ইটভাটার আগুনের তাপে ৫শ’ বিঘা জমির ধান পুড়ে নষ্ট
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক।।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গোকুলনগর গ্রামে ইট ভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ধান। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্তত দুইশ কৃষক। ভাটার মালিকরা দায় স্বীকার করলেও কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্তীর্ণ জমির ধান নষ্ট হওয়ায় এবার ইরির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না।
সদর উপজেলার বেতিলা-মিতোরা ইউনিয়নের গোকুলনগর, সুলন্ডি গ্রামের দুইশ কৃষক এবার ৫০০ বিঘা জমিতে ইরি ধানের আবাদ করেছেন। আর মাত্র ১৫/২০ দিনের মধ্যে পাকা ধান ঘরে তোলার আশা করছিলেন কষকরা। কিন্তু এরই মধ্যে বিস্তীর্ন ধান ক্ষেতের পাশে অবস্থিত কয়েকটি কোম্পানির বেশ কয়েকটি ইটভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে পুরো ৫০০ বিঘা জমির ধান। এতে চরম ক্ষতিতে পড়েছে কৃষকরা।
কৃষকরা জানায়, ইটভাটার নিচের অংশে আগুনের তাপ বাতাসে ছড়িয়ে ধান ক্ষেত পুড়ে গেছে। ধান চিটা হয়ে গেছে। এখন তাদের মরার দশা হয়েছে। কৃষকরা আরো জানায়, ইরি ধান বিক্রি করেই তারা সংসার চালান। এখন ধান নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। ক্ষতি পোষাতে ভাটার মালিকদের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন কৃষকরা।
আইরমারা গ্রামের কৃষক তোতা মিয়া জানান, তিনি ৭ বিঘা জমি গিরবী নিয়ে সেখানে ইরির আবাদ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। কিন্তু ইটভাটার আগুনের তাপে তার সবজমির ধান মরে গেছে। তিনি সরকারের কাছে এর ক্ষতিপূরণ চান।
সোলন্ডি গ্রামের কৃষক মোঃ ইসমত আলী বলেন, ‘শনিবাব একটি কোম্পানি ইট পোড়ানোর মৌসুম শেষে চিমনীর আগুণ নেভানোর সময় ওই এলাকার ইরি প্রজেক্টের ৫শ’ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে।’
গোকুলনগর গ্রামের কৃষক আলী আকবর জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা ফসলী জমি থেকে ইটভাটা অপসারণের কথা বলে আসছেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। তারা অবিলম্বে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ এবং আবাদী জমি থেকে ইটভাটা অপসারণের জোর দাবি জানান।
মাঠ পর্যায়ের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র সরকার বলেন,‘ইটভাটার মালিকদের একাধিকবার সর্তক করেও কোন লাভ হয়নি। প্রতিবছরই ইটভাটার আগুনের তাপে ধানের ক্ষতি হচ্ছে।’
আর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইমতিয়াজ আলম বলেন,‘ইট খোলার আগুনের তাপে প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ধান একেবারেই ক্ষতি হয়েছে। ইটখোলা মালিকদের ইতিপূর্বে একাধিকবার জানানো হয়েছিল। কিন্তু খোলা মালিকরা কোন ধরনের কর্ণপাত করেনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়া এখন আর কোন কিছুই করার নেই বলেন তিনি।
ইট ভাটার আগুনের তাপে ধান নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ভাটার মালিকরা। একটি ইটভাটার ম্যানেজার শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বসে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে গতকাল (সোমবার) দুপুরে ইটভাটার আগুনে ধান পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৫ গ্রামের কৃষক তাদের ক্ষতিপূরণ ও ফসলী জমি থেকে ইটভাটা অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন শেষে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বেলা আড়াইটার দিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে আয়োজিত মানব বন্ধনে বক্তব্য রাখেন কমরেড আজাহারুল ইসলাম, কমরেড আরশেদ আলী মাষ্টার ও মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাস মিলনসহ অনেকে।
বক্তারা বলেন,‘ইটভাটার আগুনের তাপে শুকিয়ে মরে গেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পুটাইল ও বেতিলা-মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের ৫টি গ্রামের জমির ধান। কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার কারণেও তাদের আবাদী জমি নষ্ট হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, আমি অভিযোগ পাওয়ার পর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃসিকর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’