পরিশ্রমের গুণে সেলিনা বেগম আজ আত্মনির্ভরশীল
সাতক্ষীরা থেকে মনিকা রানী
নারী মানেই তো স্বামী সন্তান সংসার। কিন্তু সন্তান সুখ থাকলেও স্বামীর সংসারের সুখ হয়নি সেলিনা বেগমের। আটুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র দিনমজুরের মেয়ে সেলিনা বেগম। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে বড় মেয়ে তিনি । ২০০৮সালে এইচএসসি পাশ করার পর আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তার। বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের তিন বছর খুব ভালোই কাটছিলো সেলিনা বেগমের সংসার কিন্তু ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস সন্তান হওয়ার পর সংসারে নেমে আসে অশান্তি। স্বামীর সংসারে নানান সমস্যার কারণে তিনি অবশেষে চলে আসেন দিনমজুর দরিদ্র বাবার সংসারে।
বাবার সংসারে চলে আসার কিছুদিন পর তার স্বামীও তাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন। মাথার উপর তখন যেন আকাশ ভেঙে পড়ে! কি করবেন, কিভাবে ছেলেটাকে মানুষ করবেন সেই চিন্তায় করতে থাকেন। তবে তিনি ভেঙে পড়েননি। মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সেলিনা বেগম ছোট্ট বাচ্চাদের টিউশনি শুরু করেন। একবছর টিউশনি করানোর পর তিনি দেখলেন তার হাতে কিছু অতিরিক্ত টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে তিনি দুটো কাপড় কিনলেন। শুরু করেন হাতের কাজ।
হাতের কাজে তিনি নিজে ডিজাইন করেন। সেগুলো তিনি বিক্রি করেন নিজের পাড়ায়। হাতের কাজ ভালো দেখে গ্রামের অন্যরাও ড্রেসে কাজ করার অর্ডার দেয় তাকে। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি উঠে দাঁড়ান। এই প্রসঙ্গে সেলিনা বেগম বলেন, ‘কাজ অনুযায়ী টাকা পাই। কোন ড্রেসে যদি বেশি কাজ করতে হয় তাহলে বেশি টাকা পাওয়া যায়। আমার পরিশ্রম হয় ভালোই। তবে হাতের কাজ করে বেশ অল্পদিনেই ভালোই রোজগার হয়।’
হাতের কাজে অর্জিত টাকা দিয়ে সেলিনা বেগম হাতের কাজের পাশাপাশি শুরু করেন কসমেটিকসের ব্যবসা। গ্রামের নারীরা সবসময় বাইরে যেতে পারেন না। এজন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রসাদনীগুলোও কিনতে পারেন না। সেলিনা বেগম সেদিক চিন্তা করে প্রথমবার অল্প কিছু প্রসাধনী আনেন। প্রথমবারেই বেশ সাড়া পান তিনি। তারপর থেকেই বেশি করে প্রসাধনী আনেন এবং গ্রামের নারী ও কিশোরীরাও তার কাছ থেকেই নিত্য ব্যবহৃত জিনিস কেনে।
সেলিনা বেগম জানান, এখন আর বাবার সংসারে থাকেন না। নিজে ঘর করে ছেলেকে নিয়ে বেশ ভালো আছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে আমি একটি মুদি দোকান দেবো। আমি আমার ছেলেটাকে সুন্দর ভাবে মানুষের মত মানুষ করতে চাই।’ এভাবে নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের ফলে সেলিনা বেগম এখন আত্মনির্ভরশীল। কারও ওপর তাকে নির্ভর করতে হয় না।