হাফিজা খাতুনের কৃষি উদ্যোগ

সাতক্ষীরা থেকে মুকুন্দ কুমার ঘোষ
প্রাচীন যুগ থেকে নারীদের হাতে বোনা বীজ দিয়ে চাষাবাদের প্রচলন হয়েছে শুরু হয়। এরপর থেকে মানুষ পশুপালন সভ্যতা থেকে কৃষি সভ্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছে এবং আধুিনক কৃষির প্রচলন শুরু হয়েছে। সেখানে কৃষিক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা কতটুকু তা সহজেই জানা যায়। গ্রাম বাংলার নারীদের কাছেও অনেক কাজের মধ্যে কৃষিই গুরুত্বপূর্ণ। বীজ সংরক্ষণ ও বপন থেকে শুরু করে, চারা রোপণ, সেচ, ফসল উৎপাদন এমনকি বিপণনেও নারীরা যৌথভাবে ভূমিকা পালন করে থাকেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন কৃষি ক্ষেত্রে। তেমনই একজন উদ্যোগী নারী হাফিজা খাতুন। পারিবারিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে স্বামীর পাশাপাশি নিজের বসতভিটার ১০ শতক জায়গাতে সবজি চাষ করছেন হাফিজা খাতুন। নিজের চাষ করা সবজি থেকে নিজের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে পারিবারিক কিছু খরচ ও সঞ্চয় করতে পারেন-এমনটাই জানালেন হাফিজা খাতুন।

সাতক্ষীরার জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের কোলঘেঁষা ইউনিয়ন গাবুরাতে বাস হাফিজা খাতুনের। হাফিজা খাতুনের (৫০) এর বিবাহ হয়েছিলো ১২ বছর বয়সে। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে বেশিদূর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। হাফিজা খাতুনের স্বামী আব্দুল হামিদ (৬৫) বিশেষ সক্ষম ব্যক্তি। পরিবারে হাল ধরতে তিনিও খুব বেশি পড়ার সুযোগ পাননি। আব্দুল হামিদ বয়সের কারণে ও বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না। হাফিজা খাতুন তিন পুত্র সন্তানের জননী। বড় ছেলে আনিসুর রহমান (৩৮) মেঝো ছেলে হারুন (৩৫) ছোট ছেলে মোখলেছুর রহমান (৩২)। ছেলেরা বিয়ে করে আলাদাভাবেই সংসার করছেন।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে নেটর্জ পাটনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত সংগঠন বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে ১০নং সোরা গ্রামের রায়মঙ্গল দলে যুক্ত হয় হাফিজা খাতুন। পরিবার উন্নয়ন পরিকল্পনায় ছাগল নিলে পরিবারের আয় বাড়বে উল্লেখ করে হাফিজা খাতুন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে সহায়তা হিসেবে তিনি তিনটি ছাগল, দুইটি গাছের চারা, সাত প্রকারের বীজ ও পাঁচটি হাঁস পান। হাফিজা খাতুন নিজের বসতভিটায় বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ করে নিজের পারিবারিক খরচ মিটিয়ে রায়মঙ্গল দলে সঞ্চয় জমা করেন কিছু টাকা।

হাফিজা খাতুনের কাছে কৃষিবাড়ি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বারসিকের থেকে জলবায়ু সহনশীল কৃষি চর্চা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে এবং নিয়মিত মিটিং থেকে লবণ সহনশীল সবজি চাষ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরে সবজি চাষ করে সফল আমি। হাফিজা খাতুন বলেন, ‘আমার বসতভিটার সবজিতে সার হিসাবে গর্ত কম্পোস্ট ব্যবহার করি। এর ফলে আমার সবজি উৎপাদনে পানি খরচ কম হয় এবং বালাইনাশক হিসাবে বিভিন্ন প্রকার জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি।’ হাফিজা খাতুনের সবজি ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার সবজি আছে যেমন- বেগুন, লালশাক, পালংশাক, রসুন, পেঁয়াজ, আমের মধু, মুলা, কফি, ঝাল, করলা, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, ইত্যাদি। ফল গাছ হিসাবে আছে নারিকেল, খেজুর, কদবেল, জামরুল, কুল, পেয়ারা, ইত্যাদি। হাফিজা খাতুন জানান, এখান থেকে পারিবারিক সবজি চাহিদা পূরণ করে বাকিগুলো বিক্রয় করে পরিবারে অন্যান্য খরচ বহন করে ও একটু একটু সঞ্চয় জমা করবেন।

হাফিজা খাতুন এ বিষয়ে জানালেন, “অসময়ে বারসিক থেকে সহায়তা পেয়ে এবং জলবায়ু সহনশীল প্রশিক্ষণ পেয়ে ও নিয়মিত মিটিং থেকে অনেক বিষয় জানতে পেরে নিজে কৃষিকাজটাকে খুব ভালোভাবে করতে পারছি। তিনি বারসিক এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

happy wheels 2

Comments