গাজরের হাসিতে হাসছে মানিকগঞ্জের কৃষকরা
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক ॥
ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার খ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও সিংগাইরকে দেশ-বিদেশ ব্যাপ্তি পরিচিতি এনে দিয়েছে এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত একটি ফসল, যার নাম গাজর। কৃষি ও কৃষকের পরিমন্ডলে এই গাজর চাষই হয়ে উঠেছে অনুকরণীয় মডেল। এখানকার প্রায় প্রতিটি গ্রামকেই এখন “গাজর গ্রাম” হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই অঞ্চলে গাজর চাষ হচ্ছে। গাজর চাষ করে উপজেলার অধিকাংশ চাষি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ঢাকাসহ স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব গাজর এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছর মানিকগঞ্জের এসব গ্রামে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় উপজেলার বায়রা, জয়মন্টপ, খড়ারচর, লক্ষ্মীপুর, কাংশাচর, ভাকুম, দিয়ারা, দুর্গাপুর, আজিমপুর, দশানি, কিটিংচর, কমলনগর, কামুড়া, ভাটিরচর, ধল্লাসহ আরো বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত কৃষক গাজর চাষে সম্পৃক্ত রয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এবার গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। একদিকে বাম্পার ফলন অপরদিকে ভালো মূল্য পাওয়ায় গাজর চাষীদের মুখে প্রশান্তির বিস্তৃত হাসি। ঢাকা সহ দেশের সর্বত্রই মানিকগঞ্জের গাজরের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এ গাজর বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে নিয়মিত। মানিকগঞ্জের অন্যান্য উপজেলাতে গাজরের চাষ হলেও সিংগাইর উপজেলায় চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ, কিটিংচর, খড়ারচর, ভাকুম, দুর্গাপুর ও আজিমপুর সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শত শত কৃষক গাজর চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে গাজর চাষের দিকে ঝুঁকছে এই অঞ্চলের অন্যান্য কৃষকরা।
গাজর চাষী মো. মোবারক হোসেন বলেন, “এবার কুড়ি বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছি। হিমাগারের অভাবে প্রতিবছর মৌসুমে সস্তা দামে এইসব গাজর বিক্রি করতে বাধ্য হই। গাজর রাখার জন্য মানিকগঞ্জের সিংগাইরে একটি মাত্র হিমাগার। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমি ফতুল্লা, গেন্ডা, জিরানীসহ বিভিন্ন স্থানের হিমাগারে গাজর রেখে বিক্রি করেছি।” তিনি আরও বলেন, “অতদুরে গাজর নিতে পরিবহন খরচ বেশি হয়। মানিকগঞ্জে আরো হিমাগার নির্মাণ করা হলে এখানকার কৃষকরা লাভবান হতো। মাত্র ২ মাস গাজর সংরক্ষণ করা গেলেই প্রায় দ্বিগুণ দামে গাজর বিক্রি হয়।”
দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক গাজর চাষি জয়নাল আবেদিন জানান, এ বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে গাজরের আবাদ করেছেন। এতে তার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে খরচ ২৫-৩০ হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘা জমির গাজর বিক্রি করতে পেরেছেন ৪০-৫০ হাজার টাকায়। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় তাদের উত্পাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তিনি জানান, এ বছর এক কেজি গাজরের বীজ কিনতে হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকায়। অথচ আগের বছরগুলোতে গাজর বীজের দাম ছিল ৮-১০ হাজার টাকা।
সিংগাইর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বাদশাহ বলেন, “এর আগে সিংগাইরে হিমাগার না থাকায় গাজর সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। অনেকেই দূরবর্তী এলাকার হিমাগারে গাজর সংরক্ষণ করলেও খরচ পড়তো অনেক বেশি। এখন সিংগাইরে হিমাগার নির্মিত হওয়ায় গাজর একটু বেশি সময় নিয়ে বিক্রি করা যাবে। এতে প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হবেন।
মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, গাজর আবাদে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। গাজর গাছে যেন ছত্রাকের আক্রমণ না হয় সে ব্যাপারে তারা কৃষকদের সতর্ক করেছেন। কৃষকরা এবার ভালো ফলন পেয়েছে। মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই অঞ্চলে এবার ৪২ হাজার মেট্রিক টন গাজর উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া বলেন, “পরিবেশ অনুকুলে থাকায় এবার গাজরের ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া সময় মতো সার, বীজ ,কীটনাশক পাওয়ায় কৃষকদের কোন ভোগান্তি হয় নাই। এ জেলার গাজর সু স্বাধু হওয়ায় দেশব্যাপি এর চাহিদা বেশি। মানিকগঞ্জের গাজর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।”