ডুবে গিয়েছে ডুবুরীরা!
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে জি. এম. শাহাদাত।।
বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জানা ছিল একটি পরিচিত নাম “ডুবুরী”। যারা পুকুর বা পুষ্কনি থেকে হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুজে পাওয়ার একটি অন্যতম ভরসার নাম। আগে প্রায় গ্রাম অঞ্চলের মেঠো পথ বেয়ে হাঁটতে দেখা যেত ডুবুরীদের। আর শোনা যেত তাদের আওয়াজ, তুলবেন নাকি পুকুর থেকে সোনা-রূপার আঁংটি, হার, নূপুর ও হারিয়ে যাওয়া জিনিস। গ্রামের বধুরাও আগ্রহী হয়ে থাকতো- কখন আসবে ডুবুরী। ডুবুরীদের আওয়াজ শোনা মাত্রই ডাক দিয়ে পুকুরে নামিয়ে দিতো তাদের। হোক না সে দামি কিবা কম দামি জিনিস।
তাদের ঘাড়ে থাকতো একটা লোহার আঁকড়া ও একটি জালি। ডুব দিয়ে লোহার আঁকড়ার মাধ্যমে কাঁদা মাটির ভিতর থেকে বের করে নিয়ে আসতো আর জালি দিয়ে পরিষ্কার করে পাওয়া যেত সেই হারিয়ে যাওয়া জিনিস। কখনো কখনো দেখা যেতো-হারানো জিনিস বাদে অন্য জিনিসও পাওয়া যাচ্ছে। সেসব জিনিসগুলো কবে হারিয়েছে তার ঠিক নেই। বাংলার কোমল নারীদের মন তো; সহজে ভুলে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তার জন্য রীতিমতো বকুনিও শুনতে হত বাড়ির পুরুষদের কাছে। তবে জিনিসগুলো পাওয়ার পর নারীদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠতো।
এগুলো দেখার জন্য পাড়ার ছেলে মেয়ে ও গ্রামের বধুরা আগ্রহী হয়ে পুকুরপাড়ে ভীড় জমাতো আর আনন্দ উপভোগ করত। তার জন্য বাবা মায়ের কাছে গালিও শুনতে হতো- ছেলেমেয়েদের। শত গালিগালাজ আর শাসন হার মানাতো ডুবুরীর কাছ দেখে লাভ করা বিনোদন এর কাছে। হাজারো শীতের মাঝেও পানিতে ডুব দিতে হত ডুবুরীদের। দারিদ্রতা আর পেটের কাছে হার মানতো তাদের এই লড়াই। অন্যের উপকারে তাদেরকে বিলিয়ে দিতো আর সামান্য পারিশ্রমিক পেয়েই তারা খুশি হতো।
কিন্তু আজ কোথায় হারিয়ে গিয়েছে তারা? তারা কি আজ জীবিত নেই? নাকি তাদের সেই দারিদ্রতা নেই? নাকি গ্রামের নারীদের সোনা-গহনা আর পুকুরে হারায় না? নাকি নারীদের পুকুরে গোসল করাই কমে গেছে? কেননা এখন আর এই ডুবুরীদের খুব একটা দেখা মেলে না- গ্রাম বাংলার মেঠো পথে। দুপুরে শুনতে পাওয়া যায় না তাদের হাঁক- হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে দেই। নেই একটি পুকুরকে ঘিরে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়োদের উৎসুক ভীর। ডুবুরী তোমরা কোথায় হারিয়ে গেল? তোমাদের জন্য আজও বাংলার গ্রামের নারীরা রয়েছে অপেক্ষায়!!!!!
***ছবিগুলো ডেইলি স্টার এর অনলাইনে ভার্সনে প্রকাশিত Diving for Living ডকুমেন্টারি থেকে সংগৃহীত। বিস্তারিতঃ http://www.thedailystar.net/frontpage/diving-living-1444705