ছাদ কৃষি: নিরাপদ খাদ্যের উৎস
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র গণকপাড়া এলাকায় তিনতলা ভবন ছাদের অধিকাংশ জায়গায় ছাদ কৃষির বিশাল সম্ভার গড়ে তুলেছেন কানন প্রামাণিক (৫৫)। শাক সবজি, ফল-ফুল ও ঔষধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে কানন প্রামাণিকের ছাদ কৃষির এই আয়োজন।
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কৃষক পরিবারের সন্তান হবার সুবাদে কৃষির সাথে ঘনিষ্ঠ ছোটবেলা থেকেই। বাবা-কাকার কাছ থেকে পেয়েছেন কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা। বিয়ের পর স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী থাকায় ষ্টাফ কোয়ার্টারে কেটেছে জীবনের বেশির ভাগ সময়। সেখানে বাগানে সবজি ও ফল-ফুলের গাছ লাগানোর চেষ্টা বরাবরই ছিল। সর্বশেষ রাজশাহী শহরে ১৪ বছর আগে যখন এই বাড়িটি করা হয় তখন ছাদ কৃষি করার পরিকল্পনা থেকেই ছাদের উপরে লম্বা সারি করে টব সাদৃশ্য ঢালাই করে তৈরি করা হয় গণক পাড়ায় এই বাড়িটি।
ছাদে লাগানো উপযোগী সকল প্রকার সবজি লাগানোর চেষ্টা করেন কানন প্রামাণিক। বছরব্যাপী যেসব সবজি তিনি ইতিপূর্বে করেছেন সেগুলো মধ্যে ছিল লাউ, পুইশাক, টমেটো, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, করলা, লালশাক, চালকুমড়া, ২ রকমের শিম, মরিচ ও ধনিয়াপাতা। সরোজমিনে ঘুরে এই সময়ের তার ছাদ বাগানো দেখা যায় পুইশাক, বেগুন, মরিচ, টমেটো, শিম, লেবু, শরবতি লেবু, ডালিম গাছ। ফুল গাছের মধ্যে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, রাধাচুড়া, গোরচুড়া, কুন্দলতা, এ্যালোভেরা, বিভিন্ন রকমের ক্যাকটাস, পাথরকুচি, তুলসি ও পাতাবাহারের গাছ।
৮ বছর আগে স্বামী খগেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের মৃত্যুর পর দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে প্রিয় কাজ ছাদ বাগানের পরিচর্যা করে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ছোট বেলা থেকেই শখের বসে ও ভেজাল মুক্ত তরকারি খাবার তাগিদ থেকেই ছাদকৃষিতে সময় দেয়া। ছাদ কৃষির ক্ষেত্রে মাটিকে নিরাপদ খাবার দিলে মাটিও নিরাপদ খাবার আপনাকে দিবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গতবার আমার বাগান থেকে ৩২টি লাউ পেয়েছি, এবারও অনেকগুলো চাল কুমড়া পেয়েছি। কিছু কাঁচা অবস্থায় খেয়েছি কিছু বড়ি করার জন্য পুড় আকারে রেখেছি, সারাবছর মরিচ কেনা লাগেনা, পুইশাক মাচা করে দিই বড় জায়গাজুড়ে হয়।’
কানন প্রামাণিকের ছাদ কৃষিতে সহায়তা করেন তার ছেলে পার্থেন্দু প্রামাণিক। তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে সার নিয়ে আসা, বাড়িতে সবজি থেকে সবজি সার তৈরি, কীটনাশক তৈরি ও ব্যবহারে সহায়তা করেন। ছাদ কৃষি থেকে প্রাপ্ত কোন সবজি বা ফল বিক্রি করেন না কানন প্রামাণিক। তিনি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিকে দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পার্থেন্দু প্রামাণিক জানান, ‘আমার পরিবারে মাসহ অন্যান্য সদস্যদের নিরাপদ খাদ্যের যোগান দেন আমাদের এই ছাদ কৃষি। এছাড়া আমাদের প্রতিদিনের পুজোর ফুলের যোগানের বড় অংশ আসে ছাদ কৃষি থেকে।’
শহরের প্রাণকেন্দ্রে কানন প্রামাণিকের ছাদ কৃষির উদ্যোগ অন্যান্যদের ছাদ কৃষি করার ক্ষেত্রে রোল মডেল এর ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে তিনি তাঁর বাড়িতে আসা আগ্রহী আত্মীয় স্বজনদের ছাদ কৃষি করতে আহবান জানান। সুস্থ থাকতে রাসায়নিক সার ও বিষবিহীন খাবার গ্রহণে ছাদ কৃষির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষা ও নিরাপদ খাবার গ্রহণের মাত্রা।