খরা কেড়ে নিয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের হাসি

রাজশাহী থেকে উত্তম কুমার সরকার

‘একেবারেই তো বৃষ্টি কম। আবার পাতালের পানিও নেই। আমাদের টিপগুলো থেকে পানি উঠেনা, বৃষ্টির অভাবে খাল খাড়িতে পানি নেই। কোথাও যেন পানি নেই। চৈত্র্য মাসের শেষ হতে চলেছে, খরা আরো ধেয়ে আসছে। কেমন করে ফসল চাষ করবো। চিন্তায় বাঁচিনা আমরা।’ উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের কৃষক মঈন মোল্লা (৪৫)।

বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকদের ফসলের সেচের একমাত্র উপায় হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের পানি। আজ থেকে প্রায় ২০/৩০ বছর আগে বরেন্দ্র অঞ্চলের তানোর থানার ভূ-গর্ভস্থের পানির উচ্চতা ছিল ৩৫ ফুট। সেই আঙ্গিকে বরেন্দ্র ডিপগুলো গভীরতা করা হয়েছিল ৮০ ফুট। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠের পানি বরেন্দ্র অঞ্চলে এত পরিমাণ ব্যবহার করা হয়েছিল যে, যার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের পানি উচ্চতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে দেখা যায়, ডিপ টিউবওয়েলগুলোতে আগে তুলনায় অর্ধেক পানি উঠে। আর কিছু ডিপ একদম অকেজো হয়ে পড়েছে।
ইতিমধ্যে তানোর থানার মোহর ও কৃষ্ণপুর গ্রামে দুইটি ডিপটিবওয়েল নষ্ট হয়েছে। একটি ডিপ টিউবওয়েল ফসল উৎপাদন হয় প্রায় ৭০ বিঘা জমি, আরেকটিতে হয় ৮৫ বিঘা জমি।


এখন বোরো মৌসুম পানির অভাবে এই জমিগুলো পতিত রয়েছে। আনাচে-কানাচে বাড়ির মিনি মটার দিয়ে কিছু জমির ধান রোপণ করা হয়েছে। এই জমিগুলোর আওতায় যে কৃষকেরা চাষাবাদ করেন তাদের মধ্যে এমনও কৃষক আছে যারা এই জমির উৎপাদন না হলে তাদের খাবার সংকট হবে। আবার অনেক কৃষক আছে এই জমির ফসলের উপরে তাদের রুজি নির্ভরশীল।
এরকম একজন কৃষক মোহাম্মদ মইন মোল্লা (৪৫)। তার জমির পরিমাণ ৯৯ শতাংশ। পরিবারের লোকসংখ্যা ৫ জন। এই জমি থেকে যা উৎপাদন হয় এবং কামলা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। তিনি পানির অভাবে একটুও জমি ধান রোপণ করতে পারেননি। এছাড়া তিনি কামলাও দিতে পারছে না।


তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঠে অনেক ঘাস পুড়েছে। আগে আমরা এই পুকুরের পানি দিয়ে ফসল চাষ করতাম। শেষে বৃষ্টির পানি থাকতো। যদি বৃষ্টির পানি না হতো সে ক্ষেত্রে ডিপ টিউবওয়েল এর পানি ব্যবহার করতাম। পুকুরগুলো সরকারিভাবে লিজ দেওয়া হচ্ছে। ফলে সেখান থেকেও পানি তুলে চাষাবাদ করতে পারছি না।’

মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী (৫৩) বলেন, ‘এখন ডিব টিউবওয়েলগুলো এমনভাবে পরিচালনা করা হয় যাতে করে অন্যান্য ফসলও করার সুযোগ থাকছে না। ফলের ডিপ টিউবয়েল এর উপরে সকলে নির্ভরশীল।’ শ্রী সুনীল সূত্রধর (৬৭) বলেন, ‘আমরা পুকুর থেকেও পানি পাব না এবং ডিপ টিউবওয়েল নষ্ট। তাহলে জমি ধান চাষাবাদ করা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে রবি শস্য রোপণ করে যতটুক আয় তা দিয়েই সংসার চালাতে হচ্ছে।’ আবার কিছু শ্রমজীবী কৃষক রয়েছেন যারা এই জমিগুলোর উপর দিনমজুরি দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। সেরকমই একটি দিনমজুর কৃষক শ্রী নিরঞ্জন সূত্রধর (৫৫) বলেন, ‘আমি এই জমিগুলোর উপর দিনমজুরি খেটে আমার সংসার পরিচালনা করি। কিন্তু ডিব টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে কোন জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। ফলে আমাদের কাজও হচ্ছে না। অন্য কোন কর্ম করা ছাড়া আমাদের সংসার পরিচালনা করা সম্ভব নয়।’

বরেন্দ্র অঞ্চল রক্ষার ক্ষেত্রে খাল, ডোবা ,পুকুর , কৃষকদের আওতায় রাখতে হবে এবং খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে। সেই পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে হবে। কম পানি খরচ হয় এমন ফসল চাষাবাদ করতে হবে। ভূ-পৃষ্ঠের পানি যত কম পারি উত্তোলন করতে হবে। এখনো সময় আছে, পানির সুষ্ঠু ব্যবহার করি, বরেন্দ্র অঞ্চল রক্ষা করি।

happy wheels 2

Comments