বয়সকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া নারী মমতা রানী দাস

সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে আছিয়া আক্তার
‘‘কথায় আছে পুরান চাল ভাতে বাড়ে’’ কথাটা কোন কথার কথা নয়; সত্যি কথা। আমরা বয়স্কদের পুরান মনে করলেও তারা আসলে পুরান নয়। তাদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, দর্শন, শারীরিক কর্মদক্ষতা সবকিছুই আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে উৎসাহিত করে। এমনই এক উৎসাহমনা প্রবীণ নারী মমতা রানী দাস।
সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামের নারী মমতা রানী (৮০)। স্বামী মৃত সুনিল সরকার। তাঁর স্বামী ত্রিশ বছর আগে মারা যান। তিন ছেলে এবং দু’মেয়ে। ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে নাতি-নাতনিতে বেশ ভরা তার সংসার।


এতো বয়স কিন্তু বয়সের ছাপ পড়তে দেয়নি তার কাজ কর্মে, চলাফেরায়। তাঁর সাথে হাটার প্রতিযোগিতায় কেউ পারবে না। কাজের প্রতিযোগিতায়ও কেউ পারবে না। বাড়ির আঙ্গিনায় যতœ সহকারে মরিচ, লাউ, ডাটাসহ সকল সবজি নিজে ফলান। তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে যা আনে তা তো সব বিষে ভরা, তাই নিজেই সব সবজি বুনি। গাভী পালি, বাড়ির সবাইরে ভেজাল ছাড়া দুধ খাওয়াই।’ এ বয়সে তিনি গরুর গাস কাটা, আনাসহ গরুর ঘর পরিষ্কার সব করেন নিজ হাতে। নাতি নাতনিদের ঠিক মতো খাবার খাওয়ান। তার কাজ দেখলে মনেই হয় না তার বয়স আশি। তিনি বলেন, ‘আমি মনেই করি না আমার বয়স আশি। আমি আমার কাজগুলো যৌবনকালের মতো করে করি। বয়স মনে করলে ঝিমুনি আসবে কাজে।’


তিনি আরও বলেন, ‘কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ছোটবেলা থেকে কাজ করে আসছি। আগে বাবার ঘরে এখন স্বামীর ঘরে। আমার মতো কাজ আমার ছেলের বউ, মেয়েরাও করতে পারবে না। পারবোই কেমনে যা খায় তাতেই তো বিষ। আর আমাগো সময় কোন জিনিসে সার, বিষ ছিলো না। যা খাইছি তাই শরীরে লাগছে। আমার এ বয়সে ও শরীরে কোন ব্যাথা নাই। আমার বাড়ি থেকে ধলেশ^রী নদী একটু দুরে। এখনো নদীতে গিয়ে সাঁতার কেটে গোসল করি, সবাই দেইখা হাসে। নিয়োমিত ঠাকুর পূজা দেই, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ সকল ধরনের সভায় যাই। যেটা ভালো সেটাই শিখার চেষ্টা করি।’ মমতা রানী দাস বলেন, ‘বাল্য বিবাহ নিয়ে সভা হলে সেখানে যাই, নাতি নাতনিদের বুঝায় ছোট বেলায় বিয়ে হলে কতো রকমের অসুবিধা হয়। ঠিক মতো পড়তে বলি। তাদের বলি, লেখা পড়া করলে নিজের ভালোটা বুইজা চলতে পারবা। নাতি নাতনিদের সাথে গল্প করি, গল্প করতে ভালো লাগে। কিন্তু তারা তো খালি ফোন টিপে, কি আছে এই ফোনে কে জানে? এতো ফোন টিপলে চোখ নষ্ট হইবো তা বলি।’

happy wheels 2

Comments