দশভূজা জবেদা বেগম
মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রীয় মতে, ‘যথা কর্ম তথা ধর্ম’। এই নীতিকথা গ্রাম বাংলার বেশিরভাগ গ্রামীণ নারীরা ভালোভাবেই আওড়িয়ে থাকেন। কর্মের মধ্যে দিয়ে একদিকে নিজের জীবন জীবিকার পাথেয় নিশ্চিত হয় আবার অন্যদিকে মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। মানুষ এই সভ্যতার কারিগর এবং সৃষ্টিকর্তা। সে প্রতিদিন নতুন নতুন পণ্য এবং পণ্য উৎপাদনের কাচাঁমাল সৃষ্টি করে রুপায়িত করে। তাই প্রত্যেক মানুষকেই কারিগর বলা হয়। মানুষ একদিকে উৎপাদক অন্যদিকে ভোক্তা মাঝখানে আছে মুনাফোকর মধ্যস্বত্বভোগী। এই দ্বান্দ্বিকতার মধ্যে প্রতিনিয়ত তাকে টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়।
তেমনি একজন সংগ্রামী নারীর নাম জবেদা বেগম (৪৮)। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার আলীনগর গ্রামে তাঁর বাড়ি। তার স্বামীর নাম খোরশেদ আলম (৫২)। তাঁর ৩ ছেলে ২ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে এবং ছেলেরাও বিয়ে করেছে। তাঁর স্বামী সারাবছর ভ্যান গাড়ি চালান এবং মৌসুমী কৃষি কাজ করতেন। তাদের সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিল। বর্তমানে জবেদার সংসারে আপদ ও বিপদ যেন ছাড়ছেই না।। স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বিধায় এখন আর ভ্যান গাড়ি চালাতে পারেন না। তাঁর পেছনে এখন সময় দিতে হয় জাবেদাকে।
তবে জবেদা বেগম সাহসী এবং দৃঢ় প্রত্যয়ী একজন নারী। তিনি হার মানতে রাজি নন। তাঁর বাড়িতে গরু আছে, ছাগল আছে এবং আছে হাঁস মুরগিও। তিনি এসব পশু সম্পদগুলোর নিয়মিত যত্ন নেন। গবাদি পশু পালনে তিনি নানান সংগঠন ও সরকারি বিভাগের আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এতে তিনি গবাদিপশু হাঁস-মুরগির স্বাস্থ্য ও দেখভালের বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন এবং এদের রোগব্যাধি সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি চেষ্টা করেন তার পালিত গবাদিপশুর সংখ্যা বৃদ্ধি করার।
এভাবে এক বছর পর গবাদি পশু তথা হাস মুরগিতে তাঁর খামার পরিপূর্ণ। বর্তমনে জবেদা বেগমের এসব গবাদিপশু বিক্রি করে ভালো আয় করেন। সংসারও ভালো চলছে। বছরে তিনি ৩-৪টি ছাগল বিক্রি করেন। এছাড়াও একটি কবুতর এর খোপ রয়েছে তাঁর। রয়েছে ২০-২৫টি হাঁস এবং রয়েছে ছোট বড় ছয় জোড়া মুরগি। সব কিছু মিলিয়ে তিনি এখন স্বামীর সংসারে দাঁড়িয়ে নতুন করে স্বাবলম্বী।
জবেদা বেগম সকলকেই আগলে রাখেন। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাকে কাজ করার জন্য দুটি হাত দিয়েছেন। সেই হাত দিয়ে আমি দশটি হাতের কাজ করি। আমি কারো উপর নির্ভরশীল নই বরং আমি আত্মনির্ভরশীল। আমি এভাবেই যতদিন থাকি কাজ করে যেতে চাই এবং পরিবার ও সমাজের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই।