সম্ভাবনাময় সোলার পাওয়ার ইরিগেশন প্রকল্পকে গতিশীল করুন

মানিকগঞ্জ থেকে নজরুল ইসলাম

সারা দুনিয়াতে যখন জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ ফুরিয়ে আসছে, ঠিক তখনই বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থাপনার আলোচনা বিশ্ব নীতি নির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যাপক হারে। বিশেষ করে জার্মানী, চীন, সুইডেন, কোরিয়া ও ভারতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

DSC06777
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা হাজার ও প্রাণসম্পদে ভরপুর আমাদের এই প্রিয়তম দেশ। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক উৎসের ভান্ডার বিশেষত সুর্য্যের আলোর তীব্র ক্ষমতা, বাতাস, বর্জ্য, সুপেয় পানি, বৃষ্টির পানি, গবাদি পশু-হাস, মুরগির বিষ্ঠা, বায়োমাস, গাছপালা, নদী নালা, খাল-বিল ইত্যাদি। এই অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে তেমন প্রসার লাভ করতে পারছিনা। তারপরও সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০০৯ প্রণয়ন করেছে এবং সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সোলার প্যানেলের ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে আরো বিকল্প এবং অনবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার কমানের লক্ষ্যে এবং বিদ্যুত অপচয় রোধ, কার্বন নিঃসরণ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সহায়ক হিসেবে সোলার পাওয়ার অটো-ইরিগেশন, সোলার পামপিং সিস্টেম, সোলার ইরিগেশনসহ বিভিন্ন নামে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম দেশের কতিপয় স্থানে অব্যাহত আছে।

DSC02940
২০১১ সালে তারা পিডিপির মাধ্যমে সারা দেশের প্রতি জেলায় ন্যুনতম ৪টি করে সোলার ইরিগেশন প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। বিনা মূল্যে হলেও নিরাপত্তার জন্য পিডিপি গ্রাহকদের থেকে বছরে ৪০০০ টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করে। ইডকলের ভাষ্য মতে, এই পদ্ধতিতে ৩৫-৪০ বিঘা জমি আবাদ করা যাবে। কৃষকদের প্রত্যাশা ছিল এই ইরিগেশন প্রকল্প থেকে কমপক্ষে ৩০-৩৫ বিঘা জমি আবাদ করতে পারবে এবং সার্বক্ষণিক পানি সরবারহ চলবে। পরবর্তীতে দেখা গেল, পানি ডেলিভারি পাইপ ২.৫০ ইঞ্চির বেশি হলে পানি আসে না। ফলে একই মাপে পানি সরবারহ চলতে থাকে এখানে প্রত্যাশার চেয়ে পানির পরিমাণ কম হলেও গতি কম নয় এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধারে চলতে থাকবে। সমস্যা হলো ব্যাটারির ব্যবস্থা না থাকায় রাতে মেশিন চলে না। ফলে ৮-১০ বিঘার বেশি জমিতে পানি দেয়া সম্ভব হয়নি। তবুও ডিজেল চালিত মেশিনের চেয়ে হাজারগুণ জ্বালানি সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব এই ব্যবস্থা কৃষক-কৃষাণীরা আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন।

কিন্তু গত বছর থেকেই মেশিন নষ্ট হওয়াতে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। যাদের জমিতে এ পদ্ধতিতে পানি দেওয়া হতো তারা বিভিন্নভাবে অভিযোগ করছেন এবং সোলার না সারার ফলে অধৈর্য্য হয়ে ডিজেল চালিত মেশিন স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তারা সরজমিনে একবার দেখে গেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, এটি  DSC06777মেরামতের জন্য বাংলাদেশে ভালো কারিগর নেই। কোরিয়ানরা কিছুদিন পর আসবে তখন মেরামত করে দেওয়া হবে। দৌলতপুর উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি জসিম মাস্টার বলেন, “সোলার ইরিগেশন এই প্রকল্পটি প্রায় ৪ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে, চারপাশে আরো ২ শতাংশে কোন আবাদ হচ্ছে না। আমার স্বল্প কৃষি জমিতে এটি করে বর্তমানে খুবই অসুবিধার মধ্যে আছি।”

এই পদ্ধতির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে তবে দেশীয়ভাবে টেকনিশিয়ান তৈরি করতে না পারলে আর দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এই প্যানেলের সাথে ব্যাটারি যুক্ত করতে পারলে রাতে মেশিন চালানো সম্ভব হলে অনেক জমিতে পানি দেওয়া যাবে। এই বিষয়ে বাসুদেব বাড়ির কৃষক লালচান বলেন, “প্রথমে এই সেচ পাম্প দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ আসত, আমরা অনেক খুশি হয়েছি এবং আরো আবেদন করেছি বেশি করে দেয়ার জন্য। কারণ ব্যক্তি উদ্যেগে এতো টাকার পাম্প বসানো সম্ভব নয়। সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন এই খাতে ভর্তুকি প্রদান করে এটিকে আরো সহজলভ্য করুন। আর টেকনিশিয়ান তৈরির জন্য এই বিষয়ে পাঠ্য পুস্তকে অনুশীলন যুক্ত করতে হবে।”

happy wheels 2

Comments