রাজশাহীতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
রাজশাহী থেকে শামীউল আলীম শওন
দেশ-বিদেশের ৭৩টি চলচ্চিত্র নিয়ে শুক্রবার থেকে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে প্রথম রাজশাহী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সহযোগিতায় পাঁচ দিনব্যাপি এ চলচ্চিত্র উৎবের আয়োজন করেছে রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি। একযোগে রাজশাহীর লালন শাহ মুক্তমঞ্চ ও বড়কুঠি মুক্তমঞ্চ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি মিলনায়তন এই তিনটি ভেন্যুতে এ চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় নগরীর পদ্মাপাড়ের লালন মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। রাজশাহী চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি আহসান কবীর লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ভারতের ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক বিপ্লব কুমার ঘোষ, ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখর দাশ, ভারতের বহরমপুর ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সমীরণ বিশ্বাস, ঢাকার রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির চিফ কোঅর্ডিনেটর মিজানুর রহমান, রাজশাহী চলচ্চিত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জাবীদ অপু, চলচ্চিত্র উৎসব পরিচালক সুলতানুল ইসলামসহ সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তাগণ।
অন্যদিকে চলমান এ চলচ্চিত্র উৎসবের ভেন্যু হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উৎসবটির উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এসময় জার্মানির ডকুমেন্টরি নির্মাতা ফ্লোরিয়াল ওয়ালম্যান ও সিনেমেট্রোগ্রাফার লুকাস নিলসসহ বিভিন্ন ”লচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শম্পা দাস।
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা নোমান রবিন বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে জঙ্গিবাদ সমস্যায় ভূগছে। মানুষকে ঘরে ঘরে গিয়ে জঙ্গিবাদ দমনে সচেতন করা সম্ভব নয়। জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন তীর-ধনুকের অস্ত্র। রাজনীতি হল তীর, আর চলচ্চিত্র হল ধনুক। ধনুক ছাড়া তীর চালানো সম্ভব না। এখন সময় এসে গেছে, জঙ্গিবাদ দমনে এই তীর ও ধনুককে একত্র করতে হবে। এছাড়া জঙ্গিদের নির্মূল করা সম্ভব হবে না।” ভারতের বহরমপুর ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি সমীরণ বিশ্বাস বলেন, “ভারতের সিনেমা হলে আমরা দেখতে পাই প্রবীণরাই বেশি সিনেমা দেখতে যান। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এটা ভাঙার চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু বাংলাদেশে এসে ধারণা বদলে গেল। এখানে দেখছি তরুণরা সিনেমার প্রতি খুব আগ্রহী। তরুণরা বেশি সংখ্যায় সিনেমা দেখতে হলে যান। আপনারা তরুণদের সিনেমার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সার্থক হয়েছেন।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। পরে ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখর দাস পরিচালিত ‘নয়নচাঁপার দিনরাত্রি’ সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়। এদিকে গতকাল শনিবার নগরীর পাঠানপাড়াস্থ লালন শাহ মুক্ত মঞ্চে প্রদর্শিত হয় উত্তরবঙ্গে নির্মিত ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আর নগরীর বড়কুঠি মুক্তমঞ্চে প্রদর্শিত হয় মোট নয়টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে উত্তরবঙ্গে নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্র এবং বিভিন্ন দেশের ৬টি চলচ্চিত্র।
পাঠানপাড়াস্থ লালন শাহ মুক্ত মঞ্চে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- তাওকীর ইসলামের ‘আয়না’, আরিফুল ইসলাম আরিফের ‘মিতালীর যুদ্ধে যাওয়া’, মাধব চন্দ্র দাসের ‘জাত’, দেওয়ান রাব্বুর ‘জানা ইতিহাস অজানা গল্প’, নিলয় রাশেদের ‘অপেক্ষা’, সোহেল রাজের ‘স্টার্ট’। বড়কুঠি মুক্তমঞ্চে প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- আরিফ হোসেন হৃদয়ের ‘অভিনয়’, শাহারিয়ার চয়নের ‘ফানুস’, হাসনাত রাব্বির ‘অভাব’।
রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত এই উৎসব চলবে আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত। নগরীর লালন ও বড়কুঠি মুক্তমঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উৎসব চলবে।