সাম্প্রতিক পোস্ট

“আজীবন মানুষের সেবা করতে চাই” : ফওজিয়া নাসরিন

নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়

ফওজিয়া নাসরিন। নেত্রকোনা আটপাড়া উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে বাস করেন। ১৯৭৬ সালের ১৫ই অক্টোবর নেত্রকোণা জেলার বালি গ্রামে তার জন্ম হয়। এস.এস.সি পাশ করার পর বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। ছোটবেলা থেকেই সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করে আসছেন। তাই বিয়ের পর যখন সুযোগ এলো মানুষের জন্য কিছু করার তখন আর সেই সুযোগটা হাতছাড়া করেননি। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী অনেক পুরুষ যা করতে পারেননি, স্বল্প শিক্ষিত নারী হয়ে তিনি সমাজ এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন নিরন্তর। এলাকার সব মানুষের কাছে তিনি তিনি ‘নাসরিন আপা’ নামে পরিচিত। মানুষকে সেবা করার ব্রত নিয়ে তিনি একাধারে মানবাধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি এবং বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম, শারীরিরক ও মানসিক শাস্তি বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তেমনিভাবে তিনি আই.এফ.এম কৃষক মাঠ স্কুলের ট্রেইনার হিসেবে আটপাড়া উপজেলা পর্যায়ে প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও রাজনীতিতে তিনি একজন সক্রিয় মুখ।

Fozia

এসব প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনে কাজ করার মাধ্যমে তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের দেনমোহর আদায়, ভরণ পোষণের ব্যবস্থা, ন্যায় বিচার, দরিদ্রদের আইনি সহযোগিতা পাইয়ে দেন। প্রত্যেকটি সংগঠনে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর এ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুরষ্কৃতও হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ কাজ করে আমি হয়তো অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হতে পারি না, কিন্তু যথেষ্ট সম্মান পাই। আমার সহযোগিতায় একজন নারী যখন তার স্বামীর ঘরে ফিরে যায় বা ভরণপোষণ পেয়ে শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে তখন মনে এক ধরণের সুখ আসে।” তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি মানুষেরই তো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে; আছে নিজের পছন্দ অনুসারে জীবন কাটানোর ইচ্ছা। যে কন্যা শিশুটির বিয়ে বন্ধ করে দেই সে যখন এসে আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরে তখন অন্তর থেকে তার জন্য দোয়া করি। কারো উপকার করতে পারলে আমার ভেতরে আনন্দ ও প্রশান্তি অনুভব করি। আমি আজীবন মানুষের সেবা করতে যেতে চাই”। ফওজিয়া নাসরিন বলেন, “নারীদের পদে পদে বাধা। বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে, বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে। আর যদি কেউ চাকরি করেন তবে সেখানে সহকর্মীদের কাছ থেকেও নানা ধরণের বাধা আসে। অথচ নারী ও পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। সব কাজে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেই আমাদের দেশ সুখী, সমৃদ্ধ দেশ হবে”।

ফওজিয়া নাসরিন প্রায় ২৫ বছর যাবৎ এসব সামাজিক কর্মকা-ে যুক্ত আছেন। তার অভিজ্ঞতা ও মেধা দিয়ে তিনি নিজ অঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত। তিনি যে কোন সভায় চমৎকারভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারেন। তার কথা বলার অসাধারণ কৌশল। সকলকে বিমোহিত করতে পারেন। অনেক বাধা পেরিয়ে তিনি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছেন। দৃঢ় মনোবল আর মানুষের জন্য ভালোবাসায় তাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তাই তো তিনি বলতে পেরেছেন, “একজন নারী যদি ইচ্ছা করে সে প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন কোন বাধাই তাকে আটকাতে পারেনা। আমার স্বামীও একসময় আমাকে এই কাজ করতে নিষেধ করতো। আমি ঝগড়া না করে তাকে বোঝাতাম। তিনি বুঝতে পেরেছেন। তাই এখন তিনি আমার সকল কাজে সহযোগিতা করেন”।

ফওজিয়া নাসরিনের মতো সমাজে অনেক নারীই আছেন, যারা মানুষের কল্যাণে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব নারীদের দেখে আরও নারী এগিয়ে আসুক সমাজসেবা ও নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আসলে ছোট বেলা থেকেই মেয়ে শিশুদের আলাদা করে দেখা হয় বলেই তারা অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। মেয়ে শিশু নারী হয়ে উঠলে সে পাবে মানুষের সম্মান।

happy wheels 2