মানিকগঞ্জে নদী ভাঙনে বসতবাড়ি ফসলী জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে
আব্দুর রাজ্জাক,মানিকগঞ্জ
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানিকগঞ্জের পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চল ও পাড় এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর ফসলী জমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিঃস্ব হয়ে পড়ছে অনেক পরিবার। শিবালয় উপজেলার চরশিবালয় এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গঙ্গাপ্রসাদ আশ্রয়ণ প্রককল্পসহ বেশকিছু বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্রমেই নাজুক আকার ধারণ করছে। ফলে এসব এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, শিবালয় উপজেলার কানাইদিয়া আফতাব উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গতবার নদী গর্ভে চলে যায়। এরপর পার্শ¦বর্তি গঙ্গাপ্রসাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হত। এবারের ভাঙনে তাও বিলীন হয়ে গেছে। প্রধান মন্ত্রীর দেওয়া গঙ্গাপ্রসাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০টি ঘর ইতিমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে। এসব ঘরে বসবাসকারি ৪০টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে রাস্তা-বেরিবাঁধসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। চরশিবালয়ে ৩৫টি পরিবার এবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। এছাড়া আরিচা পিসিপোল কারখানার পশ্চিম পাশ দিয়ে রাস্তার অনেকাশং নদীতে ভেঙে যাওয়ায় বল্লি দিয়ে সাময়িক ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা হলেও দক্ষিণ শিবালয় জামে মসজিদ এবং পিসিপোল কারখানা হুমকির মুখে।
যমুনার ভাঙনে তেওতা ইউনিয়নের দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট মধ্যনগর সরাকারি প্রাথমি বিদ্যালয় এবং তিনতলা ভবন বিশিষ্ট মধ্যনগর রুস্তম হাওলাদার উচ্চ বিদ্যালয় হুমকির মুখে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে এ বিদ্যালয় দু’টি অচিরেই নদী গর্ভে চলে যাবে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। আরুয়া ইউনিয়নের মান্দ্রাকোলা, কলাইরটেক, জগদদিয়া, কাজিয়ারটেক নয়াকান্দি, বড়রিয়া,পাটুরিয়াসহ নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ইউনিয়নের ৩০নং কুষ্টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আরুয়া-মান্দ্রাখোলা জামে মসজিদ যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এছড়া গত এক সপ্তাহে শতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এব্যাপারে শিবালয় ১নং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. রফিককুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিবছরই নদী ভাঙন শুরু হয়। গতবছরও উপজেলার কানাইদিয়া চরের ২শ’ ৫৪টি পরিবারের বাড়ি ঘর নদী গর্ভে চলে যায়। এরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি কোন লোকজনই তাদের খবর নেয়নি। তবে এবছর নদী ভাঙনের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল মোহাম্মদ রাশেদ গত শনিবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামাল মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, “আমরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী ইউনিয়নের লালপুর,চরকাটারী,কাঠালতুলি,মন্ডলপাড়া,বোর্ড ঘর বাজার,চরকাটারী বাজার এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। অস্থায়ী যমুনা নদী ভাঙন রোধ প্রতিরক্ষামূলক বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদ-মাদ্রাসা,বাজার,রাস্তা-ঘাট,ইউনিয়ন পরিষদ,ভূমি অফিসসহ শত শত বাড়ি-ঘর । এছাড়া বাচামারা, বাঘুটিয়া ইউনিয়নে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
নদীতে পানি আসার মাস খানিক আগে চরকাটারী ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা নদীর পূর্ব পারে ভাঙন রোধে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদী ভাঙন রোধ কল্পে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক কাজ শুরু করেছে । কিন্ত পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তীব্র স্রোতে ও নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রতিরক্ষামূলক বাঁধের জিও ব্যাগ । ফলে ঐতিহ্য বাহী চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়, চরকাটারী বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ভূমি মসজিদ,মাদ্রাসা ও শত শত বাড়ি-ঘর আবাদী জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।