উপকূলের সফল কৃষাণী স্বরসতী দাস
আসাদুল ইসলাম, আশাশুনি, সাতক্ষীরা
বাড়ির আঙিনায় ওলকপি, ফুলকপি, সরিষা, লাউ, বিটকপি, মূলা, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, পল্লা, ঝিঙাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ঝুলছে। আবার বাড়ির পাশে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সূর্যমূখী চাষ ও ধান চাষ করছেন। বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ করছে নিজে এবং সূর্যমূখী চাষ ও ধান চাষে স্বামীর সাথে সমান তালে কাজ করছেন, হয়ে উঠেছেন একজন পুরোদম কৃষাণী।
স্বরসতী দাস আশাশুনি উপজেলা সদরের গাছতলা গ্রামের স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। বর্তমানে কৃষি চর্চা করে পরিবারে অবদান রাখছেন। কিন্তু স্বরসতীদের এই কৃষি চর্চা সহজ ছিলো না। আইলা, সিডর, আম্পানের মত বড় বড় দুর্যোগগুলো প্রতিনিয়ত তাদেরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এসব দুর্যোগের সময় নদীর বাঁধ ভেঙে তাদের এলাকায় নোনা পানি প্রবেশ করে। এরপর থেকে ফসল চাষ তাদের কাছে স্বপ্নের মত ছিলো এবং এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কৃষিকাজ করা এসব মানুষেরা দিনমুজুরের কাজ করা ছাড়া আর কোন কাজ পেতো না। ফলে তাদের দিন চলতে খুব কষ্টে।
তবে তাদের এই কষ্ট দূর হয়েছে অনেকটাই। নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা এবং বারসিক ও নেটজ বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকল্প সহযোগিতা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এখন তারা নোনার বিরুদ্ধে গিয়ে ফসল চাষ করছেন।
স্বরসতী দাস জানান, বারসিক ও নেটজ বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকল্প থেকে পাওয়া জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রশিক্ষণ ও জৈবসার তৈরি প্রশিক্ষণ তাদের পুরনো দিনের কৃষি কাজকে নতুন করে শুরু করতে সাহস জুগিয়েছে। কিভাবে নোনা মাটিতে সবজি চাষ করতে হয়, কখন কোন সবজি চাষ করতে হয়, কিভাবে জৈব সার তৈরি করতে হয়, কিভাবে বীজ সংরক্ষণ করতে হয় এসব শেখার পর তারা নিজ বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ শুরু করেন এবং সেখানে তারা সফলও হোন।
স্বরসতী দাস জানান, বাড়িতে ওলকপি, ফুলকপি, সরিষা, লাউ, বিটকপি, মূলা, পেয়াজ, রসুন, আলু, পল্লা, ঝিঙাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করছেন। সেগুলো নিজেরা খাচ্ছেন আবার বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন। এছড়া এ বছর স্বরসতী দাস বাড়ির পাশে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করছেন এবং ৮ কাঠা জমিতে সূর্যমূখী ফুল চাষ করছেন। তার এই কাজগুলো আরো সহজ করেছে পরিবেশ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি অধিদপ্তরে যোগাযোগের ফলে। সেখান থেকে পরামর্শসহ বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছেন।
স্বরসতী দাস আরো জানান, পরিবেশ প্রকল্প থেকে ছাগল ও হাঁস, মুরগি সহযোগিতা পেয়েছিলেন। এখন তার সহযোগিতা পাওয়া ২টি ছাগল থেকে ৬টি ছাগল হয়েছে। ১০/১২টি মুরগি ও হাঁস রয়েছে। হাঁস-মুরগি থেকে পাওয়া ডিম সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন। ফলে পুষ্টির চাহিদা মিটছে।