনিতে পড়ে। আর ছেলে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলতার সাথে উন্নীত হয়েছে।
পত্রিকার হকার নগেন ৫০ টি পত্রিকা বিক্রি করে জীবীকার যে অনিশ্চিত সংগ্রাম শুরু করেছিলো। এখন নগেন প্রতিদিন ১৭০০ পত্রিকা বিক্রি করে। নগেন আগে হকার ছিল, এখন নগেন এজেন্ট হয়ে মালিক হয়েছেন।
নগেন পত্রিকা বিক্রির অর্থ জমিয়ে নিজস্ব বাড়ী করেছে নওখন্ডা গ্রামে, একি কম কথা। এর বাইরে নগেন বাড়ী যায়, মায়ের দেখ-ভালও করেন। ভাইদের বড় করেছে প্রয়োজনে সহযোগিতাও করে। নগেন নিজেকে গর্বিত মনে করে এই ভেবে যে, অনেক নতুন পত্রিকার পাঠক সৃস্টিসহ অনেককে নগেন খুবই অল্প পয়সায় পত্রিকা দিয়ে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন।
নগেনকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার স্বপ্ন কি? বুক উচিয়ে সে উত্তর দিলো, আমার ছেলেদের ব্যবসার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জীবন সংগ্রাম থেকে অবসর নেবো।
ঝড়-বৃস্টি, বন্যাখড়া, রৌদ্র-ছায়া কোনো বাঁধাই নগেনকে থামাতে পারেনি। আজ নগেন কারো দয়া বা দানে নয় জীবন সংগ্রামকে আলিঙ্গন করে সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এতদূর এসেছে, জীবনের সফলতার স্বপ্ন দেখছে। নগেন স্বপ্নজয়ী হোক- নগেন হোক আমাদের প্রেরণার উৎস।