ফিচারের ফিচার
রাজশাহী থেকে হেলালে আফতাব শাকিল
কমবেশি সকলে লিখতে ভালোবাসেন। লেখার মধ্যে ফুটে উঠে মনের গভীরে জমে থাকা হাজারো অনভূুতি। লিখনীতে ফুটে উঠে গভীরতম মর্মবাণী। বিশ্ব কবি ববীন্দ্রনাথ, পল্লী কবি জসীমউদ্দঈন সবাই তাঁদের লিখনীর মধ্যে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকেনা। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠ লিখনী শতাব্দির পর শতাব্দি মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখে।
ফিচার কি? তার কোন সঠিক সংজ্ঞা আজো তেমনভাবে পাওয়া যায়নি বললেই চলে। সহজভাবে বলা যায় হার্ড নিউজ ব্যতীত সকল নিউজই ফিচার। যেখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানবিক আবেদনে ঠাসা থাকবে। ফিচার কথা বলবে মানবতার। ফিচার কথা বলবে প্রকৃতির। ফিচার কথা বলবে বহুত্ববাদ সমাজের। ফিচারের মধ্যে দিয়ে জানা যাবে আন্তঃনির্ভরশীলতার। তবেই তো স্বার্থক হবে ফিচার।
যেকোন বিষয়ের উপর ফিচার লেখা সম্ভব। শুধুমাত্র নির্বাচিত বিষয়ের সাথে সর্বাত্বক যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। বিষয়ের গভীর থেকে শুষে নিয়ে আসতে হবে সামগ্রিক বিষয়। অতঃপর সাদা কাগজে ফুটিয়ে তুলতে হবে মানবিক আবেদনের বাস্তব চিত্র।
দুঃখের বিষয় বর্তমান ফিচার লিখার প্রবণতা তেমন একটা দেখা যায় না। কেবলমাত্র পেশাদার ব্যক্তিরাই জীবিকার তাগিদেই ফিচার লিখে থাকেন। তবে বেশকিছু সত্যিকারের নায়ক এখনো আছেন যারা সাগড়ের দৈত্য নীল তিমি থেকে শুরু করে রাস্তায় পড়ে থাকা আগুনে পুড়ে যাওয়া ছাই নিয়েও ফিচার লিখে ফেলেন। ফিচার লিখনে তাই প্রয়োজন একটি সচেতন মন ও মানবিক দৃষ্টি।
ফিচার লিখনের জন্যে আমরা খুজি- ব্যক্তিত্ব চিত্রন, আত্মকথা, শিকারোক্তিমুলক ইতিহাস ভিত্তিক সাক্ষাৎকার, কখনোবা বিশেষ সংবাদ, ভ্রমণ বৃত্তান্ত বা অভিযানমূলক, বিশ্লেষণ এবং উন্নয়ন ধর্মী বিষয় । এরকম আরো কতো কি। মোটর উপর এই সব কয়টি থিম ধরা যায়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এর পরিধি কতোটাই প্রসারিত।
এর জন্যে শুধু প্রয়োজন একটু খানি মনের মানবিক চাহিদা আর প্রয়োজন অনুসন্ধুৎস্য মনোভাব। এই দুইয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে আসুন না শুরু করে দিই কোন একটা বিষয়ের একটি সফল ফিচার লেখার। যেটি কথা বলবে সফলতার। শিখিয়ে দেবে আরেকজনার অভিজ্ঞতা বা জ্ঞানের কথা। হোক সেটা সফলতা বা হোক না বিফলতা । কারণ বিফলতার মধ্যেও যে মানুষ সফলতার বীজ বুনে তাও জানা দরকার।
তবুও তো লিখা সেটি। আপনার মনের চোখে দেখা বাস্তব চিত্র যেটি প্রকাশ করতে চেয়েছেন সমাজে, দেশে, এমনিক বিশ্ব দরবারে, বিশ্বের মানুষগুলোর সামনে। আপনার লিখনীর মধ্য দিয়েই হয়তো সমাজের বৈষম্য, সমস্যা আর সম্ভাবনার গল্পগুলো ফুটে উঠবে।
আপনার প্রথম লিখা ফিচারটি হয়তো আজ কেউ পড়বে না। এ কথা মনে করে হয়তো অনুশোচনায় আপনার মন ভরে উঠছে। কিন্তু কে জানে একদিন হয়তো আপনিই সফল কোন ফিচার লেখক হতে পারেন । কারণ আপনার মধ্যে সেই মানবিক আবেদন আর সত্যিকারের চিত্রটি তুলে ধরার প্রবণতা আছে। তাই একদিন আপনার এই চেষ্টা বৃথা যাবেনা। হয়তো একদিন লাখো লাখো মানুষ আপনার ফিচারটি পড়তে পড়তে অজান্তেই লিখার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলবে। সেদিন হয়তো আপনি সফল।
তাই মনের গভীরে সফলতার স্বপ্ন আকড়ে ধরে আপনার আশেপাশে সমস্যা-সম্ভাবনা আরো কতো কি নিয়ে আজই শুরু করে দিন! জানিয়ে দিন বিশ্বকে আপনার আশপাশের বিষয়কে। প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে তৈরি করুন ফিচার। একদিন আপনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেনই।