পরিবেশ ভালো থাকুক শুধু সেটাই আমরা চাই
রাজশাহী থেকে ইসমত জেরিন
‘পরিবেশ ভালো থাকুক শুধু সেটাই আমরা চাই’। এই উক্তিটি করেছেন রাজশাহীর বড়শীপাড়া গ্রামের কৃষক মো. সেলিম রেজা বকুল। গতকাল (২০ জুন) সামাজিক বন বিভাগ ও বড়শীপাড়া গ্রামের জনগোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে বড়শীপাড়ায় অনুষ্ঠিত বৃক্ষরোপণ বিষয়ক আলোচনা সভায় এই উক্তিটি তিনি করেছেন।
বৃক্ষরোপণ বিষয়ক আলোচনা সভায় শুধুমাত্র কৃষক সেলিম রেজা বকুলই নন; উপস্থিত অন্যান্য কৃষক, নারী, যুবকসহ সকলের সম্মিলিত বক্তব্যই হচ্ছে পরিবেশকে সুস্থ ও সবল রাখা। এর জন্য তারা বৃক্ষ রোপণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা তাদের গ্রামের রাস্তা ও পতিত জায়গায় বৃক্ষ রোপণ করতে চান। তবে তাঁরা এমন কোন বৃক্ষ যেমন- ইউক্যালিপটাস, শিশু ও আকাশমণির মতো এমন কোন বৃক্ষ চান না, যা পরিবেশের ক্ষতিকর।
উক্ত আলোচনা সভায় সামাজিক বন বিভাগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম সামাজিক বন বিভাগ থেকে বনায়নের বিভিন্ন নিয়ম, অংশীদারিত্ব, বনায়নের লভ্যাংশ, কি কি ধরনের বৃক্ষ সহযোগিতা করা হবে ও বৃক্ষ সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বনজ গাছ হিসেবে আকাশমণি গাছের রোপণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু গ্রামের জনগোষ্ঠী তাকে স্পষ্ট করেই জানান যে, পরিবেশ ক্ষতি করে এমন কোন গাছ তাঁরা লাগাবেন না। এই প্রসঙ্গে কৃষক সেলিম রেজা বকুল বলেন, “আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাই না। আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারবো না। আমরা চাই, বাবলা, নিম, কড়ই, মেহগনি, সেগুন, শাল, আম এমন ধরনের গাছ রোপণ করার, যা আমাদের পরিবেশের জন্য উপকারী।” কৃষক সেলিম রেজার কথার সাথে সহমত পোষণ করেন আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য কৃষক, নারী ও তরুণরা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বড়শীপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৈয়বুর রহমান গাছের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “আমাদের কাছে গাছ শুধু গাছ নয়; গাছ আমাদের অক্সিজেন দিয়ে জীবন বাঁচায়, গাছ থেকে আমরা ফল পায়, গাছ আমাদের ছায়া দেয়, গাছে পাখি বাসা বাঁধে, গাছের পাতা পচে সার তৈরি হয়। তাই আমাদের এমন গাছ লাগাতে হবে যেন আমাদের পরিবেশ রক্ষা পায় এবং সাথে সাথে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ভালো থাকে।”
আলোচনায় বৃক্ষ রোপণের জন্য বড়শীপাড়া গ্রামের জনগোষ্ঠী গ্রামের এক কিলোমিটার রাস্তা ও গোরস্থানের এক একর পতিত জায়গা নির্বাচন করেন। বৃক্ষ রোপণের জন্য বন বিভাগ কর্মকর্তা প্রায় ২৫০০ বৃক্ষ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। এসব বৃক্ষ সংরক্ষণের দায়িত্বপালন করবেন বড়শীপাড়া গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ বড়শীপাড়ার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
বড়শীপাড়া গ্রামের মানুষদের এমন পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা সম্পর্কে বনবিভাগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষ আসলে আগের তুলনায় অনেক সচেতন হয়েছে তারা তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হয়েছে, তারা আজ শুধু নিজেরাই ভাল থাকতে চায় না তাদের আশেপাশের মাটি, পানি, পাখি, জীবজন্তু, বাতাস সবকিছু নিয়েই ভাল থাকতে চায়। একটি গ্রামের উন্নয়নের জন্য এটা অনেক ইতিবাচক একটি দিক।