আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বরেন্দ্রের নারীরা তাদের সফলতা ও সংকটের দিকগুলো তুলে ধরলেন
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে সুলতানা খাতুন, ব্রজেন্দ্র নাথ, তহুরা খাতুন লিলি, অমৃত কুমার সরকার, শহিদুল ইসলাম
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ২০২২ উপলক্ষে দিনব্যাপী বরেন্দ্র অঞ্চল তথা রাজশাহীর পবা ও তানোর উপজেলাসহ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন জন সংগঠনের আয়োজনে এবং বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহায়ক ভূমিকায় এই অঞ্চলের নারীদের সফলতা, সম্ভাবনা এবং নারীদের আঞ্চলিক সংকট মোকাবেলায় করণীয় দিকগুলো নিয়ে আলোচনা মতবিনিময় এবং স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য ও সফল উদ্যোগের প্রদর্শনী অনৃুষ্ঠিত হয়েছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/275149929_681664222987943_1140845817785706371_n.jpg)
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর তানোর উপজেলার ছেলামপুর গ্রামের নারী উন্নয়ন সংগঠন এবং পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদের অংশগ্রহণে স্থানীয় অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সুরক্ষা, খাদ্য গুণাগুণ ও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এসব পরিচিতি তুলে ধরতে অচাষকৃত শাক লতাপাতার প্রদর্শনী এবং রান্না প্রতিযোগীতার আয়োজন করে গ্রামটির নারীগণ। এতে অংশগ্রহণ করেন তানোর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত প্রায় ৫০ জন নারী। দীর্ঘদিন থেকে তানোর উপজেলার সফল নারীগণ এই অচাষকৃত লতাপাতা এবং অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং ব্যবহারের সফলতার দিকগুলোও বিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নাজিমুদ্দিন বাবু। তিনি বলেন, ‘ব্যতিক্রম এবং অতীব প্রয়োজনীয়, খাদ্য নিরাপত্তায় ও পরিবেশ অসামান্য অবদান রাখে এই কৃড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত লতাপাতা, যা আজ অনেক নবীণরাও জানলো।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরিবার সমাজ তথা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নারীদের ভূমিকা অনেক। কিন্তু কখনও তা প্রকাশ্য আসে না পুরুষ শাসিত সমাজের কারণে।’ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ছেলামপুর গ্রামের মেম্বার মোঃ রুস্তম আলীসহ স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্ম। এ ছাড়াও দর্শনপাড়া ইউনিয়নের সুন্দলপুর গ্রামে নারীদের বীজ সংরক্ষণ এবং বীজবৈচিত্র্য সুরক্ষায় অবদান হিসেবে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন নারীগণ।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/274111040_478791043969828_5577637678914637171_n-1.jpg)
অন্যদিকে রাজশাহীর পবা উপজেলা এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে জনসংগঠন ফোরমের আয়োজনে জলবায়ু পরির্বতনে বরেন্দ্র অঞ্চলের নারীদের আঞ্চলিক সংকটগুলো সমাধানে করণীয় বিষয়ক এক সংলাপ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে পবা উপজেলার নারী সংগঠনের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন। একই সাথে বড়গাছি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধি মোসা: দুলালী বেগম (৪,৫,৬ ইউপি সদস্য), মোসা: মনিরা বেগম (৭,৮, ৯ নং সদস্য), মনিরা খাতুন ( ১,২,৩ নং মহিলা সদস্য) অংশগ্রহণ করেন। সভাপ্রধান হিসেবে ছিলেন জনসংগঠন ফোরামের উপদেষ্টা রহিমা খাতুনসহ বারসিকের কর্মকর্তা বৃন্দ। সংলাপে নারীগণ বলেন, ‘দিনে দিনে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা বেড়ে গেছে, পানির সংকট দেখা দিয়েছে, নারীদের অনেক দুর থেকে পানি আনতে হয়। এর ফলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে থাকে। একই সাথে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে আরো নানান শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।’ বরেন্দ্র অঞ্চলের নারীদের আলাদা করে স্বাস্থ্য বীমা সুবিধার দাবি জানান তারা। একই সাথে পানি সংকট মোকাবেলায় নারীবান্ধব পানি ব্যবস্থপানার দাবি জানান। রাজশাহীর বহরমপুর বস্তির নারীদের তাঁদের নিরাপদ আবাসন এবং নারীর স্বাস্থ্যগত দিকগুলোর সহযোগিতা আরো বাড়ানোর দাবি করেন। একইসাথে বস্তিতে তাঁদের পানি ও বিদ্যুতের দাবিগুলো তুলে ধরেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/274718364_672596970558049_2281196360205602250_n.jpg)
অনুষ্ঠানে নারীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের সমস্যার পাশাপাশি নানান সাফল্যে র দিকগুলো নিয়েও আলোচনা করেন। খরা মোকাবেলা করে নারীরা তাঁদের নিজের পরিবাররসহ দেশের খাদ্য উৎপাদনে অবদান রাখছেন। খরা ও স্থানীয় দুর্যোগ সহনশীল বীজ সুরক্ষা, বীজবিনিময় এবং বাড়ির পালানি জমিতে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি নিজেরা সংগঠিত হয়ে ক্ষমতায়নের দিকগুলো এগিয়ে নিয়েছেন। তাঁদের এই সফলতা এবং উদ্যোগগুলো দিনে দিনে অন্য এলাকার নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকার প্রাণবৈচিত্র্য, খাদ্যবৈচিত্র্য সুরক্ষায় নারীরা অসামান্য অবদান রাখছেন। নিজের এলাকার মধ্যে অচাষকৃত খাদ্যবৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহার বৃদ্ধিতেও নারীরা অবদান রাখছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/03/274314676_664256571556477_6255276958945309245_n.jpg)
বরেন্দ্র অঞ্চল একটি খরাপ্রবণ অঞ্চল। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাত অন্যদিকে মানুষ সুষ্ট কিছু ভুল উন্নয়নের কারণে সেখানে দিনে পানি সংকট বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পরিবার পর্যায়ে এই পানির যোগান বেশিরভাগ নারীদেরই করতে হয়। গ্রামের পর গ্রাম এবং অনেক দুর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয় নারীদেরকেই। এর ফলে নারীদের নানা শারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীদের চর্মরোগসহ নানা রোগবালাই বেড়েছে। এরপরও থেমে নাই বরেন্দ্র অঞ্চলের নারী। নানা ঘাত প্রতিঘাত আর সংকটের মধ্যে দিয়ে খাদ্য উৎপাদনসহ নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখছেন। এমনকি স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষাসহ, পরিবশে উন্নয়নে নারীদের ভূমিকাই প্রাধান্য দেখা যায়। তাই আঞ্চলিক ভিত্তিতে বরেন্দ্র অঞ্চলের নারীদের সমস্যাগুলোর সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা বলে কাম্য।