আবারো লন্ড ভন্ড বুড়িগোয়ালিনী
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
চারিদিকে অথৈ লবণ পানি। মাছ, সাপ, ব্যাংঙ ও অন্যান্য মৃত প্রাণের পঁচা দুর্গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এলাকার মানুষদের জীবন ও জীবিকা চরম দুর্বিসহ আকার ধারণ করেছে। ১৪ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে খোলপেটুয়া নদীর বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়াডের দুর্গাবাটির জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। যা রাতের আধারেই মুহুত্বের মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেটা সময়ের ব্যবধানে প্রবল ¯্রােতে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার বিঘা জমির শতশত চিংড়ী প্রকল্পের রপ্তানিযোগ্য চিংড়ী মাছ ভেসে গেছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছে বুড়িগোয়ালিনী ও সীমান্তবর্তী আটুলিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ। তীব্র জোয়ারের লবণ পানি প্রবেশের সাথে সাথেই চিংড়ী ঘের, কৃষি ফসলসহ সবকিছু ভেসে যায়।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/07/আবারো-লন্ড-ভন্ড-বুড়িগোয়ালিনী-2-1024x782.jpg)
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর দুর্গাবাটি এলাকা ভাঙনের পর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ঝুকিঁপূর্ণ দুর্গাবাটি বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে জোয়ারের তোড়ে ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি, পূর্ব দুর্গাবাটি, পশ্চিম পোড়াকাটলা, পূর্ব পোড়াকাটলা, আড়পাঙ্গাশিয়া, ভামিয়া, বিল আটি, মাঝের আইট, বুড়িগোয়ালিনী, দাতিনাখালী এবং পাশর্^বর্তী আটুলিয়া ইউনিয়নের বীরসিং, হেনচি, ছোটকুপট, বড়কুপটসহ বেশ কিছু এলাকা লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকার বহু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ সময় অধিকাংশ মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়েছে। সুপেয় পানির আঁধার, বাথরুম, কৃষি ফসল, নানা জাতের গাছপালা, বীজ বৈচিত্র্য, বসতঘর, হাঁস মুরগী ও গবাদি পশুপাখি সহ পরিবেশের উপর চরম প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এলাকায় কোন খাবার পানি নেই। বা গোসলের কোন পানি নেই। পঁচা দুর্গন্ধ ও জীবাণূযুক্ত পানিতেই গোসল সহ দৈনন্দিন পারিবারিক কাজে এই পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি। বিভিন্ন সংগঠন বা সংস্থা কিছু কিছু পয়েন্টে পানি সহযোগিতা করলেও সেটা খুবই সীমিত বলে জানালেন, দূর্গাবাটি টুঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা সাধন মন্ডল, তিনি আরো বলেন, ‘গতকাল আমার শ^শুরবাড়ী থেকে এক ট্রলার পানি সহযোগিতা করায় কোন রকমে চলছে। আমরা অনেক ভিতরের মানুষ জানতে পারিনি কখন মোরের মাথায় পানি দিচ্ছে। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পানি পানে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে।’
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের একমাত্র ধান চাষের জমি আড়পাংগাশিয়া ও বিলআইটের কৃষি জমি লবণ পানিতে একাকার হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমের আমন ধান চাষের কোন সম্ভাবনা নেই মনে করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। ভাঙন কবলিত এলাকার মৎস্য ঘের, পুকুর, খাল, কৃষি ফসলাদি, গাছপালা সহ প্রাণী সম্পদের উপর এর প্রভাব বেশি পড়েছে। মানুষের খাদ্য ও বসবাসের ব্যবস্থা করা গেলেও বিপাকে রয়েছে প্রাণী সম্পদগুলো নিয়ে। কেউ কেউ দূর আত্মীয়ের বাসায় পাঠাচ্ছে গরু, ছাগল, আবার কেউ বিক্রি করে দিচ্ছেন, আবার অনেকেই তাদের এই মূলবান সম্পটাকে অনেক কষ্ট করে বাড়ি ঘরের উচু জায়গাতে রেখে গাছের পাতা ডাল ও লতা পাতা খাওয়াচ্ছেন।
তবে যেসকল এলাকাগুলোতে এখনো লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেনি সেসব এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে রাস্তার উপর মাটির বাঁধ দিয়ে এলাকা নিরাপদ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অতি দ্রুত বাঁধ নির্মাণের জন্য পাউবো, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ সমাজের বিভিন্ন সেক্টরের মানুষেরা মিলিত হয়ে অগ্রসর হয়েছে। ভাঙন পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দার, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বাঁধ নির্মাণ কাজ অতিদ্রুত এগিয়ে চলেছে। আগামী ১৯ জুলাই বাঁধ দেওয়ার মাধ্যমে পানি আটকানোর পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।