নদীর কান্না কি শুনতে পাও?

নেত্রকোনা থেকে অহিদুর রহমান
‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’। নদীমাতৃক দেশের নদী ও মানুষের জীবন ব্যবস্থা এভাবেই গড়ে ওঠেছিল। নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে প্রথম কৃষি কেন্দ্রিক সভ্যতা। নদী জীবন্তসত্তা। আজ নদী তার অধিকার ফিরে পেতে চায়। নদীর অধিকার আছে বিচার চাওয়ার। নদী বলতে চায়, ‘আমার উপর তোমাদের সভ্যতা গড়ে ওঠেছে। আমার জলে কৃষি চলে, আমি জলবায়ু অভিঘাত থেকে মানব জাতিকে রক্ষা করি।’ জলজ ও স্থল প্রাণী রক্ষায় এক জীবন্ত আধার হলো নদী। নদীর বাস্তুতন্ত্র মানুষের জন্য এক নিয়ামত। কিন্তু আমাদের মানুষের দখল, দূষণ ও অত্যাচারে নদী আজ বিপর্যস্ত। নদীর মাছ আজ বিলীন। যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ ক্ষতিগ্রস্ত। তাই নদী আজ তার অধিকার ফিরে ফেতে চায়।

নেত্রকোণা সম্মিলিত যুব সমাজের আয়োজনে ও বারসিক’র সহযোগিতায় সম্প্রতি বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে নেত্রকোণা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হচ্ছে নেত্রকোণা অঞ্চলের নদী রক্ষা, দখলমুক্ত, খননের দাবি নিয়ে জানিয়ে। পাশাপাশি নেত্রকোণা পৌরসভা এলাকায় উদীচী মিলনায়তনে “আসুন নদীর কথা শুনি” শিরোনামে আলোচনা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়। আটপাড়া উপজেলার মগড়া, সাইডুলি, সোনাই, বাউরি, ছিলা, তুষাই, বৌলাই, বিষনাই নদীর খনন, সুরক্ষা ও দখল মুক্তের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। মদন উপজেলার বালই, চাওয়াই, মগড়া, ফড়িংখালিসহ সকল নদী ও নেত্রকোণা সদর উপজেলার মগড়া, ধলাই, সাইডুলি, জিদাই, কৃষ্ণাখালি, তেওরাখালি, ধুপিখালি, লাউয়ারি, সুরিয়া নদী সুরক্ষার দাবিতে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।


উদীচী মিলনায়তনে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুলের ৩০ জন শিক্ষার্থী নদী নিয়ে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। শিক্ষার্থীরা নেত্রকোণার নদী, নদীকেন্দ্রিক জীবন ও মানুষের নদীর উপর নির্ভরশীলতার কথা চিত্রাংকে তুলে ধরে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ লেখক গবেষক আনোয়ার হাসান, লোকসংস্কৃতি গবেষক ও প্রকৃতিপ্রেমিক অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা, সাংবাদিক আলপনা বেগম, বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারীসহ নদীচিন্তক অনেকেই। আলোচকরা বলেন, ‘নেত্রকোণা অঞ্চলে ছিলো ৮৫টি নদনদী। কিন্তু কালের আবর্তে আজ অনেক নদী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অনেক নদী আজ মৃতপ্রায়। ধুকে ধুকে চলছে ১৭টি নদী। তারপরও এসব নদীর উপর দখল, দূষণ, অবৈধ বালু উত্তোলন, অপরিকল্পিত ব্রীজ নির্মাণ এর ফলে বিপন্ন হয়ে পড়ছে।’ নদীর অধিকার ফিরিয়ে দিতে, নদীকে নদীরূপে ফিরিয়ে দিতে ও নদীকে তার মতো থাকতে দিতে আলোচকবৃন্দ জোর দাবি জানান।


প্রধান অতিথির ভাষণে অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান বলেন, ‘নেত্রকোণার জলভূমি, পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার, খাল-বিল, হাওর নদ-নদী আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। পুকুর-ডোবা, জলাশয়-জলাধার, খাল-বিল, হাওরসহ সকল জলাধারগুলোর জীবন ফিরিয়ে আনতে হবে। নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, খাল-বিল, হাওর ও জলাশয়-জলাধারগুলোয় পানি না থাকার কারণে নেত্রকোণা অঞ্চলের আদিবাসীরা পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কৃষকেরা সেচের পানির অভাবে ভূগর্ভের পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। পানির উৎসগুলো নষ্ট করে পানির সংকটে সবাই অস্থির। নদীর কান্না আমরা কি শুনতে পাই?’ সভাশেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে ফুলের চারা বিতরণ করা হয়।

happy wheels 2