পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঔষধি গাছ লাগাই
নেত্রকোনা থেকে রুখসানা রুমী
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমূল ইউনিয়নের একটি গ্রাম পাড়াদূর্গাপুর। গ্রামের যুবকরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এলাকার পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলেছে ‘প্রকৃতি ও জীবন’ নামে একটি যুব সংগঠন। সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৩০ জন।
সংগঠনটি এলাকার পরিবেশ সুরক্ষা, গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সমৃদ্ধকরণ, পুষ্টির চাহিদা পুরণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা এবং এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করে আসছে বিগত প্রায় চার বছর যাবত। সংগঠনের সকল সদস্য তাদের অন্তরে ধারণ করে যে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সহযোগী মনোভাব, যত্নশীলতা ও সৃজনশীলতার মতো গুণাবলীগুলো সমৃদ্ধ হয়।
সংগঠনের বাৎসরিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এলাকায় যেসব প্রজাতির গাছের সংখ্যা কম (ফল/ঔষধি/বনজ), সেসব গাছের চারা প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ বাড়ির চারপাশে রোপণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য সকল সদস্য মাসিক সভায় আলোচনা করে নিজ নিজ বাড়িতে চাষকৃত ও অচাষকৃত গাছের তালিকা তৈরি করে। যেসব গাছ সদস্যদের বাড়ি নেই, সেব গাছের চারা তারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রত্যেক সদস্য ১০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের সদস্যরা চাঁদা তোলে যে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে তার সাথে বারসিক এর সহযোগিতা নিয়ে গ্রামের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই ধারে ৭০টি নিমের চারা এবং প্রত্যেক সদস্য নিজ নিজ বাড়ির পাশে ২টি করে মোট ৬০টি স্থানীয় জাতের ফলের চারা রোপণ করেছে।
পাড়াদূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম যুব সংগঠনের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “ভবিষ্যত প্রজন্মের শৈশব সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গাছ। গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ লাগাও পরিবেশ বাঁচাও।” তিনি সকল শিক্ষার্থী ও যুবকদের গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, “তোমরাই পার গাছ লাগিয়ে পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে।”
বর্তমান সমাজে যুব প্রজন্ম দিন দিন প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। মোবাইল প্রযুক্তির রাহুল গ্রাসে যুব ও কিশোর প্রজন্ম ফেইস বুক ও ইন্টারনেট দুনিয়ার গভীরে তাদের সকল কার্যক্রম বন্দী হয়ে পড়ছে। কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে তাদের কোন খেয়াল রাখার সময় নেই। যেখানে দেশের সকল এলাকার যুব ও কিশোর প্রজন্ম মোবাইল প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত সেখানে নোয়াদিয়া গ্রামের ‘প্রকৃতি ও জীবন’ যুব সংগঠনের পরিবেশ সুরক্ষায় এমন মহতি উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার।
এই সংগঠনের যুব ও কিশোরদের ন্যায় দেশের সকল এলাকার যুব ও কিশোররাও যদি নিজ নিজ বসতভিটা, পরিত্যাক্ত মাঠ, রাস্তার পাড়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রঙ্গনে স্থানীয় প্রজাতির বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ রোপণে এগিয়ে আসে তাহলেই স্থানীয় প্রজতিগুলো রক্ষা পাবে এবং প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি পাবে। সুনিশ্চিত হবে মানুষসহ সকল প্রাণীকূলের নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য নিরাপত্তা।