দাতন হিসেবে সমাদৃত আধছুটি
সাতক্ষীরা থেকে নুরুল হুদা:
আধছুটি। স্থানীয় নাম আধছুটি হলেও এটি আশশেওড়া নামে পরিচিত। আধছুটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এ গাছ দেখা যায়। এ গাছ যেকোনো পরিবেশে খুব সহজেই বেড়ে উঠতে পারে সহজেই।
এখন দাঁত পরিষ্কার করার জন্য ছোট থেকে বড় সকলের হাতে নানা রকম প্লাষ্টিকের ব্রাশ দেখা যায়। কিন্তু প্রায় ১০ বছর আগেও গ্রামের মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে দাতন নিয়ে দাত মাজতো। বাড়ির মহিলা বা শিশুরাও বাদ যেত না। প্রযুক্তির এ যুগে এসেও গ্রামাঞ্চলে দাতনের চাহিদা কমে যায়নি। দাতন হিসেবে নিমের ডাল বেশি প্রচলিত। কিন্তু তেতো স্বাদের হওয়ায় নিমের ডালের প্রচলন দিনদিন কমে যাচ্ছে। গ্রামে আধছুটি বা আশশেওড়ার ডালের কদর অনেক বেশি।
গ্রামের রাস্তার দুই ধারে, জমির আইলে, বাড়ির পেছনে, পুরনো দালানের ইটের খাঁজে, পুকুর পাড়ে, নদীর ধারে, ঘন ঝোপের আড়ালে সর্বোপরি প্রায় সকল জায়গাতেই আধছুটি গাছ দেখা যায়। যেকোন প্রতিকূলতায় এ গাছ জন্মাতে ও বেড়ে উঠতে পারে।
আধছুটি গাছ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত উচু হতে পারে। কিছু কিছু গাছ ৬ ফুটও লম্বা হয়। এর কান্ডের রং ধূসর। কান্ড বেশ শক্ত। কা-ের কিছুটা পর্যন্ত কোনো ডালপালা হয় না বললেই চলে। আধছুটি মূল, চারা ও বীজ থেকে জন্মায়। এর পাতার রং সবুজ। পাতা একপক্ষল, উপবৃত্তাকার। পাতা পাতলা, মসৃণ।
আধছুটি ফুল খুব ছোট হয়। ফুল সবুজাভাব সাদা রঙের। প্রতি ফুলে ৫ টা করে পাঁপড়ি থাকে। ফুল হালকা মিষ্টি গন্ধ যুক্ত, ফল সবুজ রঙের। তবে ফল পাকলে গোলাপি রং ধারণ করে। ফল মটর দানার চেয়ে সামান্য বড়। প্রতি থোকায় ২০-৫০ পর্যন্ত ফল থাকে।
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, আধছুটি এর অপর নাম আশশেওড়া। একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর ইংরেজি নাম orange berry এবং gin berry। বৈজ্ঞানিক নাম Glycosmis pentaphylla।
আধছুটি শুধু দাতন হিসাবে নয় জন্ডিস ও লিভরের অসুখের ভাল কাজ করে। প্রাচীনকাল থেকে আম পাকাতে ও আধছুটির পাতা ব্যবহার করা হয়। মাছখোলার শিবতলার বাসিন্দা শামছুল ইসলাম বলেন, “আধছুটি গাছের ডাল দাতন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া আমরা আম পাকাতে আধছুটি গাছের পাতা দিয়ে জাগ দেই।” সাতক্ষীরা মসলা ভান্ডারের হেকিম মো. আবুল কাশেম বলেন, “আধছুটি গাছের পাতার রস, লিভারের সমস্যা, কাশি ও বাত ব্যাথার উপশম করে। রক্তশূন্যতা ও জন্ডিসের কার্যকারী ভুমিকা রাখে আধছুটি পাতার রস।”