গ্রামীণ কৃষককের বীজ সংকটে মোকাবেলায় রাবেয়ার উদ্যোগ

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
হরিরামপুর পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় উত্তর পাটগ্রামচরে বাড়ি রাবেয়ার। ছোট বেলা থেকে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্তা রয়েছে। নিজের দীর্ঘদিনের চর্চা, অভিজ্ঞতা দিয়ে সেই কৃষি কাজকে তার জীবনের নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন। স্বামীর সাথে কৃষি কাজে সহযোগিতা করা, বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করা, বীজ সংরক্ষণ করা, ঘরে তোলা তার নিত্যদিনের কাজ। আর সেই চর্চা থেকে যেমন নিজে উপকৃত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামের মানুষের জন্য জন্য গড়ে তুলেছেন নিজ বাড়িতে বীজ ঘর। তার বীজবাড়ি থেকে গ্রামের কৃষকরা যখন বীঝ সংকটে পড়ে তখন রাবেয়ার বাড়ি থেকে বীজ নিয়ে সেই সংকট মোকাবেলা করেন।


রাবেয়ার বীজ বাড়িতে রয়েছে প্রায় ৪০ ধরনের বিভিন্ন জাতের বীজ। রাবেয়ার বীজ সংরক্ষণের উদ্যোগ, উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা দেখে বারসিক তার বীজবাড়ির কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য বীজ সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করে। তার মধ্যে রয়েছে বীজ রাখার প্লাষ্টিক ড্রাম, কৌটা, মাটির কলস, কোলা, সাইনবোর্ড, বীজ বিনিময় নিয়মাবলী ব্যানার ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি তথ্য উপাত্ত পামলেট, লিফলেট দিয়ে সহযোগিতা করে। চলতি মৌসুমে গম-পায়রা সম্প্রসারণ প্লট করেছেন। যেখান থেকে বীজ সংরক্ষণ করে গ্রামের আরো অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে বিনিমিয় করা হবে।


রাবেয়া উত্তর পাটগ্রামচর নারী উন্নয়ন সংগঠনের একজন সদস্য। সংগঠনের মাধ্যমে তার বীজ বাড়ির কার্যক্রমকে গ্রামের এবং আশে পাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে যাতে উপকার পায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী, ছেলে এবং ছেলের বউ সবাই বীজ সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। কোথায় কোন ধরনের বীজ পেলে তা বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং গ্রামের কেউ বীজ চাইতে আসলে তাদেরকে বীজ দিয়ে সহযোগিতা করি। বিশেষ করে চরাঞ্চলে বন্যার পরে কৃষকদের কাছে বীজের চাহিদা বেশি আসে। সবার চাহিদা পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। গ্রামের মানুষ যদি সবাই নিজ নিজ বাড়িতে বীজ সংরক্ষণ করেন তাহলে চরাঞ্চলে বীজের সংকট দুর হবে।’


বর্তমানে রাবেয়ার বীজ বাড়িতে যে ধরনের বীজ সংগ্রহে রয়েছে তার মধ্যে গম, পায়রা, মুসুরী, মাসকালাই, মুগডাল, সরিষা, তিল, মসনা, আলমডাঙ্গা জাতের মরিচ, নলডঙ্গা শিম, চেপটা শিম, মৌশিম, মুলা, লালশাক, বেগুন, সজ, রাধুনী, কালোজিরা, অরহর, লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, মোটরকালাই, খেসারী কালাই, দিঘা ধান, আউশ (পরাঙ্গি), বাশ ডাটা, করল্লা বীজ, কাউন, বরবটি, আদা, রসুন, গাছ আলু, ধুন্দল বীজ রয়েছে।


হরিরামপুর উপজেলা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসে্েব চিহ্নিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে অনেক ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমনকি স্থানীয় জাতের অনেক ফসলের বীজ এর সংকট দেখা দেয়। গ্রামের অনেক মানুষ বাজারমূখী এবং বিভিন্ন কোম্পানির বীজ হাট বাজার থেকে কিনতে আনতে হয়। ফলে একদিকে যেমন তাদের স্থানীয় জাতের বীজ বৈচিত্র্য হারিয়ে যেতে শুরু করে অপরদিকে নিজস্ব দক্ষতা, অভিজ্ঞতা তাদের নিজস্ব চর্চা কমতে থাকে।
বারসিক এলাকার বীজের সংকট দূরীকরণ, বাজার নির্ভরশীলতা কমানোর, এবং স্থানীয় জাতের বীজ বৈচিত্র্য বৃদ্ধি, কৃষকদের নিজস্ব চর্চা বা উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বীজ মেলা, পাড়া মেলা, অভিজ্ঞতা বিনিমিয় সফর, বীজ বাড়ি, বীজ ব্যাংক তৈরিতে সহায়তা করে আসছে।

happy wheels 2

Comments