কাকলী আক্তারের ভেড়ার খামার
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
কাকলী আক্তার নিজের পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন একটি দেশীয় প্রজাতির ভেড়ার খামার। ৩টি ভেড়া থেকে একপাল ভেড়ার খামার তৈরির গল্প শোনার জন্য হাজীর হই তার বাড়ীতে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ঝাপা গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর চরে (সরকারি খাস জায়গায়) বাস করেন তার পরিবার। স্কুলের চৌকামাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ের পর স্বামীর সংসারে অভাব অনটনে দিন চলে যায় তার। বর্তমানে সংসারে ৪ বছরের এক মেয়ে সন্তান ও স্বামীসহ ৩জনের পরিবার। স্বামী দিনমজুরের কাজের পাশাপাশি পারিবারিক সকল কাজে কাকলী আক্তার (২৭) কে সহযোগিতা করেন। বিশেষ করে ভেড়াগুলোর যতœসহ নিয়মিত পরিচর্যার কাজটি স্বামী স্ত্রী দুজন মিলেই করেন।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব ঝাপা গ্রামে জবা সিএসও দলে যুক্ত হয় কাকলী আক্তার। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক দলীয় আলোচনায় সভায় অংশগ্রহণ করেন। দলে যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পণা গ্রহণ করা হয়। যার প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে তাকে দেশীয় জাতের ৩টি ভেড়া সহযোগিতা করা হয়।
“আমার ভেড়া চাষের ভালো সুযোগ আছে। ওয়াপদা রাস্তায় ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দিয়ে এগুলো লালন পালন করতে পারি। রাস্তায় ঘাস পাওয়া যায় সব সময়, তাছাড়া নদীর চরের ঘাস ও ধানচে পাওয়া যায়। এগুলো ভেড়ার প্রধান খাবার, বাড়তি খাবার লাগেনা”-এভাবেই নিজের প্রচেষ্টায় ভেড়ার খামার তৈরির গল্প শোনালেন তিনি।” কাকলীদের ঘর গোলপাতার ছাউনি দ্বারা আবৃষ্ট থাকলে ও দুর্যোগ সহনশীল ছিলনা। তাই তার ভেড়ার খামার থেকে ও অন্যান্য আয় থেকে টাকা সঞ্চয় করে নিজের ঘরটি এ্যসবেষ্টাস এর ছাউনি দিয়েছেন। এতে করে নিজেরা ঝড়, বৃষ্টি ও সাধারণ দুর্যোগের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে পারছেন।
কাকলীর স্বামী বলেন রশিদ মোল্লা (৪৭), “ভেড়াগুলো পালন করতে প্রধান সমস্যা হল কুকুরের আক্রমন, আমাদের এলাকায় বেশ কুকরের উৎপাত রয়েছে। ওদের কোন খাবার না থাকায় ছাগল ভেড়ার উপর আক্রমণ করে কামড় দিয়ে মেরে ফেলে। আমার ৩টা ভেড়া কুকরের কামড়ে মারা গেছে। এখান আমাদের ঘরে ৯টি ভেড়া রয়েছে। আমরা ভালোভাবে এগুলো দেখে রাখি একই সাথে মাঝে মাঝে নদীর চরের ধানচে ও ঘাস কেটে এনে খেতে দেই।” তাদের পারিবারিক আয়ের আরো একটি উৎস্য হল ভেড়ার প্রজনন বৃদ্ধির জন্য বাড়িতে একটি পুরুষ ভেড়া (পাঠা) পালন করেন। এটি নিজেদের ভেড়ার বংশবৃদ্ধি/প্রজনন এর জন্য কাজে লাগে। একই সাথে এলাকার আশে পাশের লোকজন তাদের বাড়িতে স্ত্রী ভেড়া প্রজনন এর জন্য নিয়ে আসে। ভেড়ার গর্ভধারনের আগে যখন তার বিশেষ সময় চলে (যখন স্ত্রী ভেড়ার পুরুষ ভেড়ার সাথে মিলনের) তখন উক্ত পুরুষ ভেড়ার কাছে নিয়ে আসে। এজন্য কাকলী ভেড়া প্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। প্রতি সপ্তাহে ৪/৫ জন তার বাড়িতে ভেড়া নিয়ে আসেন। এটা থেকেও তার একটি বাড়তি আয় হয়। ভেড়া থাকার ঘরটি খুব পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন উপায়ে রেখে ভেড়াগুলো পরম মমতায় পালন করছেন। এভাবেই ভেড়া পালনে কাকলীর পরিবার সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হচ্ছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত প্রতিঘাতে সংগ্রামী কাকলী তার পরিবারকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশীয় প্রজাতির ভেড়ার খামার তৈরি করে একদিকে যেমন সমৃদ্ধ হয়েছেন অপরদিকে প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছেন।