নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে বাবলু জোয়ারদার ও মফিজুর রহমান
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালিত হয়েছে। এ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে Rural women and girls building climate resilience -এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলি গ্রামে বারসিক’র সহায়তায় পিকে যুব সংঘের আয়োজনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় মীনা রানী মন্ডল বলেন, ‘আমরা নারীরা মাঠে ঘাটে কাজ করি, উৎপাদন করি, পুরুষের চেয়েও বেশি কাজ করি কিন্তু আমাদেরকে কোন সুযোগ দেওয়া হয় না। সুযোগ সুবিধা পেলে আমরা গ্রামীণ নারীরাও কৃষি ও উৎপাদনে আরো বেশি অবদান রাখতে পারবো।’ মালতি রানী মন্ডল বলেন, ‘গ্রামের নারীদের কাজ বেশি। পুরুষদের সাথে সমানতালে কাজ করি তারপরও আমাদের মজুরি পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক। আমরা গ্রামীণ নারীরা ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমাই, আমদের পায়ের কাদা শুকায় না।এত কাজ করি তারপরও আমাদের কোন মূল্য দেওয়া হয় না।’
নারীরা সূর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রোদ বৃষ্টি ঝড়ে কাজ করেও মজুরি পান পুরুষের অর্ধেক। নারীদের মতে অধিকাংশ নারী শ্রমিকের কাজের জন্য কোন সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না। কৃষিকাজ ও অন্যান্য কাজে নিয়োজিত নারীদের দাবি নারীকে কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
গৃহস্থালী কাজসহ গ্রামীণ নারীরা কৃষি কাজের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত। গৃহস্থালী কাজ ও নারীদের কৃষিকাজে অবদানের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে নারীর প্রতি যে বৈষম্য ও নির্যাতন হয় তা কমে আসবে। তাই নারীর কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা জরুরি।
উল্লেখ্য, গ্রামীণ নারীদের ভূমিকা ও অবদানকে যথাযথ স্বীকৃতি ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য আন্দোলন চলছে বহুদিন ধরে। সমাজ ও পরিবারের অগ্রগতিতে গ্রামীণ নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই নারী। তার মধ্যে ৮৬ ভাগ নারী গ্রামে বাস করে। গ্রামীণ নারী দিনের মোট সময়ের ৫০ ভাগ সময় ব্যয় করে কৃষি ও গৃহস্থালীর কাজে। কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের ভূমিকার প্রতি স্বীকৃতিতে দিবসটি পালন করা হয়। নারীদের হিসাব মতে কৃষি খাতের ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজে নারীর অংশগ্রহন থাকলেও কৃষিতে নারীর স্বীকৃতি নেই। বীজ সংরক্ষন থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করনে গ্রামীন নারীর বেশীর ভাগ অংশগ্রহন থাকলেও তাদের অবদানকে স্বীকৃতি ও মুল্যায়ন করা হয় না। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকেও গ্রামীন নারীরা বঞ্চিত।