সংগঠনই আলোর পথ দেখায়
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
‘সফলতা জীবনকে অগ্রগতির পথ দেখায়। সকলকে নিয়ে বাঁচার শক্তি যোগায়। মানুষের সাথে মিশে সমন্বয় করার মাধ্যমে ঐক্যের পথ সৃষ্টি হয়। সাংগঠনিক শক্তি সুদৃঢ় হয়। ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের জীবনের দুঃখ কষ্ট, মায়ামমতা আদর ভালোবাসা এবং সফলতার সমন্বয়ে আমরা ভালোভাবে বেঁচে আছি।’
উপরোক্ত এই কথাগুলো বললেন আন্ধারমানিকের আব্দুল করিম (৫৬)। তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে বাবার সাথে কৃষি কাজ ধরি। জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ২৫ বছর বয়সে কৃষি কাজের পাশাপাশি পাওয়া ট্রিলার ক্রয় করে জমি চাষ করি। একদিন জমি চাষের সময় পাওয়ার ট্রিলারে পানি দিতে গিয়ে হঠাৎ পাওয়ার ট্রিলারে ব্রেক ফেল করে পায়ের উপর উঠে যায়। তখন জীবন বেঁচে গেলেও হারাতে হয় ডান পা। তখন থেকে আমার নামের সাথে প্রতিবন্ধী কথাটি যুক্ত হয়।’
তিনি জানান, তাঁর এক পা না থাকলেও নিজে সাইকেল মেকারি শিখেন, সাইকেল মেরামতের জন্য মেকারের দোকান দেন। দিনশেষে যে টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে ভালোই চলে তাঁর। তিনি বুঝেন ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কষ্ট। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কষ্ট ও অধিকার আদায়ে হরিরামপুরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে সংগঠন তৈরি করেন। প্রতিবন্ধী সংগঠন শক্তিশালীকরণে বারসিক পরামর্শ দেয় সে অনুযায়ী কাজ করে তাদের প্রতিবন্ধী সংগঠন এখন সুসংগঠিত। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিগণ নিয়মিত বসার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে সরকারি জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জমা দেন।
এর ফলে উপজেলা পরিষদে জায়গার অংশে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের ঘর করার জন্য ৫ শতক জায়গা দেয়। সেই জায়গায় সরকারি-বেসরকরি ও উদ্যোগি ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সংগঠনের ঘর তৈরি করেন তিনি। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নিয়মিত আলোচনা সভা করে সচেতনতা সৃষ্টিতে, সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। সংগঠনের সাথে যুক্ত ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তি প্রায় ১৮৫ জনকে সরকারি সহযোগিতা হুইল চেয়ার, টাইসাইকেল, ক্যারেজ, কানের হেয়ারিং, ঘর, সেলাই মেশিন, ভাতা দেওয়া হয়।
তাছাড়াও আরো ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের উপকরণ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সামাজিকরণে প্রচার-প্রচারণা করেন। সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন। হরিরামপুরের প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ এখন সবার মুখে মুখে, ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সহায়ক প্রতিষ্ঠান।
ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে বৈষম্য, বঞ্চনা রোধে ও সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সমন্বিতভাবে তাঁরা কাজ করছেন বলে তিনি জানান।। পরিবার ও সমাজ সকল মানুষদের সচেতনতা সৃষ্টি মাধ্যমে সামাজিকীরণ ও প্রবেশাধিকারে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ‘হাতে হাত মিলিয়ে সমতালে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠনই আমাদের শক্তির উৎস।’ ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সরকারি ভাতা ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ পরবর্তীতে কাজ প্রাপ্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।