একটু ভালোলাগা ও বিনোদনের খোঁজে
মানিকগঞ্জ থেকে এম আর লিটন
আমরা একটু ভালোলাগা ও বিনোদনের খোঁজে ছুটে যাই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় । জায়গাটা যদি হয় ” হিমালয় থেকে সুন্দরবন “। সেই ভালোলাগার সময়টুকু যদি পাশে থাকে প্রিয় মানুষটি ? সে অনুভূতি কেমন হতে পারে তা বুঝতে পারছেন ? এ কথা সত্য যে, মানুষ প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসে । প্রকৃতির মাঝে খোঁজে পায় তার বিনোদন ও জীবনানন্দ । আর প্রকৃতির অমোঘ ভালবাসায় ছুটে চলে দিনমান । আমরা স্বপ্নে ও জাগরণে খোঁজে বেড়াই নদ–নদী, বর্ষার কদম ফুল, এক ফালি বৃষ্টি, সবুজ ছায়া, মুক্ত বাতাস, নীল আকাশ, ভোরের সোনালি রোদ্দর, একগুচ্ছো ফুল, পাখির গান, রাতের আকাশে তারা এবং জ্যোৎস্না আলো । হয়তো এজন্যই কবি লেখেছিলেন “আমি বাংলার মুখ দেখিয়াছি তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না “।
কিন্তু দুঃখ এই যে, আমরা যেখানে বসবাস করি সেখানে অপরিকল্পিত নগরায়াণের কারণে খোঁজে পাওয়া যায় না নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এক টুকরো জায়গা! আজ আমরা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে যান্ত্রিক হয়ে পড়েছি । নিঠুর ইটের দালানে, ঘড়ির গড় গড় শব্দে, কারখানার বর্জ্য, ময়লা–আবর্জনার পাহাড়ের নিচে এবং জনসংখ্যার ভিড়ে আটকা পড়েছি । আর যখন অবসর পাই তখন ছুটে চলি একটু ভালোলাগা ও বিনোদনের জন্য ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জ শহর থেকে অল্পকিছু দূরে, বেউথা নদীর পারে, প্রতিদিন বিকেলে শত শত মানুষের আনাগুণা । ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কিশোর–কিশোরী, তরুণ–তরুণী, যুবক–যুবতী, বৃদ্ধ এবং সকল বয়সের লোক এখানে দেখা যায় । আমরা জানি, মানিকগঞ্জ একটি ছোট শহর এবং ঘনবসতি । এখানে ইতিহাস শিল্প ও সাহিত্য থাকলেও শহরে বিনোদনের কোন জায়গা নেই । যার ফলে মানুষ খোলামেলা জায়গা পেলে সেখানে ভিড় জমায়। বিশেষ করে বেউথা ব্রীজের উত্তর পাশে চোখে পড়ার মতো মানুষ, লোকে যেন লোকরণ্য হয়ে গেছে । সেখানে উপস্থিত এক তরুণ চিন্ময় তরফদার (১৯) বলল, “শুধু রুমের ভিতর পড়ালেখা করতে আর ভালো লাগে না। শহরে ভালো জায়গা নেই, আর কোথায় যাবো তাই বন্ধুদের সাথে এখানে এসেছি।“
বেউথা নদীতে বর্ষার জল থৈ থৈ করছে । কেউ ইঞ্জিন চালিত নৌকায় বা স্পিডবোডে নদীর বুকে ঘুরছে, কেউ নদীর পাড়ে বসে বাদাম, ফুঁচকা ও চটপটি খাচ্ছে, কেউ প্রিয় মানুষটির সাথে গল্প করছে, কেউ আবার মোবাইল ফোনে সেলফি তুলছে । এই প্রসঙ্গে তরুণী শিমু আক্তার (১৮) বলল, “আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি । আজ ছোট বোনকে সাথে নেয়ে এসেছি । খুব ভালো লাগছে নদীতে অনেক জল, অনেক লোকের ভিড় দেখে।” শিশু উর্মি রায় (৯) বলল, “আমি আব্বুর সাথে এসেছি । গ্যাসের বেলুন কিনেছি । আব্বু বলেছে কাল আবার আমাকে নিয়ে আসবে।“
বিনোদনের জায়গার অভাবে মানুষ যেন প্রকৃতির মাঝেই খুঁজে বেড়ায় বিনোদন। তাই তো আব্দুল জলিল (৫০) বলেন “অনেক দিন পর বেউথা এসেছি। ভাবিনি এখানে এতো লোকের আনাগোনা হবে । বেউথার এমন রূপ দেখে খুব ভালো লাগছে। বেউথা আগের চেয়ে অনেক উন্নত দেখা যায়, নতুন একটি ব্রীজ হয়েছে এবং নদী ভরা জল।“
মানিকগঞ্জ বেউথা যেন এখন স্বপ্নের নগরী । শত শত মানুষের একমাত্র বিনোদনের কেন্দ্র এটি । শহরের মানুষ একটু ভালোলাগা ও বিনোদনের জন্য ছুটে যাচ্ছে প্রতিদিন বেউথায় । যে প্রকৃতির প্রতি আমাদের এতো ভালোবাসা, যার টানে ছুটে যাই দূর থেকে দূরন্তে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে বেউথায়। তবে সেই প্রাণ–প্রকৃতিকে আমরা কটুকু রাক্ষা করতে পারছি ? হয়তো বাদাম খাওয়া শেষ হলে বাদামের খোসা ফেলে রেখে যাবে ঘুরতে আশা দর্শক । বর্ষা শেষ হলে নদীটি ভরে যাবে বালু চরে! স্পিডবোড এখানে চলবে না । কিছুদিন পর আর রাস্তা দিয়ে হাটা যাবে না গাড়ীর ভিড়ে । সবুজ ছায়া পড়বে না এ প্রান্তরে, পাখি বাসা বাঁধতে খুঁজে পাবে না গাছের ডাল। আমরা চাইনা বেউথার এই প্রাকৃতিক রুপ নষ্ট হোক। আসুন আমরা সচেতন হই, নদীসহ অন্যান্য প্রাণকে রক্ষার উদ্যোগ নিই।