অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ নিম্ন আয়ের মানুষ
ঢাকা থেকে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
প্রতিদিনকার মত খুব বেশি শিশুরা খেলছেনা বালুর মাঠটায়। একটা ছেলে ঘুড়ি উড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু গোমট আবহাওয়া আর বাতাসের অভাবে তার ঘুড়িটা উড়ছে না। সে বিরক্ত হয়ে ঘুড়িটা নাটাইয়ে গুটিয়ে নিচ্ছে। মাঠটা পেরোতেই সোনা মিয়ার টেক যেখানে আমরা প্রায় প্রতিদিন যাই। তাদের সাথে গল্প করি, তাদের অভাব আর অভিযোগ শুনি। শুরুতেই ঝুমুর আপার ঘরটিতে সে বাচ্চাদের নিয়ে শুয়ে আছে। প্রচন্ড গরমে তার বাচ্চারা অসুস্থ। ছোটছেলেটা দুইদিন ধরে পাতলা পায়খানা আর বমি। আজ একটু কমলেও শরীর খুবই দুর্বল হয়ে আছে। ঘরে বসে ভাত খাচ্ছিলো হুসেন ভাই। যিনি পেশায় একজন ট্রাক ড্রাইভার। হোসেন ভাই বললো, ‘ভাই গরমে তো মরার দশা হইয়া গেছে আর আইজকা কামেও যাই নাইক্কা।’
বস্তির এই অংশটায় অধিকাংশ ঘরেই বাচ্চাগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কারো জ্বর, কারো কাশি আবার কারো পাতলা পায়খানা। তাদের প্রশ্ন করলে অধিকাংশই বলেন, ‘সকল ঘরের এই গরমে অসুস্থ মানুষজন।’ একজন আবার বললো, তাও ভালো আপনারা ডাক্তার দেখাইয়া কিছু ঔষধ দিছিলেন, তাই খাইয়া আছি কোন রকম।’
রাতের বেলা গরমে ঘরে ঘুমানোই কঠিন। সারারাত কারেন্ট আসা যাওয়া করে। বাচ্চারা ঘুমাতে পারেনা, কান্নাকাটি করে কাটায়। এরকম গরম তারা ঢাকা শহরে এর আগে কখনই দেখেনি বলে জানান। স্কুল ছাত্রী নিপা বললো, ‘তারা নিয়মিত স্কুলের পড়াটাও পড়তে পারছে না গরমের কারণে। স্কুলের অনেকে গরমের কারণে স্কুলে আসছে না। কবির নামের একজন রিকসা চালককে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, ভাই এই গরমে রিকসা বাওন খুবই কঠিন। কিছুক্ষণ চালাইলে মাথা ঘুরায়। একবেলা চালাইলে আরেক বেলা জিরান লাগে।’
বস্তির ভেতরে শাহনাজ আপাদের ঘরের বাইরেও দেখলাম অসুস্থ অনেককে। একই চিত্র আসমানী ও আয়েশা আপাদের ঘরে। সকলেই এই গরমে অতিষ্ট। তারা বলে এই গরম থেকে বাঁচার উপায় কি। দেশ গ্রামে তো এতো গরম আছিল না। নদীভাঙনে, বন্যায় ঢাকা শহরে আইসা বস্তিতে উঠছি আর এখানেও এই গরম , এই পানি উইঠা যায়, এই বস্তি ভাইঙ্গা দেয় এমন জীবন কে চায়?
বস্তিতে যত জনের সাথে কথা বললাম সকলেই জানায় এই গরমে কেউ ঠিক মতো আয় রোজগার করতে পারতেছে না। বাসা বাড়ির কাজে যাওয়ায় কমে গেছে। কয়েকজনকে পেলাম যাদের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। বড় সমস্যা হলো তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
এই বস্তিবাসীরা এই গরমের আঘাত থেকে বাঁচতে চায়। তারা চায় বৃষ্টি হোক, গরম কমুক। মানুষ একটু শান্তিতে বসবাস করুক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এই মানুষগুলো কি জানে এই গরমের প্রকৃত কারণ?
তারা কারণ জানতে না চাইলেও তারা চায় এই অতিষ্ঠ গরম ও তাপদাহ থেকে মুক্তি।