দূষিত পরিবেশ: নিরাপদ খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য
পাভেল পার্থ
১৯৯৬ সালের বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, খাদ্য কোনোভাবেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না। কিন্তু তারপরও আমরা দেখতে পাই খাদ্যকে ঘিরে নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক চাপ এবং নিয়ন্ত্রণ। আবার দেখা যায়, কেবলমাত্র মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতে গিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণ-প্রজাতির খাদ্য ভান্ডারকে সমূলে শেষ করে দেয়া হয়। খাদ্য হিসেবে মানুষের ভাত উৎপাদনের জন্য ধান ক্ষেতে ব্যবহার করা হয় নানা ক্ষতিকর আগাছানাশক, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার। এভাবে মৃত্যু ঘটে শৈবাল, অণুজীব থেকে শুরু করে নানা লতাগুল্ম, মাকড়সা, শামুক, কেঁচো, ব্যাঙ ও ছোট মাছের। হয়তো এভাবে মানুষের জন্য উৎপাদিত খাবার ভাতের থালা ভরে সামনে চলে আসে কিন্তু প্রকৃতির অন্যান্য সদস্য মারা যাওয়ায় খাদ্য সংকটে পড়ে পাখি, গরু, ছাগল, মুরগি ও অন্যান্য প্রাণীরা। আজকের দুনিয়ায় খাদ্য তাই কেবল ক্ষুধা নিবারণের বিষয় শুধুমাত্র নয়। আজ ভাবতে হবে এর উৎপাদন, সরবরাহ, মজুতকরণ, বিপণন, বিনিময়, বণ্টন, প্রবেশাধিকার থেকে শুরু করে কার জন্য খাদ্য এবং কীভাবে এই খাদ্য সকলের জন্য সমানভাবে সুরক্ষিত থাকছে। তার মানে খাদ্যের মতো এক মৌলিক অধিকার আজ বিশ্বব্যাপি সকলের জন্যই এক প্রধান মৌলিক তর্ক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। একটা সময় ‘অধিক খাদ্য ফলানোর’ প্রচেষ্টা থাকলেও দুনিয়া আজ স্থায়িত্বশীল খাদ্য উৎপাদনের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। এখন খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিবেশ, প্রতিবেশ, বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি এবং জনগোষ্ঠীর আকাংখাকেও গুরুত্ব দেয়ার চল শুরু হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি মানুষসহ সকল প্রাণসত্তার নিরাপদ খাদ্যের কথা এখন নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। বারসিক ও পবা দীর্ঘদিন থেকেই নিরাপদ খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে আসছে। আমরা জানি এ কাজ আমাদের কারোর একার পক্ষেই সামাল দেয়া সম্ভব নয়, চাই সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা। মানুষসহ সকল প্রাণসত্তার জন্য নিরাপদ খাদ্যের জোগানের ভেতর দিয়ে ভবিষ্যতের নির্মল পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় চাই সকল স্তরের এক সমন্বিত জাগরণ। বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে আবারো আমরা সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের দাবি জানাতে একত্র হয়েছি। আমাদের চারপাশের পরিবেশ আজ নানাভাবে দূষিত ও বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্যের জোগান দেয়া সত্যিই এক দুরূহ জটিল কাজ। কিন্তু আমাদের সকলের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এবং ভবিষ্যতের নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই নিরাপদ খাদ্যের জোগান জরুরি। আর নিরাপদ খাদ্যের প্রাথমিক শর্ত হলো দূষণমুক্ত পরিবেশ।
২.
এ পরিস্থিতিতে আমরা কী করতে পারি? একেবারেই একজন ভোক্তা ও ক্রেতা হিসেবে প্রথমত আমরা খাদ্যটাকে নিরাপদ দেখতে চাই। নিরাপদ মানে ক্ষতিকর ও বিপদজনক রাসায়নিকমুক্ত খাদ্য। এ অবস্থায় খাদ্য উৎস ও উৎপাদনস্থলকেই প্রথমত নিরাপদ করাটা জরুরি। তারপর থাকছে খাদ্য সরবরাহ, পরিবহন, বিপণন, মজুতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরিবেশন। জমির মাটি থেকে খাবার থালা অবধি খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। খাবার নিরাপদ কিনা এ নিয়ে নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষাটাও জরুরি। আমরা যেমন খাবারে কোনো ভেজাল চাই না, আবার ফরমালিন-কার্বাইড বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান খাবারে মিশে থাকুক তাও চাইনা। আবার খাদ্য উৎপাদনের পরিবেশ এবং কোন ধরণের শস্যজাত থেকে খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে তাও পরখ করেই দেখতে চাই। প্রতিদিন দেশে কমছে কৃষিজমি এবং প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থলগুলো। আমরা কৃষিজমি ও জলাভূমিকে বাঁচাতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে অধিক খাদ্য ফলানোর নামে খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে সংহারী বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক। এরপর খাদ্য বিপণনের নানা স্তরে ভেজালদ্রব্য তো থাকছেই। ক্ষতিকর কীটনাশক, আগাছানাশক, ছত্রাকনাশক মাটির অণুজীব থেকে শুরু করে শামুক-কেঁচো-উপকারী পতঙ্গ সব মেরে ফেলছে। দূষিত করছে সামগ্রিক পরিবেশ। মানবস্বাস্থ্য ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। প্রতিবছর লিচু মৌসুমে বিশেষত দিনাজপুর অঞ্চলে বিষমাখা লিচু খেয়ে মারা যাচ্ছে অবোধ শিশুরা। শস্যক্ষেতে বিষ ছিটানোর পর গ্রামবাসীর হাঁস-মুরগী সেই জমিতে প্রবেশ করে মারা মরছে এবং এ নিয়ে গ্রামে প্রতিবেশীর সাথে নানা দরবার লেগেই আছে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে তার অবশেষ জমা হচ্ছে জলাশয়ে। এভাবে মরছে দেশি মাছের বৈচিত্র্য। পাশাপাশি জলজ জীব ও জলচর পাখিদের জন্যও এটি খাদ্যসংকট তৈরি করছে।
৩.
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সাতক্ষীরায় পরিচালিত কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব শীর্ষক এক গবেষণায় বারসিক দেখতে পায় এসব অঞ্চলে বহুজাতিক সিনজেনটা, এসিআই ও পদ্মা কোম্পানির কীটনাশক কৃষকেরা বেশি ব্যবহার করে থাকেন। বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ বাসুডিনের মতো কীটনাশকও এসব অঞ্চলে দেদারদে বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্টে সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর, কলারোয়া, তালা ও কালীগঞ্জ উপজেলার ৬০০ কৃষকের মাঝে পরিচালিত এ গবেষণায় জানা গেছে, ৯৮.৩৪ ভাগ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করেন। এর ভেতর ৬১.৫৩ কৃষক ক্যান্সার, লিভারের সমস্যা, বহুমূত্র, শ্রবণ সমস্যা, কিডনি জটিলতা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ার মতো নানা জটিলতায় ভুগছেন। কৃষকেরা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে কীটনাশত স্প্রে করেন। জমিতে স্প্রে করার সময় ৭৫ ভাগ কৃষকের শরীরে সরাসরি কীটনাশক ছিটকে পড়ে। অধিকাংশ কৃষক স্প্রে করার পর হাত ও শরীর না ধুয়েই খাবার খান এবং ৫৪ শতাংশ কৃষক কীটনাশক ছিটানোর সময় কোনো প্রতিরোধমূলক পোশাক পরেন না। স্প্রে করার পর কীটনাশকের খালি প্যাকেট ও বোতল নষ্ট করা হয় না এবং এগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়। কীটনাশকের এই ক্ষতিকর প্রভাব শুধু মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না তা পরিবেশ দূষণও ঘটাচ্ছে। কীটনাশকের এরকম অবাধ ব্যবহার কৃষির ফলন বাড়াচ্ছে কিন্তু খাদ্যকে করে তুলছে বিষাক্ত, যা খাওয়ার পর মানুষ আরো নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং তা সারিয়ে তোলার জন্য আরো বেশি সময়, মনোযোগ ও অর্থ নষ্ট হচ্ছে।
৪.
এমনকি চাষাবাদের জন্য জমিতে সরাসরি রাসায়নিক প্রয়োগ নয়, আরো অন্যান্য ক্ষেত্রেও খাদ্য উৎপাদন করতে যেয়েও দূষিত হচ্ছে পরিবেশ ও হুমকিতে পড়ছে খাদ্য। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, অপরিশোধিত পোল্ট্রি বর্জ্য সরাসরি জমিতে ও জলাধারে ব্যবহারের কারণে শাকসব্জিতে ঢুকে পড়ছে রোগজীবাণু। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের গবেষকেরা গাজর, করলা, ব্গেুন, লাউ, শসা, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, মরিচ ও ঝিঙ্গায় সালমোনেল্লা ও ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া সনাক্ত করেছেন যা টাইফয়েড ও ডায়রিয়া রোগের জন্য দায়ী (সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ৭ অক্টোবর ২০১৭)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ২০১৪ সনে পোল্ট্রি মুরগির মগজে ৭৯৯ পিপিএম, মাংসে ৩৪৪ পিপিএম, চামড়ায় ৫৫৭ পিপিএম, কলিজায় ৫৭০ পিপিএম এবং হাড়ে ১৯৯০ পিপিএম ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি আবিষ্কার করেন (সূত্র: ইন্টারন্যাশনাল জার্ণাল অব সিভিল, স্ট্রাকচারাল, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট; আগষ্ট ২০১৪)। মানবদেহে এই ভারী ধাতু ক্রোমিয়ামের সহনীয় মাত্রা হলো প্রতিদিন ২৫ পিপিএম। একই সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পুষ্টি ইউনিট মাছের জন্য তৈরি খাদ্য নিয়ে একটি গবেষণা করে দেখেছে, প্রতি কেজি মাছের খাবারে ৪৯৭১.১৫ পিপিএম এবং মুরগির খাবারে ৪,২০৫.৭০ পিপিএম ক্রোমিয়াম আছে (সূত্র: দৈনিক কালের কন্ঠ, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪)।
৫.
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ২০১৩ সনের ১০ অক্টোবর দেশের নাগরিকের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুমোদন করে। এই আইন বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ খাদ্য বিধিমালা ২০১৪ তৈরি হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৫ সনের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়েছে। একইসাথে ২০১৮ সনে অনুমোদিত হয়েছে ‘নিরাপদ খাদ্য (স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ) প্রবিধানমালা ২০১৮’।
৬.
দানাজাতীয় খাদ্য থেকে শুরু করে প্রাণিজ আমিষ বা শাকসব্জি কী ফলমূল কোনো খাবারই আজ নিরাপদ নয়। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকিমুক্ত নয়। তাহলে এখন খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদেরতো একেবারে প্রাথমিক শর্তটা পূরণ করা দরকার। নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদন, ব্যবহার, বণ্টন ও গ্রহণ। আমরা তাই এ বছরের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য আবারো দিবসে স্পষ্ট করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের কথা বলছি। দূষিত পরিবেশে কোনোভাবেই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব নয়, তাই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের জন্য আমরা প্রথমেই পরিবেশ দূষণের সকল ক্ষেত্র বন্ধের জোরদার দাবি জানচ্ছি। নিরাপদ স্বাস্থ্যকর বৈচিত্র্যময় খাদ্য উৎপাদনে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। খাদ্য কেবলমাত্র ক্ষুধা নিবারণ করে না, এটি শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। খাদ্যের রয়েছে ভৌগোলিক, প্রতিবেশগত এবং সাংস্কৃতিক নানা ব্যঞ্জনা। খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে আমাদের এসব বৈচিত্র্য ও ব্যাঞ্জনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যের সাথে জড়িত সকল প্রাণ ও প্রজাতির আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক প্রচারণার দিকে আমরা আবারো সকলের নজর দিতে আহবান জানাচ্ছি:
সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য একটি গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থার পূর্বশর্ত। এই শর্ত পূরণে রাষ্ট্র, জনগণ, গণমাধ্যমসহ সকলকেই একযোগে কাজ করতে হবে। নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই, কোনো ধরণের জোড়াতালি দিয়েও এর কোনো চমক তৈরি করা যায় না। বিশেষত চারধারের পরিবেশ দূষণের ভেতর কোনোভাবেই সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব নয়। নিরাপদ খাদ্য সমাজের সকলের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ককে জাগ্রত করে এবং বিকশিত করে। আসুন আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সকলেই নিজেদের দায়িত্বশীলতাকে আরো প্রসারিত করি।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবসে আমাদের দাবি
১. নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে সকল ধরণের পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।
২. মাঠ থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সকল পর্যায়ে খাদ্যকে কীটনাশকসহ সকল প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত রাখতে হবে।
৩. দেশে নিষিদ্ধ কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে প্রশাসনকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রচারণা করতে হবে।
৫. নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৬. নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে যেয়ে কৃষিকে কোনোভাবেই কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত চুক্তিবদ্ধ চাষের আওতায় নেয়া যাবে না, কৃষিতে কৃষকের পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেই নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।
৭. নারী, আদিবাসী ও ভিন্ন ভিন্ন কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের কৃষকের লোকায়ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
৮. দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত খাদ্যের মান পরীক্ষা করে জনগণকে জানাতে হবে।
৯. ভেজালবিরোধী অভিযানকে শুধুমাত্র শহরের বিপণিবিতান নয়, একেবারে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদন নজরদারিতে আনতে হবে।
১০. বিদ্যালয় পর্যায় থেকে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ভেতর নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের সহজ পাঠ গুলো বিনিময় করতে হবে।
১১. খাদ্য উৎপাদের নামে রাসায়নিক ব্যবহার করে জমির মাটি ও পানি দূষিত না করবার জন্য সুস্পষ্ট ধারা কৃষিজমি সুরক্ষা আইনে যুক্ত করতে হবে।
১২. নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং ভোক্তা অধিকার আন্দোলনকে আরো জনবান্ধব এবং যুববান্ধব করে সক্রিয় করতে হবে।
১৩. হাইব্রিড ও জেনেটিক্যালি মডিফাইড শস্য নয়, দেশিয় শস্য বৈচিত্র্য সুরক্ষা করেই দেশের খাদ্যবৈচিত্র্যর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
১৪. দূর্যোগ ও জলবায়ুগত সংকট মোকাবেলায় দেশের অঞ্চল ও শস্যফসলের জাতের বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দিয়ে খাদ্যের বহুমাত্রিক আঞ্চলিক ব্যবহার বাড়াতে হবে।
১৫. এককভাবে মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে অন্যান্য প্রাণ ও প্রজাতির খাদ্য ও পরিবেশকে বিনষ্ট করা যাবে না। গবাদি প্রাণিসম্পদের খাদ্যকেও ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ করতে হবে।