ঘিওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট চিন্তিত কৃষকরা

ঘিওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট চিন্তিত কৃষকরা

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। নতুন ধানের স্বপ্নে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদে ছেয়ে আছে কৃষকের মুখ। কারণ এ উপজেলায় চরম শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে সময় মত ধান কাটতে পারছে না অনেক কৃষক। এ দিকে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাকা ধানের। কৃষকদের একমন ধানের দামেও মিলছে না ১ জন শ্রমিক। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৬৮৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা গতবারের তুলনা প্রায় ১০০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও হয়েছে বাম্পার। হেক্টর প্রতি গড়ে ৬ থেকে ৮ মেট্রিক টন করে ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর মানিকগঞ্জে ও ঘিওরে আবাদকৃত বিভিন্ন জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে, উফশি, স্থানীয় এবং হাইব্রিড প্রজাতির ধান। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ব্রিধান-২৯ ও ব্রিধান-২৮। এ ছাড়া আবাদ করা হয়েছে উন্নতমানের জাত ব্রিধান-৫৮।

01 (1)

জানা যায়, বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কিন্তু শ্রমিক জন প্রতি মজুরি দিতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সঙ্গে দুই বেলা খাবার। এতে গৃহস্থের শুধু ধান কাটাতেই প্রতিমণে ধানের খরচ পড়ছে ৮০০ টাকার মতো। অন্যান্য খরচ তো (জমি চাষ, সেচ, চারা, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক) আছেই। চলতি বোরো মৌসুমে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, পোকামাকড়, রোগবালাই নিয়ে কৃষকরা ছিল মহাবিপাকে।

এদিকে ধানের ফলন ভালো হলেও বর্গাচাষীদের তো মাথায় হাত। তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। সরজমিন ঘিওর উপজেলার কেল্লাই এলাকার চকে গিয়ে দেখা যায়, মোন্নাফ মিয়া নামে স্থানীয় এক কৃষক পাঁচ/ছয়জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। তিনি একজন বর্গচাষি। নিজের কোনো আবাদি জমি নেই। অন্যের কাছ থেকে তিনি ২৪০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করেছেন। তিনি জানান, ধান কাটার শ্রমিকের উচ্চমূল্য। মাথা পিছু শ্রমিকদের দেয়া লাগছে ৬ শত টাকা।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি থাকায় অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ধান কাটার কাজ করছে। প্রতিটি এলাকায় কম বেশি বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বানিয়াজুরী ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের কৃষক কবির খান জানান, তিনি এবার ৮বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। বাজারে ধানের চাহিদা ও বাজারে মূল্য কম থাকায় তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাদের প্রতিমণ ধান পেতে খরচ হচ্ছে ৮শ’ থেকে ৮শ’ ৫০টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে কম দামে। এরকম লোকসান হলে ভাবছেন আর ধানের আবাদ করবেন না।

01 (2)

এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ উজ্জামান খান বলেন, “বোরো আবাদের জন্য সবকিছুই অনুকূলে ছিল। বিদ্যুৎ, পানি, সার, বীজ-কোনো কিছুরই সমস্যা ছিল না। পোকামাকড়ও আক্রমণ করতে পারেনি। এসব কারণেই ধানের ফলন ভালো হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “বোরো ধানের দাম কম থাকায় আমরা কৃষকদের ধান ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে সংরক্ষিত ধান পরে বিক্রি করে দামটা ভালো পায়।”

happy wheels 2

Comments