মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিভিন্ন ফসল চাষ করি
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
‘আমার কৃষি কাজের হাতেখড়ি বাবা-মার কাছ থেকেই। স্বামী-স্ত্রী মিলে কৃষি চর্চা করতে করতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর তিন বছর ধরে পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও কৃষিভিত্তিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে চাষাবাদে সফলতা পেয়েছি। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গরু, ছাগল, হাঁস পালন করি এবং জমিতে জৈব সার ব্যবহার করি। বর্ষা মোকাবেলায় উঁচু ভিটায় শাকসবজি ও নিচু জমিতে কচু চাষ করি। বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ করায় নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ ও বিনিময়ের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করছি।’ উপরোক্ত বক্তব্যটি মানিক বালা বিশ্বাসের।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/শতবাড়ির-কৃষকের-বাড়িতে-শাক-সবজি-চাষ-ও-বীজ-সংরক্ষণ-আন্ধারমানিক-হরিরামপুর-মানিকগঞ্জ-771x1024.jpg)
তিনি জানান, আমি মাঠে ধান, শাকসবজি, মসলা, ডাল ও তৈলজাতীয় ফসল চাষ করি, যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। কৃষি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে জৈব কৃষি ও এগ্রোইকোলজি চর্চা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের কৃষক মানিক বালা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে স্বামী সুশীল বিশ্বাস মারা যাওয়ার পর কৃষিকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমার দুই ছেলে কৃষিকাজে সাহায্য করে। মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে জৈব সার ও বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করি। বাড়ির আঙিনায় টমেটো, লাউ, শিম, মুলা, দেশি আলু, পালংশাক, ফুলকপি, পাতাকপি, ধনিয়া, মরিচ, রসুন, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের শাকসবজি চাষ করি।’ মানিক বালা বিশ্বাস জানান, নিজের উৎপাদিত শাকসবজি দিয়েই পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটে। জমিতে সরিষা চাষ করি, যা থেকে সারা বছর তেল পান। তিনি বাড়িতে পেঁপে, আম, কাঁঠাল, জাম্বুরা, কলা, পেয়ারা, তালসহ বিভিন্ন ফল গাছ আছে, ফলে বাজার থেকে কিনতে হয় না। বর্ষাকালে ৫ মাস চকের পানি থেকে কই, শিং, পুঁটি, টেংরা, টাকি ও শৈল মাছ ধরে খান।
মানিক বালা বিশ্বাস বলেন, ‘গরু-ছাগল পালন করি, যার গোবর জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করি, এতে মাটির উর্বরতা বাড়ে। নিজে বীজ সংরক্ষণ করি ও তা জমিতে ব্যবহার করি। প্রতিবছর অন্তত ৫০ জনকে শাকসবজি ও মসলার বীজ ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করি। বাড়িতে গরু, ছাগল ও হাঁস পালন করে গোবর ও বিষ্ঠা থেকে জৈব সার তৈরি করি, ফলে রাসায়নিক সার কিনতে হয় না। গরুর দুধ ও হাঁসের ডিম পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। তিনি জানান, নিজে কৃষিকাজ করায় নিরাপদ খাদ্য পান, ফলে ঔষধের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে। কৃষি কাজ শেখার ফলে তার জীবনযাপন সহজ ও প্রাকৃতিক হয়েছে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/কৃষক-পর্যায়ে-বীজতলা-তৈরি-ও-আলোচনা-আন্ধারমানিক-হরিরামপুর-মানিকগঞ্জ-1024x771.jpg)
মানিক বালা বিশ্বাস জানান, তার চাষকৃত অতিরিক্ত শাকসবজি বাজারে বিক্রি করেন। বাড়ি থেকে দুধ ও ডিম বিক্রি করেন, যা নিজে উপার্জন করেন ও নিজের প্রয়োজনে খরচ করেন। বারসিক কৃষি কার্যক্রমকে আরও দৃশ্যমান করতে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে। কৃষকদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণে সহায়তা করা হচ্ছে।
কৃষি আবাদ, অভিজ্ঞতা ও অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখছেন মানিক বালা বিশ্বাস। মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকায় নানা ধরনের ফসলের ভালো ফলন পাচ্ছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, প্রতিবেশী এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহারের কারণে আমরা সুস্থভাবে জীবনযাপন করছি। বীজ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিনিময়ের মাধ্যমে এলাকার সবাই আমাকে মূল্যায়ন করে। গোবর সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করায় জমির মাটির গুণগত মান ভালো থাকে। পরিশ্রমের ফলে মানুষসহ সকল প্রাণী নিরাপদ খাদ্য পায় ও ভালো থাকে। কৃষি শস্য আবাদে বীজ বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।