শিক্ষার আলো ছড়াতে দলিতদের উদ্যোগ
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
“আমরা আর পিছিয়ে নাই, আধার থেকে আলোতে আসতে শিখেছি। আমি দেখেছি যে, হরিরামপুরের মনিঋষিরা উদ্যোগ নিয়ে “শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি” করে মনিঋষি ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতে। ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে। শিক্ষার মাধ্যমে লেখা পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। মনিঋষিদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতায় স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ও মনিঋষিগণ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করতে সহায়ক হয়। তাদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা। বাহিচরের মনিঋষিরাও নিজেদের উদ্যোগে “শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি” করতে পারবে। আমরা বাহির চরের মনিঋষি সম্প্রদায় এক হয়েছি, ছোটদের স্কুল তৈরি করতে আমরা সম্মত হয়েছি। আমাদের উদ্যোগে আমরা সফল হয়েছি।” উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন বাহিরচরের সুচন মনিঋষি (২৫)।
এলাকার তরুণদের উদ্যোগে বাহিরচর মনিঋষি পাড়ায় মনিঋষিদের জীবনমান উন্নয়নে “শিশু শিক্ষা কেন্দ্র (প্রি-প্রাথমিক)” তৈরিতে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। মত বিনিময়ের মাধ্যমে বাহিরচরের বাসিন্দা সুনিল মনিদাস বলেন, “মনিঋষি পরিবারের লোকজনের লেখাপড়া জানা না থাকায়, ছোট ছেলেমেয়েদেরকে লেখা পড়ার সমস্যা হয়। ছেলে-মেয়েরা অশিক্ষিত হয়ে বড় হয়। ফলে আমরা কৃষি কাজ, বাঁশ বেতের কাজ করে অতি কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। অনেক পরিবার আছে আর্থিক সংকটের কারণেও ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া করাইতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “তবে পরে হলেও আমার বুঝতে পেরেছি আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার দরকার। আমাদের শিক্ষা না থাকায় এলাকার মানুষ আমাদের দাম কম দেয়। ফলে আমরা সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে ছেলেমেয়েদের প্রাথমিকভাবে লেখাপড়ার শুরু করব।”
বাহিরচরের মনিঋষিরা প্রথমে খোলা আকাশের নিচে, আনন্দ মনিদাসের বাড়িতে এবং পরে সকলের সহযোগিতায় মন্দিরের নিকট ঘর করে এ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। গত পহেলা জুলাই ২০১৮ আনুষ্ঠানিকভাবে বাহিরচর মনিঋষি শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণপুর ইউপি সদস্য মাহাবুব রহমান, সমাজ সেবক শহীদ বিশ্বাস বারসিক’র বিমল রায় এবং সত্যরঞ্জন সাহা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, “মনিঋষিদের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ছোট ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে লেখাপড়ার সূচনাটা ভালো করতে হবে। শুরুটা ভালো হলে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে লেখাপড়া করে এগিয়ে যাবে।” বক্তারা আরও বলেন, “ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য পাশে থেকে উৎসাহ দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে অভিভাবকদের। শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কমিটির নিয়মিত স্কুলটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নতুন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।”
আলোচনায় স্কুলটি মন্দিরভিক্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্তকরণে রামকৃষ্ণপুর ইউপি সদস্য মাহাব আলী হরিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজের সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করা যাবে বলে আশ্বস দেন। বাহিরচর মনিঋষি শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র (প্রি-প্রাথমিক) শুরুর দিন বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টার উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ২৫ সেট শিশু শিক্ষা বই সংগ্রহ করে দেয়। বাহিরচর মনিঋষি শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিক্ষক সংগীতা মনিদাস স্বেচ্ছায় শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শিক্ষা কেন্দ্রে ২৫ জন শিক্ষার্থীদের নিয়মিত লেখাপড়ার মাধ্যমে মনিঋষদের শিক্ষার প্রসার ঘটবে বলে তারা মনে করেন।
এই প্রসঙ্গে আনন্দ মনিদাস (৬০) বলেন, “আমাদের কাছে ভালো লাগছে আমরা শিশু শিক্ষা কেন্দ্রটি শুরু করতে পেরেছি। আমাদের একটি টিনের ঘর আছে সেখানে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সকাল ৮.০০ থেকে ১০.০০ পর্যন্ত লেখাপড়া করবে।”