পেঁয়াজের সাথে মিশ্র ফসল চাষ করে লাভবান কৃষকরা
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার
বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষ ও বীজ উৎপাদনে বেশ উপযোগী। পেঁয়াজ চাষের বিখ্যাত জেলার মধ্যে মানিকগঞ্জ অন্যতম। আর এ কারণে মানিকগঞ্জ জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর, দৌলৎপুর, সিংগাইর, সাটুরিয়া ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ চাষ হয়। পেঁয়াজ চাষ করে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। আমাদের দেশে প্রায় সব মসলা ফসলের চাহিদা উৎপাদনের চেয়ে কম। পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো হলে অধিক মুনাফা অর্জনে করা সম্ভব।
বর্তমানে পেঁয়াজের উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় অনেকটাই উৎসাহী হয়ে পেঁয়াজ আবাদে ঝুঁকছেন শিবালয়, ঘিওর, হরিরামপুর উপজেলার কৃষকরা আবহাওয়া, দোঁ-আশ ও পলিযুক্ত মাটি, জল নিস্কাশন, দিনের প্রচুর আলো, সহনশীল তাপমাত্রা ও মাটিতে প্রয়োজনীয় রস পেয়াঁজ চাষের জন্য উপযোগী। শিবালয়, ঘিওর, হরিরামপুর উপজেলার কৃষকরা তেমনী জমি পেঁয়াজ চাষের জন্য নিবার্চন করেন, যা পেঁয়াজ ফলনের খুব উপযোগী। এলাকায় কৃষকরা দু’ধরনের পেঁয়াজের চাষ করেন, সাগা পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) ও হালি পেঁয়াজ। সাগা পেঁয়াজের সাথে কৃষকরা বাংগী ও মিষ্টি লাউ চাষ করছেন আর হালি পেঁয়াজের সাথে মরিচ চাষ করছেন। এভাবে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।
কাছিধারা গ্রামের ওসমান মিয়া ও কৃষাণী মিসেস খালেদা বেগম তাদের কৃষি জ্ঞানের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথমে পেঁয়াজের জাত নির্ধারণ করেন কিং, সুপার কিং, খানের কিং, তাহেরপুরী। আরো ৩টি জাত ঝিটকা, সলতা, ফরিদপুরী থাকলেও এই জাতের মধ্যে সবার্ধিক চাষ হচ্ছে কিং, সুপার কিং, তাহেরপুরী জাত। গালা গ্রামের কৃষক মোঃ আনোয়ার বিশ^াস বলেন, ‘ফেইচাধারা, হাড়িভাংগা, কাছিধারা, বেচপাড়া, ঠাকিজোড়া ও গাংডুবীর চকে কৃষকরা পেঁয়াজে অনেক লাভবান হয়েছেন। পেঁয়াজ চাষের জন্য খ্যাত উপজেলায় এবার পেঁয়াজের ভালো ফলন হয়েছে। পাশাপাশি দামও ভালো পেয়ে পেঁয়াজ চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে কৃষকরা জানিয়েছেন।’ চলতি বছরে কৃষকরা সাগা পেঁয়াজ প্রতি মণ ৪০০০-৪৫০০ টাকা দরে ও হালি পেঁয়াজ প্রতি মণ ১৫০০-১৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা ক্ষেত থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে মাঠে বসেই বস্তায় ভরছে। আবার অনেকে সাইকেল ও ভ্যানে বোঝাই করে পাতাসহ পেঁয়াজ নিয়ে যাচ্ছে। মানিকগঞ্জ জেলার পেঁয়াজের বড় হাট বরংগাইল, ঝিটকা ও ঘিওর হাট।
বারসিক’র পরামর্শে গাংডুবী কৃষক সংগঠনের সভাপতি প্রফুল্ল কুমার মন্ডল এক জমিতে মিশ্র চাষে লাভবান হওয়ার জন্য তিনি পেঁয়াজের ভিতরে মিষ্টি লাউয়ের বীজ বুনে দিয়েছেন এবং পেঁয়াজের জমির চারদিকে বড় সজ। সজের গন্ধে তার পেঁয়াজে পোঁকাড় আক্রমণ কম হয়েছে এবং জমিতে বেড়ার কাজ হয়েছে। এই মিশ্র চাষ করে কৃষক প্রফুল্ল মন্ডল যেমন আনন্দিত তেমনি এলাকার কৃষকরা এই চাষে উৎসাহিত হয়েছেন। তারা প্রফুল্ল মন্ডলের চাষ দেখতে আসছেন এবং তার নিকট পরামর্শ নিচ্ছেন। শিমুলিয়া ইউনিয়নের বড় কৃষক মোঃ মোকসেদ মিয়া, মোঃ আরবান মিয়া, মোঃ খবির মিয়া জানান, আমাদের নিচু এলাকা প্রতিবছর বর্ষায় পলি মাটি পরে জমির উরর্বতা বাড়ে। আমরা পাঁচ বিঘা করে পেঁয়াজ চাষ করে অনেক লাভবান হচ্ছি।’