উদ্যোগী না হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে চম্পা মল্লিক
ধূমঘাট ঈশ^রীপুর ইউনিয়নের কেওড়াতলী গ্রামে বাড়ি মুসলিমা খাতুনের (৩০)। স্বামী আবেদ আলী গাজী (৩৬)। পেশায় একজন দিনমজুর। এক ছেলে (৮)ও এক মেয়ে (১০) এই নিয়েই তাদের পরিবার। স্বামীর সামান্য আয়ের উপর দিয়েই খুব টানাটানি করে চলতো ছেলে মেয়ের পড়াশুনা ও সংসারের যাবতীয় খরচ। মুসলিমা খাতুনও এটা মেনে নিয়েছিলেন যে, এভাবেই হয়তো সারাটিজীবন চলবে তার সংসার। হঠাৎ একদিন তিনি জানতে পারেন, তার বাড়ির কাছাকাছি কিছু নারীরা একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন তৈরি করতে চাইছে। তিনিও তাদের সাথে সাথে সেখানে যান এবং তাদের সাথে যুক্ত হতে চেষ্টা করেন । এরপর তিনি তাদের সাথে সব আলোচনাগুলোতে অংশগ্রহণ করেন এবং জানতে পারেন বারসিক কিছু উদ্যোগী নারীদেরকে নিয়ে এই দল গঠনে সহায়তা করছে। তিনি ও এই দলের সদস্য হয়ে যান। এরপর থেকে তিনি প্রত্যেকটি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং এই আলোচনা থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ধারণা লাভ করতে থাকেন।
এরকমই একটি আলোচনার মধ্যে থেকে তিনি জেনেছিলেন, সংসারে শুধু স্বামীর উপরই নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে সব নারীদের, এমনটা ঠিক নয়। বরং কিভাবে নিজে ও কিছু করা যায় এবং তা থেকে অর্থ উপার্জন করে স্বামীকে সহযোগিতার মাধ্যমে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা যায়। তার ভিটাটি অনেক ছোট, তবুও এই ধারণাটি পাওয়ার পরেই তিনি সর্বপ্রথম বারসিক’র নিকট থেকে কিছু সবজি বীজ সহায়তা নিয়ে লাগান। আগে তিনি সম্পূর্ণভাবে বাজারের উপর নির্ভরশীল ছিলেন, কিন্তু এই সবজি লাগানোর পর তিনি কিছুটা হলেও পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পেরেছিলেন, সাথে সাথে মনের অনেক ভালোলাগাও তৈরি হয়েছিলো তার।
এই ভালোলাগা থেকেই তিনি আরো ভাবলেন কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে স্বমীর সাধ্যের মধ্যে থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা নিয়ে তিনি নিজ গ্রাম থেকে কিছু স্থানীয় জাতের হাঁস-মুরগির বাচ্চা ক্রয় করে পালন করতে থাকেন। এগুলো খুব যতেœর সাথে লালন পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে এগুলো থেকে তিনি পরিবারের সবার পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাচ্চাদের পড়াশুনার খরচটি বহন করতে থাকেন। তিনি তার সংসারটিকে আরো ভালোভাবে চালাতে কি করা যায় সেসব বিষয়ে প্রায়ই তার সংগঠনের সভানেত্রী রেহানা পারভীনকে জানাতেন। এরপর একদিন রেহানা পারভীন তার সংগঠনের কিছু অসহায় নারীদেরকে অন্য একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে কিছু আর্থিক সহায়তার জন্য যোগাযোগ করিয়ে দেন। এর মধ্যে মুসলিমা খাতুনও ছিলেন। এখান থেকে তিনি যে সহায়তা পেয়েছিলেন, তা দিয়ে তিনি তিনটি ছাগল ক্রয় করেছিলেন। এই তিনটি ছাগল থেকেই তিনি বংশবৃদ্ধি করতে থাকলেন।
ছাগল, হাঁস, মুরগি ও কবুতরসহ একটির পর একটি তিনি এভাবে বাড়াতে থাকেন। বর্তমানে তিনি তার পরিবারের বড় খরচটিও বহন করতে সমর্থ হয়েছেন। এমনকি তিনি তার মেয়ের স্বর্ণের কানের দুল ও নাকের ফুল ও তৈরি করছেন সম্পূর্ণ নিজের উপার্জিত অর্থ থেকে। এখন তিনি বিশ^াস করেন শুধু অর্থ দিয়ে নয়; আবার সাংসারিক কাজকর্ম দিয়েই নয়, উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূখী কাজের সন্ধান করা ও বিভিন্ন আলোচনা এবং পরামর্শের মাধ্যমে অনেক কিছু করা যায়। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন উদ্যোগী নারী অবশ্যই একটি সংসারে পুরুষের সহযোগী হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘একটি সংসারের উন্নতির জন্য নারী এবং পুরুষ উভয়েরই কিছু করা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষটির উদ্যোগী মনোভাব থাকা। কারণ উদ্যোগী না হলে কখনোই উন্নয়ন সম্ভব নয়।’