একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস এবং প্রান্তজনের মুখের হাসি
বদরুল আলম, সহযোগী গবেষক, বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টার, মানিকগঞ্জ
সামাজিক স্তরায়নভিত্তিক সমাজে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় বরাবরই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। জাতি-ধর্ম-শ্রেণী নির্বিশেষে সকল জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য একটি উল্লেখযোগ্য অন্তরায়। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষা সকল ক্ষেত্রেই এই ধরণের বিচ্ছিন্নতা, সামাজিক বর্জন এবং শারীরিক নিগ্রহের শিকার হয়ে থাকে প্রান্তীয় জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। সামাজিক এবং কাঠামোগত এসকল একাধিক বিষয়ের কারণে সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিরক্ষরতা এবং ঝরে-পড়া শিক্ষার্থীর হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় বসবাসকারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও সমজাতীয় চিত্র বিরাজমান ছিল। সামাজিক ও কাঠামোগত বৈষম্যের শিকার এসকল জনগোষ্ঠী শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বাসস্থান-চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত। বারসিক মানিকগঞ্জ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মৌলিক অধিকার ও প্রাকৃতিক সম্পদে সাধারণ মানুষের অধিকার বিষয়ে কাজ করে আসছে। এই কাজের ধারাবাহিকতায় বারসিক সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।
২০০৮ সালে পূর্ব দাশড়ার রবীন্দ্র মণিদাস মানিকগঞ্জের বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর তৎকালীন পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, “আমাদের জনগোষ্ঠী সুযোগ-সুবিধার অভাবে পড়ালেখাও করতে পারছে না। নীচু জাতি বলে সবার সাথে মিশে একত্রে লেখাপড়া করাও অনেকসময় সম্ভব হয় না। তাছাড়া যেখানে পেট চালানোই দায় হয়ে পড়েছে সেখানে ছেলেমেয়েকে কি করে পড়াবো? এ কারণে আমাদের মধ্যে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম। কিন্তু, আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে আমাদের মতো নিরক্ষর রাখতে চাই না।” সামাজিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা প্রধানত দারিদ্র্যের কারণেই নিয়মিত পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়তে বাধ্য হয়। অধিকাংশ পরিবারই তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাবার নিয়মিত খরচ বহন করতে ব্যর্থ হয়। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর স্কুলের পাঠ সম্পন্ন করার জন্য পরিবারের শিক্ষিত কোন সদস্য কিংবা একজন প্রাইভেট টিউটরের প্রয়োজন হয়। সামাজিকভাবে প্রান্তিক এ সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অধিকাংশ বাবা-মা অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন না হওয়ায় তাদের সন্তানদেরকে পড়া তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে পারেন না। অন্যদিকে নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর পক্ষে পরিবারের অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। ফলে সন্তানের শিক্ষার জন্য একজন প্রাইভেট টিউটরের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। ফলে এক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে ঝড়ে পড়ে।
এই সমস্যা অনুধাবন করে বারসিক প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা এবং শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধ করার জন্য ২০০৮ সালে ‘বিকাশ কেন্দ্র’ নামে অপ্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম হয় “স্বাস্থ্য-শিক্ষা কেন্দ্র”। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে বারসিক মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিপূরক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। শ্রেণীকক্ষে নিয়মিত পাঠদানের কার্যক্রমের অংশে শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের পড়া বোঝাতে এবং বাড়ির কাজ তৈরি করতে সহায়কগণ (দিদিমনি) সহায়তা করেন। এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলের পাঠ এবং বাড়ির কাজ প্রস্তুত করে পরবর্তী দিন বিদ্যালয়ে যেতে পারে এবং স্কুলে যেতে আগ্রহ ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহায়িকা একাধারে প্রাইভেট টিউটর এবং অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে। ফলশ্রুতিতে, পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে আলাদাভাবে প্রাইভেট টিউটর রাখার অক্ষমতা কিংবা শিক্ষার্থীদের বাবা-মার অক্ষর জ্ঞানহীনতা সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি। যার ফলে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের পূর্বে থেকে পড়াশুনায় ক্রম উন্নতি হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে প্রতিদিন রাতে খাবারের পর ও সকালে দাঁত ব্রাশ করা, পরিষ্কার জামা পরে বিদ্যালয়ে যাওয়া, টয়লেট থেকে ফেরার পর ও খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়। সপ্তাহে একদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেয়া হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের হাতের নখ, দাঁত, চুল পর্যবেক্ষণ করা হয়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়োজনীয়তা এবং অপরিচ্ছন্ন থাকার ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। শিক্ষার্থীদের মায়েদের সাথেও একই আলোচনা করা হয়। এছাড়া মায়েদের সাথে পরিবার-পরিকল্পনা, যথাসময়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ, মা ও শিশুর পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা, বাল্য বিবাহের ক্ষতিকর দিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের মাদেরকে নিয়ে মা সমিতি গঠন করে প্রতি মাসে একবার মায়েদের সাথে শিশুদের পড়াশোনার অবস্থা, স্কুলে শিশুদের অবস্থান বিষয়ে আলোচনা করা হয় যাতে করে অভিভাবকবৃন্দ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারেন। এখন সকল অভিভাবকই তার সন্তানকে ন্যূনতম প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করাতে চান। সক্ষমতা সাপেক্ষে অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষাখাতে ব্যয় করার মানসিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজেদের আয়ের একটা অংশ ছেলেমেয়েদের শিক্ষা উপকরণ ক্রয়ের জন্য এবং আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য খরচ করছেন। এ প্রসঙ্গে পূর্ব দাশড়া কেন্দ্রের অভিভাবক বিশাখা মণিদাস বলেন, “আগে বাচ্চাদের ফ্রি পড়াইতো। কিন্তু এখন বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য আমরা দিদিমণিকে (কেন্দ্র সহকারী) প্রতি মাসে কিছু টাকা দেই। ভবিষ্যতে যদি বারসিক কেন্দ্র না চালায় তবুও আমরা দিদিমনির বেতন দিয়ে কেন্দ্র চালু রাখব। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেব।” মা সমিতির মাসিক মিটিংয়ে শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য-পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, শাক-সবজি চাষ, গৃহপালিত পশুপাখি পালন ও সামাজিক ইস্যুতে আলোচনা করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের মায়েরা নিয়মিতভাবে আঙ্গিনার সীমিত জায়গার মধ্যে শাক-সবজি চাষ করছে এবং হাঁস-মুরগি-কবুতর-ছাগল পালন করছে। ফলে এসকল পরিবারের শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের যোগান নিশ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত অংশ বিক্রি করে অর্জিত টাকা ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনায় ব্যয় করতে পারছে। এছাড়া, বিভিন্ন সভার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যরা নিয়মিত একত্রিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে নিজেদের ভিতরের পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব কমে গেছে, কর্ম চঞ্চলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়মিত মা সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে নেতৃত্ব বিকশিত হয়েছে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অধিকার আদায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
বর্তমানে এই সকল জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন সাধিত হয়েছে বারসিক পরিচালিত “স্বাস্থ্য-শিক্ষা কেন্দ্র” কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। বর্তমানে এসকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখা করছে এবং উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষাও গ্রহণ করছে। শিক্ষার পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারগুলো আদায়ে সচেষ্ট হয়েছেন। নিয়মিতভাবে সরকারি-বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে গ্রহণ করছেন জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় নানাবিধ সেবাসমূহ। বারসিক’র স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মতে, কেন্দ্রের প্রি-প্রাইমারি/ শিশু শ্রেণীতে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার হ্রাসকরণে এবং শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রসঙ্গে বড় বড়িয়াল স্বাস্থ্য শিক্ষা কেন্দ্রের অভিভাবক সবেরী বেগম বলেন, “আগে আমরা বাচ্চাদেরকে বয়স হইলে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিতাম। পড়ালেখা জানতাম না তাই ভর্তি করানোর আগে দরকারি পড়ালেখাটা বাচ্চাদের দিতে পারতাম না। যে কারণে ওরা স্কুলে ভালো করতে পারত না, স্যারদের কাছে বকা খাইত। এজন্য স্কুলে যাইতে চাইত না। কিন্তু, এখন কেন্দ্রে শিশু শ্রেণীতে পড়ে প্রস্তুত হয়ে পরে স্কুলে ভর্তি হয়। তাই আর কোন সমস্যা হয় না।”
সামাজিক স্তরায়নের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে সমাজের উচু শ্রেণীর পাশাপাশি বসবাসে অনীহা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মূল গ্রাম থেকে বিচ্ছিন্নে বসবাসের প্রবণতা এবং সেটেলমেন্টের ধরণ অনুযায়ী মূলধারার অংশে বিদ্যালয়ে নির্মাণ ধারার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস স্থান থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুরত্ব বেশি হয়। যেটি অনেকাংশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিন্ম শিক্ষাহার এবং ঝরে পড়ার উচ্চ প্রবণতাকে প্রভাবিত করে। এই প্রসঙ্গে অভিভাবক কবিতা রাণী কর্মকার বলেন, “সংসার চালানোর জন্য আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই সারাদিন কাজ নিয়ে থাকি। ছেলেমেয়েদের প্রতি আলাদা করে খেয়াল করা সময় হয় না। স্কুল দূরে হওয়াতে রোড দিয়া ছোট বাচ্চারে যাইতে দিত মন চাইত না। কিন্তু, এখন বারসিক আমাদের এলাকায় কেন্দ্র দিছে। কেন্দ্রের দিদিমণির কাছে বাচ্চাকে দিয়া আমরা নিশ্চিন্তে নিজেদের কাজ করতে পারি। আর বাচ্চারাও পড়ালেখা করতে পারে।” অন্যান্য হাতেখড়ি শ্রেণী বা প্রি-প্রাইমারী কেন্দ্রের দূরত্ব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসত এলাকা থেকে দূরে হওয়াতে শিশুদেরকে সেখানে পড়তে যেতে দিতে নিরাপদ বোধ করতেন না অধিকাংশ অভিভাবক। কিন্তু, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের মধ্যে বারসিক শিক্ষা-স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করায় অভিভাবকরা নিশ্চিন্তে তাদের সন্তানদেরকে শিক্ষাকেন্দ্রে আসতে দিতে পারছেন। শিশুরা পারিবারিক পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে এসকল জনগোষ্ঠীতে শিক্ষা গ্রহণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই স্বাস্থ্য-শিক্ষা কেন্দ্রের কর্মসূচির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। নিজের অধিকার প্রতি সচেতন হয়ে তা আদায় করার জন্য সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেছে। ফলে এলাকার মানুষের ভালোর জন্য তারা নিজেরাই প্রশাসনের কাছে নিজেদের সমস্যাসমূহ নির্বাচিত প্রতিনিধি, প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরছেন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন। এছাড়া শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কেন্দ্র সহকারীর দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কেন্দ্র সহকারীবৃন্দের ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির সুযোগ পেয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকেই কেন্দ্র সহকারী নির্বাচন করা হয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে শিক্ষার হার কম থাকায় তখন অধিকাংশ কেন্দ্র সহকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল অষ্টম শ্রেণী পাশ। পরবর্তীতে বারসিকের অনুপ্রেরণায় কেন্দ্র সহকারীবৃন্দ নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেন। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র সহকারী প্রমিলা রাণী রায় বলেন, “আমি যখন এই শিশু বিকাশ কেন্দ্রে প্রথম কাজ শুরু করি তখন আমি এস.এস.সি পাশ ছিলাম। এখানে কাজ করার পর পড়াশোনা চালিয়ে আমি বি.এ ভর্তি হই। কিছুদিন আগে ৪র্থ সেমিষ্টার পরীক্ষা দিয়েছি। এখানে কাজ করে আমি বেশ উপকৃত হয়েছি। শিক্ষার্থীরা আমাকে সালাম দেয়, সমাজের মানুষ সম্মান করে।”
এভাবে একটি ছোট উদ্যোগ একটি জনগোষ্ঠীকে আলোকিত করতে পারে। স্বাস্থ্য শিক্ষা কেন্দ্রের এই সফলতার পেছনে এসব জনগোষ্ঠীর অবদান, তাদের আন্তরিকতা এবং এই উদ্যোগের সাথে তাদের অংশীদারিত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাই তো তারা বলতে পেরেছেন “বারসিক যদি এই কেন্দ্র পরিচালনা নাও করে তারপরও আমরা চালিয়ে যাবো”। এ ধরনের মালিকানাবোধই একটি উদ্যোগের স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করে। আমরা আশা করবো মানিকগঞ্জের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিষ্ঠিত এই স্বাস্থ্য-শিক্ষা কেন্দ্র অন্যান্য এলাকার জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে আর্বিভূত হবে। কেননা এখানে শুধু শিক্ষাই নয় একজন সক্রিয় নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক ও সামাজিক গুণাবলীগুলোও শিক্ষার্থীদেরকে শিখিয়ে দেওয়া হয়।