জোয়ালা গ্রামে সবজি চাষে ফেরোমন ফাঁদ
সাতক্ষীরা থেকে ফজলুল হক
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়নেরএকটি গ্রাম জেয়ালা। এই জেয়ালা গ্রামটি প্রায় ৪/৫ মাস জলাবদ্ধতায় কবলিত থাকে। এই প্রতিকূলতার সঙ্গে অভিযোজন করে কৃষকরা চাষ করে যাচ্ছেন পটল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, বেগুন, উচ্ছে, ধুন্দল, কাঁকরলসহ আরো অনেক ফসল।
গ্রীষ্মকালীন সবজিতে পোকা মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। তাই এই সময় সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় বেশি। সে জন্য কৃষকেরদের ফসল ফলাতে অনেক খরচ হয় এবং খরচ হলেও সেটা স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। তাই জেয়ালার কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত ফসল উৎপাদক করতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহারে দিকে ঝুঁকছেন।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, ফেরোমন ফাঁদ হচ্ছে এক ধরণের কীটপতঙ্গের দমন ফাঁদ যাতে পোকামাকড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। এ ফাঁদের মূল উপকরণ হলো এমন এক ধরনের রাসায়নিক যেটা স্ত্রী পোকার দেহ থেকে নির্গত হয় এবং এ রাসায়নিকের আকর্ষণে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়। স্ত্রী পোকার নির্গত ফেরোমেনকে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করে ট্যাবলেট আকারে বাজারজাত করা হয়এবংএটাকে ফাঁদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু স্ত্রী পোকার গায়ের গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয় তাই একে অনেকসময় সেক্স-ফেরোমেন ফাঁদ ও বলে।
ফেরোমন ফাঁদ তৈরির জন্য কিছু উপকরণের প্রয়োজন যেমন, একটি টোপ, প্লাস্টিকের পাত্র/বোয়েম, তার বা সুতা, গুড়া সাবান বা হুইল পাউডার,পানি, বাঁশের খুটি ইত্যাদি। ২-৩ লিটার পানি ধারণা ক্ষমতা সম্পন্নও ২২ সেমি.লম্বা চার কোনা কৃতিবা গোলাকার একটি প্লাস্টিকের পাত্র/বোয়েম দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা যায়। পাত্রটির উভয় পার্শ্বে ১০-১২ সেমি. উচ্চতা সম্পন্ন এবং নিচের দিকে ১০-১২ সেমি. পরিমাণ অংশ ত্রিভুজাকারে কেটে ফেলতে হবে।পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিক কমপক্ষে ৪-৫ সেমি. উঁচু করতে হবে। ফাঁদ পাতা আবস্থায় সব সময় পাত্রের তলা থেকে উপরের দিকে কমপক্ষে ৩-৪ সেমি. পযন্ত সাবান মিশ্রিত পানি বা হুইল পাউডারে গুড়া মিশ্রিত পানি ভরে রাখতে হবে। প্লাস্টিকের পাত্রের মুখ থেকে সেক্স ফেরোমন টোপটি একটি সরু তার বাসুতা দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যনে সেটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. ওপরে থাকে। সেই ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিকের পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান বা হুইল পাউডারের পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং মারা যায়।
জেয়ালা গ্রামের কৃষক গোবিন্দ ঢালি বলেন, “পটল, কুমড়া জাতীয় ও বেগুনে বেশি মাত্রায় পোকার আক্রমণ হয় এবং অন্যান্য ফসলে কম হয়। আর পোকার আক্রমণের জন্য বেশি পরিমাণ কীটনাশক ক্রয় করতে হয়। তাই খরচ কম, শ্রম কম, এবং কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করি।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, “সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে কৃষকদের ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারে উদ্¦ুদ্ধ করা হচ্ছে। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করলে কৃষকদের খচরও কমবে এবং মানুষ বীষ মুক্ত সবজি খেতে পারবে।