একটি গাছেই অনেক কিছু

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছের মতো একটি গাছ হলেই অনেক কিছু হতে পারে। সেটি হতে পারে কোন কাঠ বা ফলজ-বনজ কিংবা কোন সবজি জাতীয় গাছ। সেটি যদি সঠিক স্থানে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে চাষাবাদ করা যায় তাহলেই সেটি থেকে ভালো ফলন হবে। তেমনি উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা নিজেদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে যার যেমন বসতভিটার পরিমাণ সেখানে তেমনভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। তারই এক দৃষ্টান্ত উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ধানখালী গ্রামের কৃষাণী খুকুমনি রানী মন্ডল। বসতভিটায় বারোমাস নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ করেন তিনি।

খুকুমনি রানী প্রতিনিয়ত তারই বসতভিটার সঠিক ব্যবহার করে চলেছেন। যেখানে যেমন ফসল হয় সেখানে তেমনিভাবে ফসল চাষাবাদ করেন। ছায়াযুক্ত স্থানে আদা, হলুদ, কচু, ওল, চুবড়ি আলু, মেটে আলু লাগান আবার রোদের স্থানে মৌসুমভিত্তিক মিষ্টিকুড়া, লাউ, কশি, খিরাই, বেগুন, ওলকপি, টমেটো, বীটকপি, পুঁইশাক, পাতাকপি, ফুলকপি, শিম, আলু, চালকুমড়া, তরুল, ঝিঙা, ঢেড়স, বরবটি, মেনকা ইত্যাদি চাষ করেন। আবার যেখানে পানির সমস্যা বিশেষ করে দূর থেকে পানি টেনে আনতে হয় বা যেখানে বাড়ির চাল ও তরকারি ধোওয়া পানিকে ব্যবহার করা যায় তেমন স্থানে লতানো সবজি লাউ ও মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া লাগিয়ে ঘরের চালে উঠিয়ে দেন। এভাবে সঠিক পরিকল্পনা করে খুকুমনি রানী ফসল চাষাবাদ করেন।


এ বিষযে খুকুমনি রানী বলেন, ‘যার যেমন ভিটা সেই ভিটায় তেমনভাবে তৈরি করে ফসল উৎপাদন করতে হবে। আমার জমি বলতে ৪০ শতক বসতভিটা ও ২ বিঘা ধানের জমি। আবার বসতভিটার মধ্যে ৭ কাঠার মতো একটি পুকুর আছে। সেখানে আমি মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করে সবজি চাষাবাদ করি। আমি গত বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য সবজির সাথে একটি লাউ গাছ ও কয়েকটি মিষ্টি কুমড়া লাগাই। কিন্তু বর্ষার সময় মিষ্টি কুমড়া গাছে প্রায় ৩৫টি মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয় এবং একটি লাউ গাছে এখনো পর্যন্ত প্রায ১৫০ টির বেশি লাউ পেয়েছি। বর্তমানে গাছে ছোট বড় মিলে প্রায় ৭০-৮০টি লাউ আছে। একটি গাছ থেকে অনেক কিছু সম্ভব। সেটি শুধু উপযুক্ত স্থানে লাগিয়ে পরিচর্যা নিলেই হয়। একটি গাছেই অনেক কিছু।’


খুকুমনি রানী আরো বলেন, ‘ আমার বাড়িটি একটি শতবাড়ি। এখানে আমি জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার চেষ্টা করি। আমার সবজি চাষের ও আগ্রহ উদ্দীপনা দেখে বিগত সময়ে বারসিক থেকে জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য উপকরণ সহায়তা করে। এছাড়াও বাড়িতে গরু থাকায জৈব সার সবজি চাষের পাশাপাশি ধান ক্ষেত ও মাছ চাষেও ব্যবহার করি। বাড়িতে সবজির সাথে বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছও আছে। প্রতি মৌসুমে এসকল সবজি পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বিক্রি করে ভালোই লাভবান হচ্ছি এবং পাড়া প্রতিবেশীদের মাঝে বিনামূল্যে সবজিও সহায়তা করি।’

তিনি জানান, তাঁর বাড়িটি একটি সফল কৃষিবাড়ি হওয়াতে এখানে সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোকজন আসেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে নানানভাবে সহায়তা করে। এছাড়াও প্রতি মৌসুমের জন্য বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ রাখেন এবং অন্যদের মাঝে বীজ বিতরণ করেন।

Exif_JPEG_420

উপকূলীয় এলাকা প্রতিনিয়ত দুর্যোগের শিকার। এ দুর্যোগ মাথায রেখে নানান ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় উপকূলবাসীর। আর এ পদক্ষেপের মধ্যে উপকূলবাসী কোনসময় সফল হচ্ছে আবার কোন সময় হচ্ছে না। দুর্যোগে ফসলের মধ্যে সবজি ফসলের ক্ষতির পরিমাণ থাকে বেশি। তাই সবসময় সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন হয়।

happy wheels 2

Comments