হামেদা বেগমের পারিবারিক পুষ্টি বাগান
মানিকগঞ্জ থেকে শিমুল বিশ্বাস
বয়সের ভারে নতজানু। সংসারে নাই কোন অভাব। চার ছেলে সবাই প্রতিষ্ঠিত। তথাপি এক মহুর্ত বসে থাকে না কৃষাণি হামেদা বেগম। সিংগাইর উপজেলার উত্তর জামশা গ্রামের ৮০ বছর বয়সী কৃষাণি হামেদা বেগম। বাড়ির পালনি জমির ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন বৈচিত্র্যময় সবজি ও ফলমুল সমৃদ্ধ পুষ্টিবাগান। পরিবারের সদস্যদের মুখে নিজের উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য তুলে দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন এ বয়োবৃদ্ধ নারী।
সম্প্রতি বারসিক এর পক্ষ থেকে তার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানা যায় যে, ছোটবেলায় তার মা তাকে হাতে কলমে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত করেন। মায়ের কাছ থেকে তিনি শিখেছেন বাড়ির আঙ্গিনা ও পালানসহ অব্যবহৃত জমি ব্যবহার করে কিভাবে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যায়। অভিজ্ঞতা ও অভ্যাসগত কারণে পালানি জমিতে বারোমাস ব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করেন এ নারী। বর্তমানে তার কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে তার ১০ বছরের নাতনী জিনিয়া এবং ছেলের বউ জেসমিন আক্তার। হামেদা বেগমের বাগানে চাষকৃত ফসলের মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, সীম, লাউ, বেগুন, বরবটি, মরিচ, ডাটা, মিষ্টিকুমড়া, সোয়াজপাতা, ভেন্ডি, আলু, বাধাকপি, ব্যাঙ আলু, মটরশাক, লালশাক, পালংশাক, পেপে, আদা, হলুদসহ নানা ধরনের ফসল। এছাড়া বাড়ির উপর রয়েছে, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারি, জলপাই, কুল, কদবেল, আতাফল, জামরুল, পেয়ারা, লেবুসহ নানাবিধ ফলের গাছ। হামেদা বেগম মনে করেন, এ সব সবজি ও ফলমুল তার পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় এবং আতিথিয়তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূণূ ভুমিকা পালন করে।
২০২৩ সালে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পর থেকে তার কৃষি কাজের ধরন পরিবর্তন হতে শুরু করে। তিনি জানান, আগে বাজার থেকে বীজ কিনতেন। ছেলেরা সার এনে দিতো বাজার থেকে। তবে বর্তমানে তিনি নিজেই বীজ সংগ্রহ করেন। গোবর দিয়ে নিজেই তৈরি করেন জৈব সার। ফসলের পোকামাকড় দমনের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেন বাশিছাই, গো-মুত্র, মেহগনিফল ও নিমপাতার নির্জাস, সেক্স ফেরামন ফাঁদ। নিজের সংরক্ষিত বীজ এবং উৎপাদিত ফসল আত্মীয়সজন ও প্রতিবেশীর মাঝে বিনিময় করেন বিনা মুল্যে।
হামেদা বেগমের খামারে উৎপাদিত ফসল পরিবারের চাহিদা পুরনের পর বাজারেও বিক্রি হয়। বিক্রয়ের অর্থ হামেদা বেগম নিজের প্রয়োজনে খরচ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি যে ফসল ফলাই তা আমরা নিজেরা খাই। আবার বাজারেও বিক্রি করি। চলতি বছর ২০ হাজার ট্যাকার সবজি বেচছি। ফসল বেচা ট্যাকা ছেলেরা আমার কাছে দেয়। এ ট্যাকা নিজের পছন্দমত খরচ করি। ওষুধ কিনি। নাতি নাতনীর আবদার মেটাই।”
বর্তমানে বাজার নির্ভরশীল কৃষি ব্যবস্থা গ্রাস করেছে আমাদের চিরাচরিত লোকায়ত কৃষি ব্যবস্থা। অধিক উৎপাদনের প্রত্যাশা পূরণে ব্যবহার হয় মাত্রাতিরিক্ত রাসয়নিক সার ও কীটনাশক, যা আমাদের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির বড় চ্যালেঞ্জ। উক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে হামেদা বেগমের মত নারীদের। হামেদা বেগম মনে করেন, পারিবারিক পুষ্টিবাগান পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা নিরাপদ খাদ্য সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেন।