এলাকার গ্রামের উন্নয়নে জনগোষ্ঠীর ভরসা চন্দ্রডিঙ্গা যুব সংগঠন
চন্দ্রডিঙ্গা থেকে খাইরুল ইসলাম অপু ও শংকর ম্রং
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার একটি বৃহৎ অংশ মূলত হাওর ও পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন লেঙ্গুড়া, খারনৈ ও রংছাতি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষা গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সীমান্ত এলাকাগুলোতে বাঙালি ছাড়াও গারো, হাজং, বানাই, লেঙামসহ চারটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। সীমান্ত এলাকার জনগোষ্ঠীরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। গ্রামগুলোর অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা ও পায়ে হাটার মাটির রাস্তা, এর মধ্যে সীমান্তের গ্রামগুলোর যত্রতত্র পাহাড়ি নদী ও ছড়া বয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে এসব নদী ও ছড়ার বাঁধ ভেঙ্গে প্রতিবছর বসতভিটা ও কৃষি জমি ভারত থেকে পানির সাথে ভেসে আসা বালিতে ঢাকা পড়ে। ফলে বসতভিটা ও কৃষি জমিতে চাষকৃত বৈচিত্র্যময় সবজি ও ধান ফসল বালিতে নষ্ট হয়ে যায় এবং জমি চাষের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। সীমান্তঘেঁষা ভারতের পাহাড়গুলো মূলত খনিজ কয়লা ও চুনা পাথরের। ভারতীয়রা এসব পাহাড় থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে (ওপেন মাইনিং) কয়লা ও চুনা পাথর আহরণ করে থাকে। ফলে বর্ষা মৌসুমে কয়লা ও চুনা পাথর আহরণকৃত স্থানগুলো বড় গর্ত/গুহায় পরিণত হয়। এসব গর্ত/গুহায় বৃষ্টির পানি জমে পুরো গুহা ভরে যায় এবং এক সময় গুহার মাটি পানির চাপ ধরে রাখতে না পাড়ায় গুহার মাটি ভেঙে পানি প্রবল স্রোতে পাহাড়ী নদী উপচে ছড়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানির সাথে ভেসে আসা কয়লা ও চুনা পাথরের গুড়ো নদী ও ছড়ার বাঁধ ভেঙে মানুষের বসতভিটা ও কৃষি জমিতে পড়ে। বিত্তশালী পরিবারগুলো বসতভিটা ও কৃষি জমি থেকে এসব বালি লেবার দিয়ে আপসারণ করে পুনরায় চাষপোযোগি করে, কিন্তু যেসব পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য নেই তারা জমিগুলো ফেলে রাখে। অন্যদিকে পাহাড়ি সীমান্তঘেঁষা কৃষি জমিগুলোর নিচ থেকে কয়লাধোয়া অতিমাত্রায় খারযুক্ত পানি চুইয়ে উপরে ভেসে আসায় চাষকৃত ধান ও অন্যান্য ফসল ধীরে ধীরে মরে যায়। ফলে কৃষকদের পরিশ্রম অনেক সময়ই বিফলে যায় এবং চাষাবাদে দিন দিন অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে সীমান্তের গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হেটে হেটে গ্রামে ঘুরতে হয় বলে সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাগণের এসব গ্রামে যাতায়াত নেই বললেই চলে। ফলে এসব গ্রামের জনগোষ্ঠী সরকারের বিভিন্ন সেবা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে সব সময়ই বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। এত কিছুর পরও সীমান্তের জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে টিকে থাকার সংগ্রাম করে চলা কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের এমনই একটি গ্রাম চন্দ্রডিঙ্গা। চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামটি মূলত এক সময় ছিল আদিবাসী গারো ও হাজং জনগোষ্ঠীর বসবাস। তবে বর্তমানে গ্রামটিতে গারো ও হাজংদের সাথে কিছু কিছু বাঙালি পরিবারের বসবাস লক্ষ্য করা যায়। লোকমুখে শোনা যায়, এক সময় এ গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হত খর¯্রােতা নদী, যে নদী পথে চাঁদ সওঁদাগর বানিজ্যে এলে তার বাণিজ্যের ডিঙ্গিটি দূর্ঘটনায় কবলে পরে নদীতে ডুবে যায়। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গিটি দীর্ঘদিন পাহাড়ে আটকে থেকে পাথরে পরিণত হয়েছে। চাঁদ সওদাগরের ডিঙ্গিটির নামানুসারেই গ্রামটির নামকরণ হয় চন্দ্রডিঙ্গা।
২০১৭ সাল থেকে বারসিক চন্দ্রডিঙ্গা গ্রামে ‘জননিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন উদ্যোগ’ কার্যক্রম আরম্ভ করে। গ্রামের জনগোষ্ঠীর সহযোগিতায় বারসিক এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমী পাহাড়ি ঢলে ছড়ার বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষেত ও বসতঘর বালিতে ঢেকে যায়। এই সমস্যাগুলো নিজস্ব উদ্যোগে সমাধানে জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বারিসিক গ্রামের কৃষকদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘চন্দ্রডিঙ্গা বাঁধ রক্ষা কৃষক সংগঠন’ নামে একটি কৃষক সংগঠন এবং পরবর্তীতে গ্রামের যুবকদের নিয়ে ‘চন্দ্রডিঙ্গা যুব সংগঠন’ তৈরি করতে সক্ষম হয়। ‘উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিছিন্ন সীমান্ত এলাকার উন্নয়নে সরকারি উদ্যোগের উপর নির্ভর না করে যুবদের উদ্যোগে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে স্বেচ্ছাশ্রমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করাই ছিল যুব সংগঠনটি গড়ার অন্যতম উদ্দেশ্য। গঠনের পর থেকে সীমান্ত এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, যোগাযোগ, কৃষির উন্নয়ন, পাহাড়ি ঢল মোকাবেলা এবং গ্রামের নারী ও যুবদের বিষয়ভিত্তিক কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে। যুব সংগঠনটির গৃহীত উদ্যোগে সুফল এখন ভোগ করছে চারটি গ্রামের গারো, হাজং ও বাঙালি জাতিস্বত্তা¡র লোকেরা। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী যুবরা গ্রামে থাকায় যুব সংগঠনের গৃহীত উদ্যোগের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য। করোনাকালীন সময়ে বিগত এক বছরে সংগঠনটি এলাকার উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে সেগুলো নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হল।
গ্রামের এক কি.মি. কাঁচা রাস্তা সংস্কার
করোনাকালীন সময়ে যুব সংগঠনটি পার্শ্ববর্তী পাঁচগাও গ্রামের (প্রায় দুই কি.মি. দূরত্বে) ছড়ায় ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা সিমেন্টের চোঙ্গা (পানি নিষ্কাশনের জন্য মাটির রাস্তায় বসানো) সংগ্রহ করে নিয়ে এসে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় স্থাপন করে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় এক কি.মি. রাস্তার খানাখন্ড মাটি দিয়ে সংস্কার করে মানুষের চলাচলের উপযোগি করেছে।
পাহাড়ি ছড়ার উপর বাঁশের ব্রীজ তৈরি
পাহাড়ি ছড়ার তিন স্থানে তিনটি বাঁশের ব্রীজ (পাঁচ ফুট প্রসস্ত) তৈরি করে দেয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার চারটি গ্রামের (চন্দ্রডিঙ্গা, বাঘবেড়, হাতিবেড় ও বেতগড়া) নারী-পুরুষ, প্রবীণ ও শিশুরা বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়ার উপর দিয়ে হেটে, সাইকেলে এবং মটরসাইকেলে করে সহজেই বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে পারছেন।
সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলোর স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন নিশ্চিতকরণে উপকরণ সহযোগিতা
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সীমান্ত এলাকার চারটি গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে করোনাকালীন সময়ে যুব সংগঠনটি স্বেচ্ছাশ্রমে ৬টি পরিবারকে স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনের উপকরণ (রিং ও স্লাব ) তৈরি (সংশ্লিষ্ট পরিবার রিং ও স্লাব তৈরীর জন্য পাথর, বালি, সিমেন্ট ও জিআই তার দিয়েছে) এবং কয়ো খুড়ে রিং ও স্লাব বসিয়ে ল্যাট্রিন বানিয়ে দিয়েছে।
পাহাড়ির ছড়ার ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ
করোনাকালীন সময়ে যুব সংগঠনটি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল এবং ঢলের সাথে ভেসে আসা বালি থেকে কৃষি ফসল ও বসতবাড়ি রক্ষায় গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ী ছড়ার প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেছে। এর ফলে পাহাড়ি ঢলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা হ্রাস হয়েছে।
বোরো মৌসুমে সেচের জন্য ছড়া উপর বাঁধ নির্মাণ
করোনাকালীন সময়ে সীমান্তের কৃষি জমিতে বোরো মৌসুমে সেচ দিতে যুব সংগঠনের সদস্যরা চন্দ্রডিঙ্গা বাঁধ রক্ষা কৃষক সংগঠনকে ছড়ার উপর প্রায় ২০০ মিটার মাটির বাঁধ (মাটি দূর থেকে সংগ্রহ করে) দিয়ে পানি আটকে রেখে বোরো ধানের জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বসতভিটা ও কৃষি জমি থেকে বালি অপসারণ
বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের সাথে ভারত থেকে ভেসে আসা বালিতে ঢেকে যাওয়া ১২টি পরিবারের বসতভিটা ও কৃষি জমি থেকে বালি যুবরা স্বেচ্ছাশ্রমে অপসারণ করে দিয়েছে। এর ফলে পরিবারগুলো তাদের বসতভিটা ও কৃষি জমিতে বৈচিত্র্যময় সবজি ও ধান চাষ করতে সক্ষম হয়েছে।
ছড়ার পাড় ও বাঁধের ভাঙন রোধে ছড়ার পাড়ে বাঁশের বেড়া দেয়া
বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলের প্রবল স্রোতে ছড়ার পাড় ও বাঁধের ভাঙ্গন রোধ করে বসতভিটা ও কৃষি জমি রক্ষায় যুব সংগঠনটি গ্রাম থেকে বিনামূল্যে বাঁশ সংগ্রহ করে ছড়ার দুই পাড়ের প্রায় দুই কি.মি. পর্যন্ত বাঁশের বেড়া দিয়ে পানির ¯্রােতের গতি কমিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে গ্রামের বসতভিটা ও কৃষি ফসল রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বালি জমিতে সবজি চাষে কৃষকদের সহযোগিতা প্রদান
করোনাকালীন সময়ে যুব সংগঠনের সদস্যরা পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বালি জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে বৈচিত্র্যময় সবজি চাষের জন্য উদ্যোগী কৃষকদেরকে স্বেচ্ছাশ্রমে গোবর মিশ্রিত মাটি বস্তায় ভরে সহযোগিতা করেছে। যার ফলে সীমান্তঘেষা আদিবাসী পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে বসতভিটায় বৈচিত্র্যময় মরিচসহ সবজি চাষ করতে সক্ষম হয়েছে, যা’ করোনাকালীন সংকটে আদিবাসী পরিবারগুলোর পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পারিবারিক আয় বৃদ্ধি করেছে।
বসতভিটায় সবজি চাষে পরস্পারিক সহযোগিতা
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামের সকল যুবরা গ্রামে চলে আসে। এসময় তারা নিজ নিজ বসতভিটায় সবজি চাষের জন্য জমি তৈরি, বীজ বপন ও চারা রোপণে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে। ফলে গ্রামের প্রত্যেক পরিবার বসতভিটায় বৈচিত্র্যময় গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করেছে।
শতবাড়ি মডেলে পুষ্টিবাড়ি সৃজনে যুব সংগঠনের সহযোগিতা
শতবাড়ি মডেলে পুষ্টিবাড়ি সৃজনে গ্রামের তিনটি আদিবাসী পরিবারকে যুব সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে বসতভিটার চারপাশে বেড়া দেয়া, জমি চাষ ও বস্তায় মাটি ভরতে সহযোগিতা করেছে।
আমন ধানের চারা রোপণে কৃষক পরিবারকে যুবদের সহযোগিতা
করোনাকালীন সময়ে আমন/২০২১ মৌসুমে যুব সংগঠনের সদস্যরা গ্রামের ১২টি দরিদ্র কৃষক পরিবারকে স্বেচ্ছাশ্রমে ধানের চারা রোপণ করে সহযোগিতা করেছে। ফলে পরিবারগুলো ধানের চারা রোপণে কৃষি শ্রমিক সংকট সহজেই মোকাবেলায় সক্ষম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে কৃষকদের যোগাযোগ স্থাপন
বারসিক’র সহযোগিতায় যুব সংগঠনটি কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে প্রথমবারের মত কৃষি কর্মকর্তাদের গ্রামে নিয়ে এসে খার পানি/লাল পানির সমস্যা সরেজমিনে পরিদর্শন করাতে সক্ষম হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃষকরা লাল পানির সমস্যা অনেকটা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামের দু’জন কৃষক কৃষি বিভাগের নিকট থেকে বিনামূল্যে ২৫টি মাল্টা চারা (কলম) সহায়তা পেয়েছে।
জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা
যুব সংগঠনের কলেজ পড়–য়া সদস্যরা ‘চন্দ্রডিঙ্গা গ্রুপ ম্যাসেঞ্জার’ নামে একটি সামাজিক মাধ্যম খুলে মহামারী করোনা সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সংগঠনের গৃহীত উদ্যোগসমূহ নিয়মিত প্রচার করে প্রশাসনসহ সচেতন মহলের দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সীমান্ত এলাকার পরিবেশ উন্নয়নে বৃক্ষ রোপণ
করোনাকালীন সময়ে সীমান্ত এলাকার পরিবেশ উন্নয়নে যুব সংগঠনটি পাহাড়ী ছড়ার পাড়, খালি জায়গা এবং সদস্যদের পতিত জমিতে ১৪০টি মেহগনি, বদ্দিরাজ, জাম ও বাঁশের চারা রোপন করেছে। এর ফলে এলাকার পরিবেশ যেমন সংরক্ষণ হবে তেমনি পাহাড়ি ছড়ার পাড় ভাঙন রোধ হবে।
গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট তৈরীতে সহযোগিতা
করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সরকারি নির্দেশে শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। কলেজ পড়ুয়া যুবরা গ্রামের দরিদ্র স্কুল শিক্ষার্থীদেরকে ইন্টারনেট থেকে বিষয়ভিত্তিক লেখা ডাউনলোড করে এসাইনমেন্ট তৈরির জন্য বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে সহযোগিতা করায় শিক্ষার্থীরা সময়মত তাদের এসাইনমেন্ট স্কুলে জমা দিতে পেরেছে।
নারী ও শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে সহযোগিতা
করোনাকালীন সময়ে সংগঠনের সদস্যরা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে গ্রামের বেকার নারী ও শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের তথ্য দিয়ে এবং অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে সহযোগিতা করে গ্রামের ১২ জন নারীকে তিনটি ট্রেডে (সেলাই, মাশরুম চাষ ও বিউটিফিকেশন) দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাইয়ে দিয়েছে। এর ফলে প্রশিক্ষণ পরবর্তী ১২ জন নারীর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ রোধে যুব সংগঠনের চুল কাটা অভিযান
মহামারী করোনার সংক্রমণ সীমান্ত এলাকায় বেশি হওয়ায় গ্রামের পুরুষ সদস্যদের ঘরের বাইরে যাওয়া রোধে যুব সংগঠনের সদস্যরা পরস্পরের এবং গ্রামের ছেলে শিশুসহ সকল পুরুষদের চুল, দাড়ি ও গোফ বিনামূল্যে কেটে দিয়েছে। ফলে গ্রামের ছেলে শিশু ও পুরুষ লোকদেরকে দূরবর্তী বাজারে পায়ে হেটে গিয়ে চুল কাটাতে না হওয়ায় গ্রামগুলোতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়নি।
পাখি বৈচিত্র্য সুরক্ষায় প্রচারণা
সীমান্ত এলাকার পাখির বৈচিত্র্য রক্ষায় যুব সংগঠনটি পাখি শিকার নিষেধাজ্ঞা সংবলিত সাইবোর্ড স্থাপন করে পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাখি শিকার বন্ধ করেছে।
করোনাকালীন সময়ে চন্দ্রডিঙ্গা যুব সংগঠনের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সীমান্ত এলাকার চারটি গ্রামের অধিবাসীদের করোনাকালীন সংকটেও বড় কোন ধরনের সমস্যার সন্মুখীন হয়নি বরং যুবদের সহযোগিতায় গ্রামের পরিবারগুলো বৈচিত্র্যময় সবজি, ফল-মূল, মাছ ও গৃহপালিত পাখি পালন করে করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিজেরাই সংগ্রহ ও পরস্পরকে সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। যুব সংগঠনের উদ্যোগের ফলে সীমান্তঘেঁষা চারটি গ্রামের নারী, পুরুষ, প্রবীণ ও শিশুরা পুরো বর্ষাতেও পাহাড়ি ছড়া অবলীলায় পাড়ি দিতে পেরেছে। মোট কথা করোনাকালীন সংকটে গ্রামের যুব সমাজ সাংগঠনিক উদ্যোগ নিয়ে গ্রামের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।