বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান স্কুলসহ আমাদের খোঁজ খবর নেন
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
শুধু একটি চিন্তা, তার প্রতিফলন বদলে দেয় পুরো গ্রামের চিত্র। হরিরামপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় ঝিটকা হাট সংলগ্ন হাটবাসুদেবপুর গ্রামের অনাদিকাল থেকে রবিদাসদের বসবাস। শিক্ষা না থাকায় উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র ঝিটকা হাটের পাশে বসবাস করেও নিদারুণ কষ্টে চলে তাঁদের জীবন। শিক্ষার অভাবে রবিদাসের অনগ্রসরতা ও অসচেতনতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পিতামাতার শিক্ষা না থাকায় ছোট ছেলেমেয়েরাও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শিখতে পারছে না। ফলে শিশুরা স্কুলে ভর্তি হচ্ছে না। ফলে অন্য গ্রামের মানুষের চেয়ে শিক্ষা ও জীবনমান ব্যবধান থাকায়, দরিদ্র রবিদাস মানুষগুলো অন্যদের সাথে মিশে ও তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না। এই প্রসঙ্গে জগদিস রবিদাস (৭০) বলেন, “আমরা আমাদেরকে ছোট মনে করি। কারণ আমরা বিদ্যা অর্জন করতে পারিনি। যে নিজেকে ছোট মনে করে সে অন্যদের কাছে যেতে পারে না। অন্যদের কাছে যেতে না পারলে জানা যায় না, বুদ্ধি বাড়ে না, যার কারণে আমরা ছোট রয়েগেছি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের জীবনমান উন্নয়নে পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বড় হতে গেলে লেখাপড়ার দরকার। আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার মাধ্যমে আমরা সবার সাথে মিশব, আমরা বড় হব। আপনারা আমাদেরকে রাস্তা দেখিয়ে সহযোগিতা করবেন।”
রবিদাস সম্প্রদায়ের সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় হাটবাসুদেবপুর গ্রামের তরুণ যুবক স্বপন রবিদাস ও তপন রবিদাস। পিছিয়ে পড়া ছোট রবিদাস ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য তাঁরা শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র (শিশু শিক্ষা স্কুল) স্থাপন করে যেখানে শিশুরা প্রাথমিকভাবে লেখাপড়া করতে পারে। তাঁদের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বারসিক। শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে (প্রি-প্রাথমিক) স্কুল কার্যক্রম অনুষ্ঠানিকভাবে গত বছর ৮ নভেম্বর শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ২৫ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এলাকার সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘর তৈরি করেন। নির্মিত শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘরের জন্য গালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিক বিশ্বাস ৩০ ওয়ার্ডের একটি সোলার প্যালেন দেন। ফলে শিক্ষার্থীরা উক্ত স্কুলে সকলে মিলে সন্ধ্যায় লেখাপড়া ও ছোট ফ্যান চালাতে পারে। তাছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে রবিদাস স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য বই ও খাতা দিয়ে সহযোগিতা করে। যুবকরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শিশুদের পাঠদান করেন। এই প্রসঙ্গে শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিক্ষক আলো রাণী রুবিদাস (২৯) বলেন, “সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শিখাই। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সৃষ্টি ও স্কুলে নিয়মিত আসার জন্য আমার ভালোবাসা থাকে। এলাকার লোকজন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য খোঁজ-খবর নিয়ে সহযোগিতা করেন।”
শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সম্পর্কে নির্মল রবিদাস (৫০) বলেন, “আমরা বাজারে কাজ-কাম করে জীবন চালাই। আমাদের সন্তানেরা কষ্টে চলুক এইডা আমরা চাই না। এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার মাধ্যমে বড় হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হবে। আমাদের ভালো লাগে।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান স্কুলসহ আমাদের খোঁজ খবর নেন। উপজেলা যুব উন্নয়ন থেকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। আগে কেউ আসত না, এখন স্কুল হওয়ার পর থেকে সরকারি লোকজন আমাদের উন্নয়নে জন্য আসতেছে। আমাদের ছেলেরা বিভিন্ন অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করছে, এইডা আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”