বহুত্ববাদী সমাজ বির্নিমাণে রক্ষা করতে হবে সমাজের সকল পেশাকে
বরেন্দ্র অঞ্চলের তানোর থেকে অমৃত সরকার
একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সহ-অবস্থানে থাকাটা বাঞ্চনীয় বলেই মনে করা হয়। সমাজের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের প্রয়োজন অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে বসবাসকৃত সকল বর্ণের মানুষের জন্য সমাজ নিজের সুবিধা ও মঙ্গলের জন্যই সকল বর্র্ণের জন্য আলাদা পেশা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই জন্য কেউ আমরা হাজাম, কেউ আমরা নাপিত বা কেউ আমরা কামার। আবার সকল বর্ণের মানুষের পরিচয়ের জন্যই সমাজ কখন বলছে রবিদাস, সরেন বা সরকার। এগুলো সমাজের বর্ণ ও পেশা পরিচিতি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে অতীত থেকে আজ পর্যন্ত। অতীতে সামাজিক কোন অনুষ্ঠানে সকল বর্ণের মানুষের অংশগ্রহষ নিশ্চিত হতো বলেই তখন আমরা শুনতে পেতাম সমাজের এটা “সার্বজনীন”অনুষ্ঠান। সমাজের সকল বণের্র মানুষেরাই নিজেদের প্রয়োজনে সবার কাছে যেত ও আসত। তাই টিকে ছিল সমাজের সকল পেশাই।
একটি পেশার মানদন্ড যখন টাকা দ্বারা মূল্যায়ন হতে শুরু হলো সমস্যার শুরুও আসলে সেখান থেকেই। শুরু হলো কাজকে ছোট ও বড় করে দেখার প্রবণতা। সাথে সাথে দেখা দিলো সামাজিক মূল্যবোধের অভাব। আর এ কারণেই শুরু হলো বর্ণ বৈষম্যর। সবাই চায় চাকুরি বা ব্যবসা করতে। কেউ তাঁদের আদি পেশা ধরে রাখতে চাইছেন না। এমনকি নিজেদের বংশ পদবী বলার ক্ষেত্রেও দেখা যায় অনীহার প্রকাশ। আর এজন্যই দায়ী করা যায় বর্ণ বৈষম্যকে। কারণ বর্তমান সময়ে কম আয় হয় এমন পরিবারের সকল শিশু বেড়ে উঠার প্রতিটি ধাপেই কোন না কোন বৈষম্যর শিকার। আদিবাসী, রবিদাস বা ভূইফোঁড় জনগোষ্ঠীর কোন স্কুল পড়–য়াকে তার সহপাঠীরাই দেখে বাঁকা চোখে, তার বাবার পেশার কথা শুনলে মুচকি হাসে। এর প্রভাব গিয়ে পরে তার পড়ালেখা ও ভবিষ্যত পেশা নির্ধারণের ক্ষেত্রে। তাই আমাদের সমাজ থেকে আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে দাই, হাজাম, ফরোস, বৈদ্য, ভিস্তি, ধুনিয়া,কাপালীর মত অনেক আদি পেশা। পাশাপাশি নাপিতের মত কিছু পেশার আধুনিকীকরণের মাধ্যমেও সে সকল পেশার মানুষেরা হয়ে পড়েছে দিশেহারা।
গত ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বর্ণ বৈষম্য বিলোপ দিবস-২০১৮ উপলক্ষে রাজশাহীর তানোর উপজেলায় তালন্দ এ এম উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় বহুত্ববাদী সমাজ বিষয়ক চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন পেশার পরিচিতি ও আলোচনার। সেখানে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা “বহুত্ববাদ”সমাজ বিষয়ে নিজেদের মনের ভাবনাকে চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বর্তমানে পেশা হিসেবে তারা দেখছেন কৃষক, ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবীদের। বর্ণ সম্পর্কে তাদের ধারণাও অনেক কম। প্রতিটি বর্ণেরই যে আলাদা পেশা আছে আবার পেশার বিলুপ্তি হলে সমাজের কি ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে ধারণাও কম।
অনুষ্ঠানে আলোচনার মাধ্যমে বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা, সমাজের বর্ণ বৈষম্য বিলোপ নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি আমাদের অতীতের ৫৯টি পেশার মানুষের কাজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে নিয়মিতভাবে প্রতিটি স্কুলে বর্ণ বৈষম্য দূর, আদি পেশা রক্ষা এবং প্রতিটি পেশার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজন করা হবে “বর্র্ণ বৈষম্য দূর করি, প্রতিটি পেশা রক্ষা করি” স্কুল ক্যাম্পেইন। এই ক্যাম্পেইনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তালন্দ এ এম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষদের সহযোগিতায় একটি টিম গঠন করা হয়। তারা পর্যায়ক্রমে উপজেলার সকল স্কুলে গিয়ে সমাজের বর্ণ বৈষম্য দূর ও সকল পেশাকে রক্ষা করতে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করার ভূমিকা পালন করবে।