কাইশ্যাবিন্নি: চরের বন্যা সহিষ্ণু আউশ মৌসুমের স্থানীয় ধানজাত

মানিকগঞ্জ থেকে মাসুদুর রহমান

নি¤œগঙ্গা প্লাবনভূমি কৃষিপরিবেশের অধীন মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর ওপারে লেছড়াগঞ্জ দ্বীপচর ইউনিয়নের হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক মো. লুৎফর রহমানের পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো এক একর জমির কাইশ্যাবিন্নি স্থানীয় আউশ ধানজাত এ বছরের বন্যায় এক থেকে দেড়ফুট পানির নিচে পঁচিশ দিন নিমজ্জিত থেকেও পানি সরে যাবার সাত দিনের মাথায় পুনরায় সজীব হয়েছে।

পদ্মা ওপারের তীরসংলগ্ন হরিহরদিয়া চরের কৃষক লুৎফর রহমান বিগত ২০১৯ সালে বারসিক- হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টারের সহায়তায় কৃষক-কৃষক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অংশ হিসাবে জেলার সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের বরুন্ডী গ্রামে কৃৃষকদের তৈরি ‘বরুন্ডি কৃষক বীজব্যাংক’ পরিদর্শন করেন। সেখানে সংরক্ষিত নানা ধরনের শস্য-ফসলের বীজ ও ৫৯ ধরনের ধানজাতের সংরক্ষণ প্লট পরিদর্শন করেন। কৃষক-কৃষক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সময় তিনি কৃষক বীজব্যাংকের কাছ থেকে শুভেচ্ছা উপহার হিসাবে কাইশ্যাবিন্নি জাতের কিছু বীজ ধান সংগ্রহ করেন।

সেই বীজ তিনি চলতি আউশ মৌসুমে চরের প্রায় এক একর জমিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে ছিটিয়ে বীজ বপন করেন। বীজমান ভালো থাকায় পুরো জমি অংকুরিত সবুজ চারায় ভরে যায়। এ বছর আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে চরে বর্ষার পানি প্রবেশ করে। বন্যার পানি হঠাৎ অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গিয়ে ধানচারা প্রায় থেকে দেড় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং বন্যার পানিতে পলি থাকার কারণে ধানের পাতা ও কান্ড মাটিতে চাপা পড়ে। কিন্তু পরীক্ষাধীন জমিটির উত্তর পাশে বসত বাড়ি থাকায় পানির ¯্রােত তেমন না থাকায় চারাগুলো ২৫ দিন দাঁড়ানো অবস্থায় স্থির পানির নিচে তলিয়ে থাকে। বন্যার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার সাত দিন পর ধান গাছের কান্ডগুলোর সতেজতা ফিরে আসে এবং প্রতিটি গোছা হতে গড়ে প্রায় বারোটি করে কুশি হয়।

বন্যাপরবর্তী সময়ে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চরে প্রায় প্রতিনিয়তই বৃষ্টিপাত হওয়ায় বর্তমানে জমিতে পানির অভাব পূরণ হচ্ছে। গবেষণাধীন ধান বর্তমানে দুধ অবস্থা সমাপ্তির পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে চরের প্রায় শতাধিক কৃষক কৃষাণী স্থানীয় এই আউশ ধানটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আগামী বছর চাষের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে কৃষক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘চরে অধিকাংশ কৃষক আউশ মৌসুমে পরাঙ্গী ধান চাষ করেন। কিন্ত আগাম বন্যা হলে এই জাতটি অনেক সময়ই সংগ্রহ করা যায় না। কিন্ত কাইশ্যাবিন্নি ধানটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও বেঁচে থাকতে পারে যা চলমান পরীক্ষামূলক চাষের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বন্যাপ্রবণ চরে কাইশ্যাবিন্নি এলাকা উপযোগি জাত হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।’

বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন কৃষিপরিবেশ অঞ্চলে রয়েছে হরেক রকমের শস্য-ফসলের বৈচিত্র্যতা, রয়েছে কৃষি জমির মাটি ও পানি উৎসের ভিন্নতা। পদ্মা নদীর হরিহরদিয়া দ্বীপচরের সংগ্রামী লড়াকু কৃষিজীবি জনগণ নানা প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও কৃষিকেই প্রধান জীবিকা করেই টিকে আছেন। একই সাথে নিজেদের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও কৃষিতে নিয়েছেন নানা ধরনের পরীক্ষামূলক উদ্যোগ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চরের ভঙ্গুর পরিবেশে সেবা ও সুযোগ বঞ্চিত এই বিপুলসংখ্যক জনমানুষের উদ্যোগে সহায়তা করে তাদের সামগ্রিক আর্র্থ-সামজিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব।

happy wheels 2

Comments