করোনা মহামারী মোকাবেলায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠির কৃষি ও লোকায়ত চর্চা
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
প্রায় দুইমাস দেশে চলছে করোনা মাহামারী। বিশ্বের অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও চলছে লকডাউন। বাংলাদেশে করোনার তান্ডব শুরুর প্রথমের দিকে শহরের তুলনায় গ্রাম নিরাপদ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বিগত কয়েক দিনে শহরের শ্রমিক বা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষরা বিভিন্ন ভাবে গ্রামে প্রবেশ করার কারণে গ্রামই এখন অনিরাপদ হয়ে গেছে। আবার আমরা হর হামেশায় বলে থাকি গ্রামের মানুষ সচেতন নয়। কিন্তু এ লেখার মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠি এই করোনা মহামারীতে কিভাবে সচেতন হয়েছে তা উপস্থাপনের চেষ্টা করব।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/05/95387034_143201700579304_5589629159530823680_o.jpg)
এই লকডাউন পরিস্থিতিতে কর্মএলাকার মানুষের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল ফোন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও কলে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। আবার করোনা শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর নিজ গ্রামের বাড়ীতে যাওয়ার সুযোগ হয়। কর্মএলাকার গ্রামের জনগোষ্টির সাথে ফোনে কথা ও নিজ গ্রামে ঘুরে দেখার মাধ্যমে দেখতে ও জানতে পারি গ্রামের জনগোষ্ঠি বাড়ীর আঙ্গিনা বা এতটুকু পতিত জমিতে পেঁপে, মরিচ, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, বেগুনের চারা রোপন করছে। এ ব্যাপারে কথা হয় রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামের মো. আব্দুর রহমান (৫৫) এর সাথে। তিনি তখন বাড়ীর আঙ্গিনায় মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে রোপন করছিলেন। কথার মাঝে তিনি বলেন, “এই সময়ে বাজারে না যাওয়াই ভালে। তাই আমি যতদুর সম্ভব বাড়ীতেই বিভিন্ন বীজ বপন করে রাখছি।” শুধু বৃত্তশালী পরিবার নয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অনেকেই এই সময়ে বিভিন্ন সবজী বপন রোপন করছে নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে। যা বছরের অন্য সময়ে লক্ষ করা যায় না।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/05/95261641_2730402657087607_4347395699789266944_n.jpg)
গ্রামের এমন কিছু কৃষক পরিবার থাকে যাদের বাড়ির পাশে কিছু জায়গা সারা বছরের বিভিন্ন গাছপালা জন্মে; জমিটুকু পতিত থাকে। কিন্তু চলতি সময়ে তারা সেই জমিটুকু পরিষ্কার করে বিভিন্ন সবজীর বীজ বুনছে। এমনই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তানোর উপজেলার গোকুল-মোথুরা গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ (৫২)। তিনি বলেন, “জমিতে যে কোন ধরনের বীজ বুনে রাখলেই উপকার কারণ ফল হবেই। তা বাজারে বিক্রয় করতে না পারলেও নিজের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশিদের মাঝে বিতরণ করা যাবে।”
প্রতিটা গ্রামেই বৃত্তশালী কিছু পরিবার থাকে যারা সবজী জন্য বাজারের উপর নির্ভরশীল। তারা বাজার থেইে সকল প্রকার সবজী কিনে আনে। কিন্তু দেশের এমন পরিস্থিতীতে তারা নিজেদের বাড়ীর আঙ্গিনায় বিভিন্ন প্রকার সবজীর বীজ বুনছে। পাশাপাশি সরকারও অনুধাবন করেছে কৃষি ছাড়া এই মহামারী মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই সরাকারও কৃষকদের সচেতন করছে কোন জমি পতিত না রাখার ব্যপারে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/05/95357582_143246733908134_2861567156900855808_o.jpg)
গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে যে কোন ধরনের সংক্রমন মোকাবেলায় নিম পাতা খুব ভালো ভাবে কাজ করে। তাই তারা করোনাকালীন সময়ে প্রতিদিন দুপুরে বা রাতের খাবারের সাথে নিমপাতা রাখছেন। পাশাপাশি নিপমাতা ও কাঁচা হলুদ বেটে সপ্তাহে একদিন গায়ে মাখছে। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার বরশীপাড়া গ্রামের মো. বাচ্চু মিয়া (৪৭) বলেন, “জীবিকার তাগিদে আমাকে বাহিরে যেতে হয় কিন্তু প্রতিদিন আমি ফিরে এসে নিমপাতা দিয়ে গরম পানি করে গোসল করি। কারণ এভাবে গোসল করলে জীবানুনাশ হয়। আবার প্রতিদিন আমি টক জাতীয় খাবার খাই যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহযোগিতা করে।”
যেকোন ধরনের মহামারী মোকাবেলা করার জন্য গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিরা নিজের সক্ষমতার পরীক্ষা দিয়ে টিকে থাকে। সেখানে কোন ধরনের ত্রাণ বা উপহার সামগ্রী নগন্য মাত্র। কারণ ত্রাণ বা উপহার সামগ্রী একমাত্র সমাধান না।