সাম্প্রতিক পোস্ট

বিলুপ্তির পথে অপরূপ কুসুম ফুল

মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক

একই গাছে সাদা, হলুদ, লাল ও খয়েরিসহ ৭টি রঙের ফুলের পাপড়ি। বাহারি এসব ফুলের পাপড়ি পাখির কচি পাখনার পালকের মত তুলতুলে। এমনই নজরকাড়া অপরূপ ফুলের নাম কুসুম। এ ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল প্রাকৃতিক ও উন্নত মানের ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহারে খ্যাতি আছে সারাবিশ্বে। এটি বাড়ি বা  পরিবেশের শোভাবর্ধণের জন্য বাগানের কোন ফুল নয়। এ হচ্ছে একটি তেলবীজ শস্য। গ্রামের ভাষায় এর নাম ফুলবিচি। কৃষি বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে বলা হয় কুসুম ফুল। একসময় মানিকগঞ্জ ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চাষ হতো কৃষি জমিতে। কদরও ছিল বেশ। চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ সংগ্রহ করা হত। তবে কালের আবর্তে এখন এই ফুলটি বিলুপ্তির পথে।
manikgonj (1)
কুসুম ফুলের কান্ড, পাতা ও কলিতে ছোট ছোট কাঁটা রয়েছে। ফুলে হলুদ ও লাল বর্ণের  অপরূপ রঙ আর মিষ্টি মৌ মৌ গন্ধ শুধু মানুষকেই আকৃষ্টই করে না উপকারী কীট পতঙ্গকেও আকৃষ্ট করে। এ শস্য ফুল গাছটি আড়াই থেকে সাড়ে ৩ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। এর কান্ড ও পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। ফুলের কলি সাধারণত সবুজ হয়ে উঠলেও ফুল ফোটার সাথে সাথে এর রঙ পাল্টে যায়। ফুলের পাপড়িগুলো হলুদ ও লাল বর্ণই চোখে পড়ে। ফুলের কাছে গেলে আরো রঙ চোখে ভেসে উঠে। জমিতে এ ফুল ফুটলে লাল হলুদের অপরূপ সৌন্দর্যের অবতারণা হয়। এ জন্য একসময় এটি জমির বেড়া হিসেবে জমিতে লাগানো হতো। আবার অনেক কৃষক পুরো জমিতে চাষ করে এর সাথী ফসল হিসেবে ওই জমিতে একই সাথে মুশুর ,ভুট্টা কালিমটর জাতীয় ডাল শস্য চাষ করা হতো। এর পাপড়ি শুকানোর পর তা থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রঙ খাদ্যে ব্যবহার হয় জাফরান হিসেবে। কুসুম ফুলের বীজ থেকে তেল উৎপাদনের পর এর যে খৈল অবশিষ্ট থাকে, তা গবাদিপশুর প্রোটিন জাতীয় খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
manikgonj (2)
বাংলাদেশ বিডিএমএ’র অতিরিক্ত মহাসচিব ডা. মো. আবুল হাসান বলেন, “কুসুম ফুলে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি-র‌্যাডিকেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এই বায়োফ্ল্যাভনয়েড হৃদরোগসহ অকালবার্ধক্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। শিশুর বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে কুসুম ফুলের তেল ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।”

কুসুমগাছ দুই ধরনের- একটি বেশ বড় এবং উঁচু, অন্যটি খুবই ছোট ও ঝোঁপালো ধরনের। পরিত্যক্ত মাঠ কিংবা ঘাসবনে আপনা আপনিই জন্ম নেয়া এই উদ্ভিদটির নৈর্সগিক সৌন্দর্য্যে বিমোহিত করে তোলে সবাইকে। উদ্ভিদটির সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে সময়ের করালগ্রাসে একসময় বিলুপ্তির তকমা লাগবে এর গায়ে।

happy wheels 2

Comments